শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কথোপকথন

এ জীবনে আর কত হারাব

শোবিজ প্রতিবেদক

এ জীবনে আর কত হারাব

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচন্দা চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন অনেকদিন হলো। চলচ্চিত্র জগতের মন্দাবস্থা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্নও তিনি। এতে মন ভালো নেই এই অভিনেত্রীর। বর্তমানে সুচন্দার উদ্বেগ নিয়ে তাঁর বলা কথা তুলে ধরা হলো-

 

কেমন আছেন?

খুব যে ভালো আছি তা বলা যাবে না। কোনোরকমে দিন কেটে যাচ্ছে এই আর কী? ভালো আর মন্দের মাঝখানে কোনোভাবে বেঁচে আছি।

 

মন খুব ভালো নেই মনে হচ্ছে-

কীভাবে ভালো থাকব বলেন। সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্র জগৎ মুরব্বিশূন্য হয়ে পড়ছে। জহির রায়হান, রাজ্জাক, ফারুক, শর্মিলী আহমেদ, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল, সুভাষ দত্ত, খান আতা, কাজী জহির, কামাল আহমেদ, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, গাজী মাজহারুল আনোয়ারসহ বড় মাপের চলচ্চিত্রকাররা সবাই একে একে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। গত পরশু মারা  গেলেন খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক আফজাল ভাই। তাঁদের মতো কর্মদক্ষ ব্যক্তিত্ব এ দেশে আর জন্মাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আজ তাঁরা নেই বলে চলচ্চিত্রশিল্প প্রায় অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। এই ক্ষতি কোনো দিন কাটিয়ে ওঠা যাবে না।

 

চিত্রগ্রাহক আফজাল সাহেব তো আপনার খুব কাছের মানুষ ছিলেন-

হ্যাঁ, তিনি জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘সঙ্গম’সহ প্রায় সব ছবিতেই কাজ করেছেন। তাছাড়া আমার অভিনীত ‘নয়নতারা’, ‘মনের মতো বউ’ ছাড়াও প্রচুর ছবিতে একজন দক্ষ ও শৈল্পিক কারিগর হিসেবে কাজ করে এ দেশের চলচ্চিত্র ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তাঁর মতো এত উঁচু মাপের একজন সৃষ্টিশীল মানুষের চিরবিদায় কখনো মেনে নেওয়া যায় না। জানি প্রতিটি জন্মেরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমিও একদিন চলে যাব। কিন্তু সব বিদায় সব সময় মানা যায় না। এই তো কিছুদিন আগেও ৩০০ ফিটের ওখানে আমার মেয়ে লিসার জলসাঘর রিসোর্টে আফজাল ভাইসহ আমরা অনেকে গেট টুগেদারের আয়োজন করেছিলাম। কত গল্প, কত মজা। আজ সব স্মৃতি হয়ে গেল। পরশুদিন জহির রায়হানের ছোট ভাই ওবায়দুল্লাহ আমেরিকায় মারা গেছেন। এ জীবনে আর কত হারাব। মনটা তাই সব সময়ই খারাপ থাকে।

 

আাপনার স্বাস্থ্য এখন কেমন যাচ্ছে?

ওই যে বললাম ভালো-মন্দ মিলিয়েই চলছে। কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আল্লাহতায়ালার রহমতে এখন ভালো, করোনা টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।

 

সময় কাটছে কীভাবে?

নাতি-নাতনি আর সন্তানদের নিয়ে নানাভাবে সময়টা কোনোভাবে কেটে যাচ্ছে। নামাজ রোজা আর ঘরের টুকটাক কাজ করছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নিজের জীবন আর চলচ্চিত্রের অনেক অজানা কথা নিয়ে বই লিখে রেখে যাওয়া, সেই কাজটি এখন শেষের পথে। শিগগিরই সংবাদসম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে বইটি প্রকাশ করব। এতে জহির রায়হানের জীবনের অনেক অজানা দিকও স্থান পাচ্ছে।

 

চলচ্চিত্রে ফিরবেন কখন?

আর ফেরার সময় কোথায়?  চলচ্চিত্র জগতের অবস্থা এখন আর আগের মতো ভালো নেই। জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কয়েকবার সরকারি অনুদান চেয়ে পাইনি। এই দুঃখটাই আমৃত্যু আমাকে বহন করে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর