শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারকা গড়ার কারিগর সেই সোহানুর রহমান সোহান

তারকা গড়ার কারিগর সেই সোহানুর রহমান সোহান

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র পেছনের কারিগর

সোহানুর রহমান সোহান ছিলেন দর্শকপ্রিয় ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার পেছনের কারিগর। ১৯৯৩ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল এবং মুক্তির পর সব থেকে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে সমাদৃত হয়। এটি ভারতের আমির-জুহির ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর পুনর্নির্মাণ। এই সিনেমার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। এ ছবির মাধ্যমেই সালমান শাহ-মৌসুমী জুটির আবির্ভাব হয়। এ ছবিতে আরও অভিষেক হয় কণ্ঠশিল্পী আগুনের।

 

যেভাবে সালমান শাহের সন্ধান পেলেন

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা তিনটি হিন্দি ছবি ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ ও ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’র কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোনো একটির বাংলা পুনর্নির্মাণ করার জন্য। তবে উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন নির্মাতা। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করেন। নায়ক হিসেবে তৌকীর আহমেদকে প্রস্তাব দিলে তিনি পুনর্নির্মাণ চলচ্চিত্র হওয়ার জন্য পরিচালকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে মডেল-অভিনেতা আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে তিনিও তা ফিরিয়ে দেন। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনূর আলমগীর ‘ইমন’ নামে একটি ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং ‘সনম বেওয়াফা’ ছবির জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু যখন ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি ওই ছবিতে অভিনয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তার কাছে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবি এতই প্রিয় ছিল যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালককে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাকে নিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়। আজ থেকে তিন দশক আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। নির্মাণের জাদুতেই সিনেমাটি দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। যার পেছনের কারিগর ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান।

 

একজন তারকা গড়ার কারিগর

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা মৌসুমীর পাশাপাশি পেয়েছিল আরেকটি নতুন মুখ সালমান শাহকে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করে মৌসুমী-সালমান জুটি। তার ছবি দিয়ে প্রথমবার প্লেব্যাক করেন কণ্ঠশিল্পী আগুন। ছবিটি মুক্তির পর রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যান এই তিনজনই। তার হাত ধরে নায়ক হয়েছিলেন এখনকার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও। ‘অনন্ত ভালবাসা’ (১৯৯৯) সিনেমা দিয়েই চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাকিব। এ ছাড়াও পপি, ইরিন জামানের অভিষেকও হয় তাঁর হাতে।

 

একজন সফল নির্মাতা

সোহানুর রহমান সোহান শিবলী সাদিকের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন সত্তর দশকের শেষের দিকে। পরে তিনি শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এ  জে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬) ও শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একক ও প্রধান পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘স্বজন’ (১৯৯৬), ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালবাসা’ (১৯৯৯) প্রভৃতি। তাঁর নির্মিত সিনেমার সংখ্যা ২৫টি। তাঁর নির্মিত বেশির ভাগ ছবি জনপ্রিয়তা ও ব্যবসাসফল হয়েছিল। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং অভিনয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।

 

চিকিৎসার জন্য জাপানে যাওয়া হলো না

চিকিৎসার জন্য আজ তাঁর জাপানে যাওয়া চূড়ান্ত ছিল, কিন্তু তিনি ৬৩ বছর বয়সে বুধবার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্ত্রীর মৃত্যুর শোকেই তিনি চলে গেছেন। ব্যক্তিজীবনে তাঁর তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর