সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ড্রিম গার্লের যত জানা-অজানা

ড্রিম গার্লের যত জানা-অজানা

রূপের জাদুতে বিমোহিত দর্শক। তিনি বলিউডের ড্রিম গার্ল হেমা মালিনী। শুধু অভিনয় ক্যারিশমা নয়, ক্যামেরার পেছনে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েও নিজেকে সফল প্রমাণ করেন।  তারপর বড় পর্দা থেকে সোজা রাজনীতির আঙিনায়। সবখানেই তাঁর জয় জয়কার। আজ এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রকৃত ড্রিম গার্ল

‘ড্রিম গার্ল, ড্রিম গার্ল, কিসি সায়ের কি গজল ড্রিম গার্ল, কিসি ঝিলকা কমল ড্রিম গার্ল, কাহিতো মিলেগি, কাভিতো মিলেগি, আজ নেহিতো কাল...’ ১৯৭৭ সালে মুক্তি পায় হেমা মালিনী অভিনীত ‘ড্রিম গার্ল’ ছবিটি। এতে ‘ড্রিম গার্ল’ এর ভূমিকায় অভিনয় করেন নজরকাড়া সৌন্দর্যের রানি হেমা। এই ছবির নায়ক ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তিনি হেমাকে ভালোবেসে এই চমৎকার গানে লিপসিং করেন। হেমার মনকাড়া রূপের জাদুতে ছবিটি দর্শকদের মাত করে দেয়। প্রমাণ করে দেয় আসলেই তিনি বলিউডের ড্রিম গার্ল। তামিল ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বলিউডে ‘শোলে’, ‘সীতা ঔর গীতা’, ‘মিরা’, ‘কিনারা’, ‘সন্ন্যাসী’, ‘মেহবুবা’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘প্রেমনগর’, ‘খুশবু’, ‘বাগবান’ এর মতো ছবি দিয়েই প্রমাণ করেন তিনি ‘স্টার ম্যাটেরিয়াল’। অল্প সময়ে হয়ে ওঠেন ‘ড্রিম গার্ল’। সর্বমোট ১১ বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। ২০০০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মাননা লাভ করেন।

 

বারবার ব্যর্থ

দক্ষিণ ভারতীয় আয়েঙ্গার পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও হেমার মা ছিলেন বাঙালি। তাঁর নাম ছিল জয়া চক্রবর্তী। কয়েকটি ফিল্ম প্রযোজনা করলেও জয়া কোনো দিন সফল হননি। তাঁর মেয়ে হেমা শৈশব থেকেই ফিল্মে অভিনয় করতে চাইতেন। ফলে দশম শ্রেণিতে উঠে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। সময়টা ১৯৬৪ সাল। দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সেই সময় হিট নায়িকা জয়ললিতা। তখনো তিনি রাজনীতিতে আসেননি। এম জে আরের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে জয়ললিতার হাতে একের পর এক কাজ। সেই সময় নিউকামার হেমার দিকে কেউ নজর দিতে চাননি। বারবার রিজেকশনের পাশাপাশি তাঁকে শুনতে হয়েছে, তিনি স্টার ম্যাটিরিয়াল নন। কোনো দিন তাঁর পক্ষে নায়িকা হওয়া সম্ভব নয়।

 

সফলতার মুখ

একসময় হেমা মাকে নিয়ে বম্বেতে এলেন। হেমাকে বলিউড বিমুখ করেনি। ১৯৬৮ সালে রাজ কাপুরের বিপরীতে ‘স্বপ্নো কা সওদাগর’ ফিল্মে হেমা ডেবিউ করেন। তবে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত না হলেও বম্বের প্রযোজকরা তাঁর সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। কিন্তু হেমা বুঝতে পেরেছিলেন, শুধু রূপ দিয়ে বলিউডে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ফলে নিজের অভিনয় ও হিন্দি ভাষাকে ক্ষুরধার করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেব আনন্দের বিপরীতে হেমা অভিনীত ফিল্ম ‘জনি মেরা নাম’ ও ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ সুপারহিট হয়েছিল।

 

বড় সাফল্য

সত্তরের দশকের বিগ বাজেট ফিল্ম ‘ড্রিম গার্ল’ হেমাকে সুপরিচিত করে তুলেছিল। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ড্রিম গার্ল’। এই ফিল্মে ধর্মেন্দ্র হেমার বিপরীতে অভিনয় করলেও হেমাই ছিলেন মূল তুরুপের তাস। প্রমোদ চক্রবর্তীর পরিচালনায় তৈরি ‘ড্রিম গার্ল’-এর বাজেট তৎকালীন সময় কয়েক কোটি টাকা ছিল। ফিল্মে শুধু হেমার পোশাকের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল। তবে এখন অবধি সেই অর্থের পরিমাণ কত ছিল তা রহস্যাবৃত।

 

সর্বাধিক উপার্জনকারী

তখন বলিউডে পুরুষ শাসন চলছে। একের পর এক তারকার জয়জয়কার। এরই মধ্যে পাল্লা দিয়ে শীর্ষ ১০ উপার্জনকারী শিল্পীর তালিকায় চলে আসেন হেমা মালিনী। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বলিউডের চতুর্থ সর্বাধিক উপার্জনকারী শিল্পী ছিলেন তিনি।

 

নাচে পারদর্শী

অভিনয়ে সফল হলেও নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র। নাচই তাঁর প্রথম ভালোবাসা। নাচে পটু হেমা ভারতীয় সব ধরনের নাচে দক্ষ। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও জানা আছে। শিল্পকলার প্রতি দারুণ আকর্ষণ রয়েছে হেমার। নাট্যবিহার কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন হেমা।

 

ছোট্ট চরিত্র দিয়ে শুরু

১৯৬৫ সালে ‘পা ব বনবাসাম’ ছবির একটি ছোট্ট চরিত্রের মাধ্যমে প্রথম বলিউডে প্রবেশ। ১৯৬৮ সালে ‘স্বপ্ন কা সওদাগর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মূল চরিত্রে রুপালি পর্দায় অভিষিক্ত হন।

 

সৌন্দর্যের রহস্য

হেমার সৌন্দর্যের রহস্য জানার আগ্রহ অনেকেরই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সৌন্দর্যের একমাত্র রহস্য পানি। প্রচুর পানি পান করে ত্বকের পরিচর্যা করেন হেমা। হেমা মালিনী প্রতিদিন ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন দুই-তিন লিটার পানি পান করেন। এমনকি নিয়ম করে দুধও খান অভিনেত্রী। আর ত্বকের সঠিক পুষ্টি ও কোমলতা বজায় রাখার জন্য নিয়ম করে অ্যারোমা অয়েল ব্যবহার করেন। তবেই ত্বক একেবারে সতেজ ও তুলতুলে থাকে। এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করেন যা তার সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অভিনেত্রীর মতে সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে শুধু ত্বকের যত্ন নয়, মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। আর শরীর সুস্থ রাখতে প্রত্যেককেই নিজের প্রয়োজন মতো ডায়েট বা খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। হেমা মালিনী নিজেও খাওয়া-দাওয়া নিয়মমতো করেন আর সঙ্গে প্রতিদিন সকালে দই খান। দই স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে। আর এসবের সঙ্গে কিছু শরীরচর্চাও করেন অভিনেত্রী। তবে সবটাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করেন।

 

লেখাপড়ায় মন ছিল না

পর্দায় যথেষ্ট নামডাক এবং উপার্জনে এগিয়ে থাকলেও লেখাপড়ায় খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না। তার দৌড় দশম শ্রেণি পর্যন্ত। দশম শ্রেণি উঠেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন হেমা। ছোটবেলা থেকেই তিনি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, এটাই হয়তো কারণ।

 

মা-বাবার অমতে ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে

ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর প্রথমবার পর্দা ভাগাভাগি ১৯৭০ সালে, ‘তুম হাসিন ম্যায় জাওয়ান’ সিনেমায়। দুজনে একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রে প্রেম। হেমার পরিবার কিছুতেই মেনে নেবে না। ওই দিকে ধর্মেন্দ্রর সংসার আছে। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নসুন্দরীকে জিতে নেন ধর্মসিংহ দেওল, বিবাহিত তারকা ধর্মেন্দ্র। ১৯৭৯ সালে দুজনের চার হাত এক হলো। শোনা যায়, দুজনেই বিয়ের আগে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। কারণ, নায়ক হয়ে ওঠার আগে ১৯৫৪ সালে প্রকাশ কউরের সঙ্গে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল ধর্মেন্দ্রর।

সর্বশেষ খবর