মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলিয়া ভাটের বিস্ময়কর উত্থান

আলিয়া ভাটের বিস্ময়কর উত্থান

বলিউড যাত্রাটা মোটে ১১ বছরের। এর মধ্যেই নিজেকে বলি রাজ্যের সেরা একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন আলিয়া ভাট। তারকা সন্তানের তকমা গায়ে লাগলেও নিজের পরিশ্রমেই এসেছেন এতটা দূর। আর তাঁর প্রমাণ মেলে আলিয়ার প্রতিটি ছবিতেই। অভিনয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যান, একটি ছবি থেকে আরেকটিতে। আলিয়ার এই বিস্ময়কর উত্থান নিয়ে লিখেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

১১ বছরের ক্যারিয়ারেই জাতীয় সম্মান

বলিউডে মাত্র ১১ বছরের ক্যারিয়ার অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের। সময়টা এক যুগকেও ছুঁতে পারেনি। এরই মধ্যে একের পর এক অভিনয় ক্যারিশমা দেখিয়ে পুরো দুনিয়ার সিনেপ্রমী এবং বলি বাসিন্দাদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাটের এই মেধাবী কন্যা। সম্প্রতি ঘোষিত ভারতের ৬৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর সম্মানটাও নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে অনায়াসে পুরে নিলেন নিজের অর্জনের ঝুলিতে। বলিপাড়ায় মাত্র ১১ বছরের ক্যারিয়ারে এমন সাফল্য আর কেউ পেয়েছেন বলে বলিউডবাসীর তেমনভাবে জানা নেই। এ যেন অভিনেত্রী আলিয়ার এক বিস্ময়কর উত্থান।

 

যে বার্তা দিলেন আলিয়া

স্বল্প সময়ের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে প্রমবারের মতো এই জাতীয় পুরস্কার পেয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত আলিয়া ভাট। ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়ারি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কারটি পেয়েছেন তিনি। আর সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছেন আলিয়া। ক্যাপশনে এই নায়িকা লিখেছেন, সঞ্জয় স্যার, ক্রু সদস্য, আমার পরিবার, আমার টিম এবং সর্বশেষ আমার দর্শকদের উদ্দেশে বলছি, এই পুরস্কারটি আপনাদের। কারণ, আপনারা ব্যতীত এটা কখনো সম্ভব হতো না। আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে চিরকৃতজ্ঞ আমি। এ ধরনের মুহূর্তগুলোকে আমি হালকাভাবে নিই না। যত দিন পারি আমি আপনাদের বিনোদন দিয়ে যাব।

 

যে চরিত্রের জন্য জাতীয় সম্মান

মুম্বাইয়ের কামতাপুর এলাকার যৌনকর্মী গাঙ্গুবাই একসময় হয়ে উঠেছিলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন। তাকে নিয়ে লেখক হুসেন জাইদি রচনা করেন ‘মাফিয়া কুইন্স অব মুম্বাই’ নামে একটি বই। এই বইয়ের একটি অংশ নিয়েই ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়ারি’ সিনেমা নির্মিত হয়। সিনেমাটি নির্মাণ করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বনশালী। ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়ারি’ সিনেমায় যৌনকর্মী গাঙ্গুবাঈয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন আলিয়া ভাট।

 

যেভাবে এই বিস্ময়কর উত্থান

আলিয়া ভাট এমন এক অভিনেত্রী যিনি খুম কম সময়ে নিজের ছাপ ফেলেছেন অভিনয় জগতে। অভিনয় জগতে তাঁর অল্প সময়ে সাফল্যের প্রধান কারণ হলো তিনি একজন ‘স্টার কিড’। যাঁর পরিবার বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। ছোট থেকেই এই পরিবেশে থাকার জন্য তিনি খুব কম বয়সে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন এবং সাফল্যও অর্জন করেন। ছয় বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি সিনেমায় অভিনয় করেন। বর্তমানে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। আলিয়া ভাট তাঁর অভিনয়দক্ষতার জন্য অত্যন্ত প্রশংসিত হন এবং অনেক পুরস্কারও জিতেছেন। আলিয়া ভাটের পিতা হলেন বলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাট। আরেক প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মুকেশ ভাট হচ্ছেন আলিয়ার চাচা। অভিনেত্রী পূজা ভাট হলেন আলিয়ার বড় বোন। অভিনেতা ইমরান হাশমি এবং পরিচালক মোহিত সুরি তাঁর পিতৃকুলের কাজিন। তাঁর স্বামী রণবীর কাপুর, যিনি বলিউডের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা।

 

ছোট বোনের সাফল্যে পূজার উচ্ছ্বাস

আলিয়া ভাট ১৯৯৯ সালে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউড সিনেমায় অভিনয় করেন। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর বাবার প্রোডাকশন ভান্তুরে  তৈরি ‘সংঘর্ষ’ সিনেমায় তিনি প্রীতি জিন্তার চরিত্রের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন।  আর ২০১২ সালে ১৯ বছর বয়সে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ সিনেমায় প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। এরপর বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন আলিয়া। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলো যেমন বক্স অফিসে সফল তেমনি নিজের মেধার ষোলো আনা প্রমাণ করেছেন তিনি।

২৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী বলিউডে এখন রীতিমতো জনপ্রিয়। তাঁর বড় বোন অভিনেত্রী পূজা ভাট জানিয়েছেন, আলিয়ার এ সফলতা বিস্ময়কর কিছু নয়। সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে পূজা ভাট বলেন, ‘আমাদের কাছে আলিয়া ভাটের সফলতা বিস্ময়কর কিছু নয়। কারণ আলিয়ার যখন চার বছর বয়স তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? জবাবে সে বলেছিল, আমি তারকা হতে চাই। সে সব সময় স্বচ্ছ ধারণা পোষণ করে। সব সময়ই সেরাটা করতে চায়। সে খুবই প্রতিশ্রুতিশীল।’

 

ফোর্বসের রিপোর্টে আলিয়ার সম্পদ

ফোর্বসের রিপোর্ট অনুসারে, আলিয়া ভাটের সম্পদ প্রায় ৫১৭ কোটি রুপি। বর্তমানে একেকটি ছবির জন্য ১৫ থেকে ১৮ কোটি রুপি নিয়ে থাকেন তিনি। এমতাবস্থায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ যে গগনচুম্বী হবে তা বলাই বাহুল্য। তবে অভিনয় ছাড়াও আলিয়ার আরও অনেক আয়ের উৎস আছে। যেখান থেকে অভিনেত্রী প্রচুর আয় করেন। এই অভিনেত্রীর একটি পোশাকের ব্র্যান্ড রয়েছে, যা সাত থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করে। আলিয়া এ ব্র্যান্ডটি চালু করেন গত বছর এবং যার বর্তমান মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। পোশাকের ব্র্যান্ড ছাড়াও আলিয়া ভাট ‘ইটারনাল সানশাইন প্রোডাকশন হাউস’ নামে একটি নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসও চালু করেছিলেন, যার ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে ‘ডার্লিংস’। এসব ছাড়াও আলিয়া ‘নায়কা’ ফ্যাশন ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে পুল ডটকমের মতো কোম্পানিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। এখান থেকে একটা মোটা অঙ্কের মুনাফা অর্জন করেন এ অভিনেত্রী। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রমোশন করার জন্যও মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক নেন আলিয়া।

 

আলিয়ার কিছুই যায় আসে না

এই সফলতায় আর উত্থানে কিছুই যায় আসে না আলিয়ার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন তিনি। বোম্বে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলিয়া ভাটকে প্রশ্ন করা হয়, ছবির সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর মতামত কী? আলিয়ার সোজা উত্তর, এ নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথাই নেই। ছবির সফলতা কিংবা ব্যর্থতা তাঁর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। আলিয়া বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজের ধারা। সেটে যাও, চরিত্র নিয়ে পড়ালেখা কর, চরিত্রটি ঠিকঠাকভাবে কর, পরিচালকের স্বপ্নটাকে বোঝ...। ছবি মুক্তির পর কী হবে এ নিয়ে কখনো মনোযোগী হওয়া ঠিক নয়। ছবি সফল হোক কিংবা ব্যর্থ, আমার মনে হয়, ছবিতে আমার কাজ সত্যিকারভাবে ঠিকঠাক করতে পারলাম কি না, এটা হলো বড় বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভালো অভিনয় করতে চাই। এর মধ্য দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেতে চাই। টুইটারে কেউ ‘আই লাভ ইউ’ বলল, এমন ভালোবাসায় আমি বিশ্বাসী নই।’

 

সফলতার শুরু

২০১৪ সালটা আলিয়ার কাছে এক অসাধারণ বছর ছিল। কারণ ওই বছরই তাঁর ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমতিয়াজ আলীর পরিচালনায় ‘হাইওয়ে’ সিনেমায় তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায় রণদ্বীপ হুডার সঙ্গে। সিনেমায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের নজর আকর্ষণ করে এবং ওই সিনেমার জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জেতেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে সফল ছিল।

 

যত অ্যাওয়ার্ডস

লায়ন্স অ্যাওয়ার্ড (২০১৩), বিগ স্টার এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস (২০১৪), স্টার প্লাস এন্টারটেইনার অব দ্য ইয়ার (২০১৪), স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫),  ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫), বিগ স্টার এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫), মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫), রয়্যাল স্ট্যাগ মেক ইট লার্জ অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫), ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড বিউটি অ্যাওয়ার্ড (২০১৫), স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস লাইফ (২০১৫), স্টার গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস (২০১৫), নিকেলোডিয়ন কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস (২০১৬), হিন্দুস্তান টাইমস মোস্ট স্টাইলিশ অ্যাওয়ার্ডস (২০১৬), ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড স্টাইল অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (২০১৬), স্টার প্লাস কি নায়ি সোচ অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়াডর্স (২০১৭), জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস (২০১৭), ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (২০১৭), মিন্ত্রা স্টাইল আইকন অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), হ্যালো! হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), বিগ জি এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড স্টাইল অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস (২০১৮), নিকেলোডিয়ন কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস (২০১৮), স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (২০১৮), নিকেলোডিয়ন কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), পাওয়ার ব্র্যান্ড বলিউড জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৯), স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড স্টাইল অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯), ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (২০২০), জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস (২০২০), ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০২০), ২১তম ইন্ডিয়ান টেলিভিশন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (২০২২), প্রিয়দর্শনী একাডেমি স্মিতা পাতিল মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (২০২২), দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড (২০২৩), জি সিনে অ্যাওয়াডস (২০২৩), বলিউডলাইফ.কম অ্যাওয়ার্ডস (২০২৩), ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০২৩), ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (২০২৩) এবং ৬৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

সর্বশেষ খবর