সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেফ থেকে সুপারস্টার

শোবিজ ডেস্ক

শেফ থেকে সুপারস্টার

বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। তাঁর কর্মজীবনটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে শেফের কাজ করতেন অক্ষয়। একাগ্রতা, অধ্যবসায়, পরিশ্রম আর চেষ্টা পরবর্তীতে তাঁকে বিখ্যাত অভিনেতার তক্তে বসিয়ে দেয়। ২০১১ সাল। ঢাকায় তিন দেশের শিল্পীদের নিয়ে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। সেবারই ঢাকার ওই অনুষ্ঠানে প্রথম আসেন অক্ষয়। অক্ষয় তখন বেশ জনপ্রিয়। তিনি যখন মঞ্চে উঠলেন তখন হাততালিতে ফেটে পড়ল হল। মঞ্চে অক্ষয় বললেন, ‘এটা আমার প্রথম সফর নয়, ঢাকায় এর আগেও এসেছি’, তখন ফের হাততালি। অক্ষয় বলেন, ‘আমি অভিনেতা হিসেবে নয়, এর আগে এসেছি অন্য পরিচয়ে।’ হল স্তব্ধ। অক্ষয় বললেন, ‘এর আগে আমি ঢাকা এসেছিলাম, তখন আমি হোটেল পূর্বাণীতে শেফের কাজ করতাম।’ নেমে এলো হলজুড়ে নীরবতা। অক্ষয়ের কথায় তিনি ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে ছয় মাস কাজ করেছেন। এরপর ব্যাংককেও একই কাজ করেছেন। সেই অক্ষয় এখন সমগ্র ভারতের ‘আইকন’। বলিউডের শীর্ষ সারির নায়ক। ১৭৫টিরও অধিক ছবিতে অভিনয়কারী জনপ্রিয় বলিউড হিরো অক্ষয় কুমার কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কে তাঁর জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানান। ‘মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে ঘর থেকে বের হলে সাফল্য আসবেই। আমি সেভাবেই আজকের পর্যায়ে এসেছি এবং এ উপদেশই আমার ভক্তদের দিতে চাই’, বলেন অক্ষয় কুমার। বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার ২০১৩ সালে  নিউইয়র্কের সেই অনুষ্ঠানে বাঙালি প্রযোজক-পরিচালক প্রণব চক্রবর্তীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাঁর ‘দিদার’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমেই আমার চিত্রজগতে প্রবেশ। আমি তাঁর প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। অক্ষয় সবসময় বলেন, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় ট্যাক্সি ড্রাইভারের  প্রায় সবাই প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকায়। তাঁরা বিশ্বাস করতেই চান না যে, আমি অক্ষয় কুমার। বিষয়টি আমাকে বেশ মজা দেয়। প্রাণভরে উপলব্ধি করি।

পেছনের গল্প

একটি জাতীয় দৈনিক সূত্রে জানা যায়, হোটেল পূর্বাণীতে খেতে বসেছেন এক ক্রেতা, হেঁশেল থেকে গরমগরম লুচি আর তন্দুরি চিকেন পরিবেশন করে গেলেন বেয়ারা। মনভোলানো স্বাদের তন্দুরি চিকেনের সঙ্গে একের পর এক লুচি সাবাড় করতে করতে সেই ক্রেতা কৌতূহল থেকে বেয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবুর্চি কে? বেয়ারা বললেন, রাজীব হরি ওম ভাটিয়া; নতুন এসেছেন। ‘ওহ’ বলে লুচিতে মনোযোগ দিলেন। বহু বছর পর সেই ক্রেতা জানলেন, ওই লুচি আর তন্দুরি চিকেন বানিয়েছিলেন অক্ষয় কুমার। সেই রাজীব হরি ওম ভাটিয়াই আজকের বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার। ঢাকার পূর্বাণী হোটেল ছেড়ে পরে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হন তিনি। এই সময়ে বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতাদের একজন অক্ষয়। ২০০৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছে। ভারতের পাঞ্জাবে জন্ম নেন এ তারকা। অক্ষয় কুমার হয়ে ওঠার আগে আশির দশকে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসেছিলেন রাজীব হরি ওম ভাটিয়া। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অক্ষয় কুমার নিজেই বলেছেন, তিনি হোটেল পূর্বাণীতে প্রায় ছয় মাস কাজ করেছেন। প্রায় এক দশক আগে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হইচই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। হোটেল পূর্বাণীর ব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন জানিয়েছিলেন, অক্ষয় কুমার চার দশক আগে হোটেল পূর্বাণীতে এসেছিলেন। হোটেলে কিচেনে ছয় মাসের মতো কাজ করেছেন। তবে অক্ষয় কুমারের কোনো নথি তাঁদের কাছে সংরক্ষিত নেই বলে জানালেন মাহমুদ, ‘প্রতি পাঁচ বছর পরপর নথিগুলো স্থানান্তরের ফলে সেগুলো আর সংরক্ষণ করা যায়নি। অক্ষয় কুমার বিষয়টি জানানোর পর আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নথিগুলো পাইনি।’ মাহমুদ হোসেন জানান, হোটেল পূর্বাণী হোটেলের হেঁশেলে প্রধান বাবুর্চির তত্ত্বাবধানে বাবুর্চির কাজ করতেন তিনি। কেবল অক্ষয়ই নন, সেই সময়ে অনেক ভারতীয় হোটেল পূর্বাণীতে কাজ করতেন। তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই এসেছিলেন তিনি। তাঁর সমসাময়িকদের এখন কেউ আর হোটেলে নেই। শুধু ঢাকা নয়, কলকাতা, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন অক্ষয় কুমার। নব্বইয়ের দশকে সিনেমায় নাম লেখানোর পর ‘খিলাড়ি’ সিনেমা দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর