শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বলিউডের প্রথম সুপারস্টার সেই শ্রীদেবী...

বলিউডের প্রথম সুপারস্টার সেই শ্রীদেবী...

শ্রীদেবী, অভিনয় দিয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। যেখানে আগে কোনো বলিউড অভিনেত্রী পৌঁছতে পারেননি। তাঁর সময় সুপারস্টার নায়কদের ছড়াছড়ি থাকলেও, ছিল না কোনো নারী সুপারস্টার। যার কারণে শ্রীদেবীকেই বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার বিবেচনা করা হয়। এই নজরকাড়া চিরসুন্দরী অভিনেত্রীর আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

যেভাবে সুপারস্টার হয়ে উঠেছিলেন

১৯৭৮ সালে ‘সদমা’ ও  ‘সোলভা সাওয়ান’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল মায়াবী চোখ আর মিষ্টি হাসির নায়িকা শ্রীদেবীর। শুধু হিন্দি নয়, তামিল, তেলেগুসহ ভারতীয় নানা ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তরুণ থেকে বৃদ্ধের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম নারী সুপারস্টারে পরিণত হন তিনি। প্রায় পাঁচ দশকে অভিনয় করেছিলেন দেড়শ সিনেমায়। যার মধ্যে রয়েছে- বক্স অফিস কাঁপানো মিস্টার ইন্ডিয়া, চাঁদনি, চালবাজ, আখেরি রাস্তা, খুদা গাওয়া, তোফা, হিম্মতওয়ালি, ইনকিলাব, সদমাসহ জনপ্রিয় সব সিনেমা। তাঁর বিখ্যাত সিনেমা মিস্টার ইন্ডিয়া। বহুমাত্রিক এই অভিনেত্রী মাঝে একবার অভিনয় থেকে বিরতিও নিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে বনি কাপুর প্রযোজিত ‘জুদাই’ ছবিটি নির্মাণের সময় বিবাহিত বনির সঙ্গে বিয়ে। পুনরায় ফেরেন ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির মাধ্যমে। ২০১৩ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে ভারত সরকার। চিত্তাকর্ষক চোখ, মায়াবী হাসি, রুপালি পর্দায় তুখোড় অভিনয়দক্ষতা সহজেই শ্রীদেবীকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলেগু ও মালয়ালম ছবিতেও সমানতালে কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।

 

কেঁদেছিলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী

দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবি দিয়ে বলিউডে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী শ্রীদেবী। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি ফিল্ম ফেয়ার ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ছবিটি ভারতের মতো জাপানেও খুব প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর চোখে পানি চলে আসে ছবিটি দেখে।

রহস্যঘেরা মৃত্যু

শ্রীদেবীর মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরাই রয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলের গোসলখানায় শ্রীদেবীর নিথর দেহ পাওয়া যায়। বাথটাবে ভেসে উঠেছিল তাঁর মৃতদেহ। বনি কাপুরের ভাই দাবি করেছিলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বলিউডের প্রথম মহিলা সুপারস্টারের। ভাইপো মোহিত মারওয়ার বিয়েতে যোগ দিতে সপরিবারে দুবাইয়ে হাজির হয়েছিলেন শ্রীদেবী। বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলে মেয়ে খুশি কাপুর ও স্বামী বনি কাপুর মুম্বাই ফিরে আসেন। শ্রীদেবী থেকে যান তাঁর বোন শ্রীলতার সঙ্গে। স্বামী বনি চেয়েছিলেন স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে। সে মতোই মুম্বাই ফিরে এলেও আবার দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ইচ্ছা ছিল স্ত্রীকে নিয়ে খেতে বের হবেন। দুবাইয়ের সময় অনুযায়ী বিকাল সাড়ে ৫টার সময় শ্রীদেবীর হোটেলের ঘরে হাজির হন বনি। সেখানে ১৫ মিনিট কথা হয় তাঁদের। ডিনারের প্ল্যান জানানোর পর বেশ খুশিই ছিলেন শ্রীদেবী, পরবর্তীতে জানান বনি কাপুর। তিনি জানিয়েছিলেন এরপর নাকি  গোসলখানায় তৈরি হতে চলে যান শ্রীদেবী। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর গোসলখানার দরজায় ঠেলা দেন বনি। ডাকাডাকিও করেন। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসে না। এরপরই দরজা ভেঙে ঢোকেন বনি। গিয়ে যা দেখেন তা স্তব্ধ করে দেয় তামাম বিশ্বকে। বাথটাবে ভাসছে শ্রীদেবীর নিথর দেহ। তিনি সাড়া দিচ্ছেন না। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ খবর দেয় চিকিৎসককে। চিকিৎসক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শ্রীদেবীর মৃত্যু আজও রহস্যই রয়ে গেল। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে লেখা হয়েছিল জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুর সময় তাঁর দেহে মদের হদিসও মেলে। কিন্তু সত্যিই কি বাথটাবের এক ফুট জলে ডুবে কারও মৃত্যু সম্ভব? এ প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ কেরালা পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ঋষিরাজ সিংহ। উত্তর মেলেনি যথার্থ। শ্রীদেবী চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়ার কারণ নিয়ে আজও ভক্তমনে রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন।

 

অজানা শ্রীদেবী...

মাত্র চার বছর বয়সে অভিনয় জগতে পা রাখেন। সাল ১৯৬৭।  সদমা, চাঁদনিসহ আরও বেশ কিছু ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছিলেন। ‘চালবাজ’ ছবির ‘না জানে কাঁহা সে আয়ি হ্যায়’ গানটির শুটিংয়ের সময় তাঁর ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল। ১৩ বছর বয়সে ‘মনদ্রি মুদিচু’ ছবিতে শ্রীদেবী রজনীকান্তের সদমার ভূমিকায় অভিনয় করেন। স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আব্বাস মাস্তানের সুপারহিট ছবি ‘বাজিগর’ ছবিতে তাঁকেই প্রধান নায়িকা হিসেবে পছন্দ করা হয়েছিল। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে শ্রীদেবীর গোপনে বিয়ে হয়েছিল। যদিও সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। পরবর্তীতে তিনি পরিচালক-প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। ১৯৬৭ সাল। শ্রীদেবীর বয়স সবে চার। যে বয়সে একটা শিশু ঠিকমতো কথা বলাও শেখে না, সেই বয়স থেকেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, হিন্দি ও কন্নড় ভাষার ছবিতে। শ্রীদেবী অভিনীত প্রথম ছবি ছিল ‘এমএ’। শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৭৫ সালে ‘জুলি’ ছবিতে। পরের বছরই মাত্র ১৩ বছর বয়সে তামিল ছবি ‘মনদ্রি মুদিচু’ ছবিতে তিনি নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। নায়িকা শ্রীদেবীর বলিউডে অভিষেক হয় ১৯৭৮ সালে ‘সোলভা সাওয়ান’ ও ‘সদমা’ ছবির মাধ্যমে। দর্শকপ্রিয়তা পান ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হিম্মতওয়ালা’ ছবির মাধ্যমে। টানা অভিনয় করেছেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। নয়বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হন তিনি। অভিনয় দিয়ে নিজেকে তিনি তখন নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। যেখানে এর আগে কোনো বলিউড অভিনেত্রী পৌঁছতে পারেননি। তাঁর সময়ে সুপারস্টার নায়কদের ছড়াছড়ি থাকলেও, ছিলেন না কোনো নারী সুপারস্টার। যার কারণে ‘শ্রীদেবীকেই বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর ১৯৯৭ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর বিভিন্ন কারণে অভিনয় থেকে দূরে থাকেন নায়িকা। পরে ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির মাধ্যমে আবারও কামব্যাক করেন তিনি। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেন শ্রীদেবী। একই বছর ভারতীয় সিনেমার শত বছর পূর্তি দিবসে সিএনএন ও আইবিএনের বিচারে তিনি শতাব্দীর সেরা অভিনেত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তাঁর অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘মম’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সুপারস্টার শ্রীদেবীর জন্ম হয় ১৯৬৩ সালে তামিলনাড়ুতে।

সর্বশেষ খবর