বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডিসকো শিল্পী থেকে পপগায়িকা

ডিসকো শিল্পী থেকে পপগায়িকা

ম্যাটেরিয়াল গার্ল, পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা। সত্তর-আশির দশক পেরিয়ে তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজের প্রতিভা দিয়ে দুনিয়া শাসন করছেন। ইতিহাসে বেস্ট সেলিং নারী রেকর্ডিং সংগীতশিল্পী তিনি। যাঁর ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল একজন ডিসকো শিল্পী হওয়ার মাধ্যমে।  এই রূপের দেবীর আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

পাঁচ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সারে মায়ের মৃত্যু

মিশিগানের বে সিটিতে ১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট ম্যাডোনার জন্ম। বয়স যখন ৫ বছর তখন তাঁর মা স্তন ক্যান্সারে মারা যান। এরপর বাবা পুনরায় বিয়ে করেন। কিন্তু বড় মেয়ে হিসেবে পরিস্থিতির  মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে ম্যাডোনার।

 

নিউইয়র্কে আসার পরই ধর্ষণের শিকার

ম্যাডোনা ১৯৭৮ সালে মাত্র ৩৭ ডলার ও উচ্চাকাক্সক্ষার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে চলে যান। সেখানকার ইস্ট ভিলেজের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন, যেটি ছিল অপরাধ ও মাদক সমস্যায় ভরা একটি দরিদ্র এলাকা। এক নিবন্ধে ম্যাডোনা বলেন, নিউইয়র্কে আসার প্রথম বছরই তাঁকে ধারালো ছুরি ঠেকিয়ে জোর করে একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে ধর্ষণ করা হয়। এমনকি অনেকবার তাঁর ঘরে ডাকাতিও হয়।

 

নর্তকীর পেশা থেকে গায়িকা

গান দিয়ে নয়, তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল একজন স্বপ্নবাজ তরুণীর নর্তকী হওয়ার মাধ্যমে। সত্তরের শুরুতে সর্বপ্রথম নিউইয়র্কে পা রাখেন এই তরুণী একজন বিশ্ববিদ্যালয় ড্রপআউট হিসেবে। প্রথমদিকে তিনি মডেলিং ও কম বাজেটের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের সন্ধানে নেমে বেছে নেন নর্তকীর পেশা। কিন্তু এটা তাঁর লক্ষ্য ছিল না, তিনি এখানে এসেছিলেন আরও বড় কিছু হওয়ার জন্য। সেই তাড়নায় ম্যাডোনা সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে তাঁর একক পপ মিউজিকের অ্যালবাম বের করেন। এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ম্যাডোনা বুঝতে পারেন তিনি নিউইয়র্ক কাঁপাতে এসেছেন।

 

চাইতেন দুনিয়াকে শাসন করতে

ছোটবেলা থেকেই ম্যাডোনা চাইতেন দুনিয়াকে শাসন করবেন। যিনি নিজেকে উদ্ভাবন করা কখনো থামাননি। সত্যিই দুনিয়াকে তিনি নারী হিসেবে যেভাবে শাসন করেছেন, তা আর কেউ এখনো করে দেখাতে পারেননি। ম্যাডোনা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘একজন শিল্পী, একজন মিউজিশিয়ান, একজন ড্যান্সার, সর্বোপরি একজন মানুষ হিসেবে জীবনের দুর্দান্ত যাত্রাটি আমি বয়ে বেড়াতে চাই।’ ম্যাডোনার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। এরপর এখন পর্যন্ত তাঁর বিভিন্ন অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে ৩৫ কোটির বেশি। সাতবার তিনি গ্যামি জিতেছেন।

 

কেন তিনি পপসম্রাজ্ঞী

ক্যারিয়ারে প্রচুর হিট গান ও নিজস্ব গায়কির অনন্য পরিবেশনার জন্য বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন ম্যাডোনা। তাঁকে আমেরিকান পপ সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে একজন বলা হয়। তাঁর প্রভাব আমেরিকান পপ সংস্কৃতিতে প্রায় সব ক্ষেত্রে আজও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেখা যায়। তাই তাঁকে ‘পপসম্রাজ্ঞী’ বলা হয়।

 

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম

তিনি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ও সফল নারী সংগীতশিল্পী, যাঁর সংগীত রেকর্ড সারা বিশ্বে বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নামও লিখিয়েছেন। ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি স্টুডিও অ্যালবাম, পাঁচটি লাইভ অ্যালবাম, ছয়টি কম্পিলেশন অ্যালবাম, তিনটি সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবামসহ ৮৮টি একক গান প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও ১১টি বক্স অফিস হিট কনসার্ট ট্যুর করেছেন।

 

বয়স বাড়া যেন পাপ...

ম্যাডোনা ৬৫ বছরের ৪০ বছরই কাটিয়েছেন সংগীতজগতে। বয়স বাড়লে নারী শিল্পীরা আকর্ষণ হারান, এমন ধারণাকে ম্যাডোনা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে ম্যাডোনা নিজেই মানুষের এই ধারণাটি নিয়ে বলেছিলেন, ‘বয়স বাড়া যেন পাপ।’ ৬৫ বছর বয়সেও তিনি অগ্নিশিখা! নিরাবরণ ছবিতে বারবার ঝড় তুলেছেন আমেরিকার এই পপতারকা। চেহারা কিংবা জীবনযাত্রায় বয়সের প্রভাব যে না-ও পড়তে পারে তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন ম্যাডোনা।

 

২৫ বছরের যুবকের প্রেমে

ম্যাডোনা ২৫ বছরের যুককের সঙ্গে অসম প্রেমে জড়িয়েছেন। তাঁর প্রেমিকের নাম আহমালিক উইলিয়ামস। ২০২০ সালে লন্ডন এবং ফ্রান্সে নিজের শোগুলোতে প্রেমিকের বাবা-মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই গায়িকা।

 

অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযোজক

নিজেকে শুধু গানে আটকে রাখেননি ম্যাডোনা। প্রায় ২৪টি সিনেমায় অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। তিনি একজন ছবির পরিচালক ও প্রযোজকও। তবে বর্তমানে নিজের জীবনী নিয়ে ছবি তৈরির জন্য কাজ করছেন। এই মহাতারকা নিজের বায়োপিক নিজেই বানাবেন।

 

ম্যাডোনা ঝড় চলছেই

২০১০ থেকে ম্যাডোনাকে গুগলে খোঁজার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ম্যাডোনাই প্রথম নারী, যিনি ২০১২ সালে সুপার বোলে হেডলাইনার হিসেবে পারফর্ম করেন। সে সময়ই ইন্টারনেটে ম্যাডোনাকে খোঁজার ঝড় উঠেছিল।

 

চার্টে বেশি বার স্থান পাওয়া নারী

ইউকে চার্টের সেরা পাঁচে ম্যাডোনা সবচেয়ে বেশি বার স্থান পাওয়া নারী শিল্পী। ম্যাডোনার গাওয়া ৪৬টি সিঙ্গেল ইউকে চার্টের সেরা পাঁচে স্থান পায়। এক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে এগিয়ে মাত্র একজন, তিনি এলভিস প্রিসলি। এই সাফল্য ধারাবাহিকভাবে তিন তিনটি দশক ধরে পেয়েছেন।

 

অনন্য ফ্যাশনসেন্স

প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলেছেন। রাতারাতি তাঁর আউটফিট বিখ্যাত বনে যায় এবং ট্রেন্ড হিসেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমন ঘটনা একজন নতুন ম্যাডোনাকে জন্ম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর্টিস্টের পোশাক ব্যবহারে নতুন সংজ্ঞা নিয়ে আসেন তিনি।

 

একজন মানবিক ‘ফ্রোজেন’ গায়িকা

সমাজ পরিবর্তন, নারী শিক্ষা ও মানবিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে ‘রে অব লাইট ফাউন্ডেশন’-এর মতো দাতব্য সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছেন ম্যাডোনা। কিন্তু যৌনতা প্রসঙ্গে খোলামেলা থাকার কারণে বরাবরই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর