মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেমন আছেন সোফিয়া লরেন

যেমন আছেন সোফিয়া লরেন

জীবনযুদ্ধে জয়ী ইতালীয় অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন আবারও কঠিন অবস্থার মুখে পড়লেন। সম্প্রতি বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। ৮৯ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী এখন কেমন আছেন? অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বসেরা অভিনেত্রীর খেতাব অর্জন করা এই অভিনেত্রীর কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আহত এবং অস্ত্রোপচার

২০ সেপ্টেম্বর ছিল সোফিয়ার জন্মদিন।  জন্মদিন পালনের চার দিন পরই আসে দুঃসংবাদ। জেনেভায় বাড়ির বাথরুমে পা পিছলে গুরুতর আহত হয়েছেন ৮৯ বছর বয়সী অভিনেত্রী। পরে জানা যায়, তাঁর উরু ও পায়ের হাড় ভেঙেছে। তবে অভিনেত্রীর এজেন্ট আন্দ্রেয়া গিউস্টি দিলেন স্বস্তির খবর। সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, অভিনেত্রীর শরীরে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে।

 

আগের চেয়ে ভালো আছেন

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস জানিয়েছে, এক বিবৃতিতে লরেন বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার প্রতি সবাই যেভাবে সহানুভূতি ও ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আগের চেয়ে ভালো আছি, এখন আমাকে পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আর দীর্ঘ বিশ্রাম নিতে হবে।’ অভিনেত্রীর শারীরিক অবস্থার খবর জানিয়ে তাঁর এজেন্ট গিউস্টি আরও বলেন, ‘খুবই ভালোভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের এখন কেবল অপেক্ষা করতে হবে।’ তবে তাঁর পুরোপুরি সেরে উঠতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানা সম্ভব হয়নি।

 

জন্মের স্বীকৃতি মেলেনি

সোফিয়ার জন্মের আগে তাঁর মা রোমিলডা একজন পুরুষকে ভালোবাসতেন। সেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলনের ফলেই রোমিলডা গর্ভবতী হন। লোকটি তাঁকে বিয়ে করতে আপত্তি জানায়। ওই সন্তানের সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। দশের চোখে ছিল অবৈধ। সেই শিশুকন্যাই এক দিন বড় হয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী হলেন।

 

চরম দরিদ্রতায় বেড়ে ওঠা

১৯৩৪ সালে রোমের একটি হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া। মা রোমিলডাকে বিয়ে করতে আগেই অস্বীকার করেছিলেন বাবা রিকার্ডো। তাই ২০ সেপ্টেম্বর জন্মের কদিন পরই তাঁদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল ইতালির একটি বস্তিতে। তখন তাঁর নাম ছিল সোফিয়া সাইক্লোন। সে সময় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটে মা এবং মেয়ের। আর সেই অবস্থা অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। সোফিয়ার কথায়, ‘বেশির ভাগ সময়ই না খেয়ে কাটাতে হতো আমাদের। মা আর ছোট বোন মারিয়ার মুখে সব সময়ই থাকত বিষন্নতার ছায়া।’

 

অবশেষে সুদিনের দেখা

একসময় সুখের দিন ফেরে সোফিয়ার জীবনে। ১৯৪৮ সাল, সোফিয়ার তখন ১৪ বছর বয়স। সে সময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের তালিকায়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মজার বিষয়, ওই প্রতিযোগিতায়ই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে সেই পন্টিই বিয়ে করেন সোফিয়াকে।

 

মাকে নিয়ে ছবি নির্মাণ

সোফিয়া লরেনের মায়ের জীবন নিয়ে হলিউডে একটি ছবি তৈরি হয়। ‘রোমিলডা’ নামের ওই ছবিতে সোফিয়া মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন।

 

রানি এলিজাবেথ ডেকে পাঠান

অসংখ্য ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এ অভিনেত্রী। ‘ওম্যান অব দ্য রিভার’ ছবির মাধ্যমেই সোফিয়া লরেন ১৯৫৫ সালে ইতালির সেরা অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন। ‘আফ্রিকা আন্ডার দ্য সি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। রানি এলিজাবেথ এ ছবিটি দেখে এতই মুগ্ধ হলেন যে, তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ইতালীয় ছবি ‘লা সাইওসায়ারা’য় অভিনয় করে ১৯৬০ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ভেট্টোরিও ডি সিকা পরিচালিত ‘টু ওমেন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সোফিয়া লরেন। এ ছবির জন্য অস্কার ঝুলিতে ভরেন সোফিয়া। তাঁর অস্কার জয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১২ সালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দ্য একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। অনুষ্ঠানটি থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় এই বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীকে। ১৯৯৪ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর চলচ্চিত্র কর্মের জন্য তাঁকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১৯৮০ সালে এই অভিনেত্রীর জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। সোফিয়া লরেন সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ২০০৯ সালে ‘নাইন’ ছবিতে। অস্কার তো বটেই, জিতে নেন পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড।

 

হার ওন স্টোরি

১৯৮০ সালে সোফিয়ার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে   তৈরি হয় চলচ্চিত্র ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। এখানেই শেষ নয়, ১৯৯৪ সালে প্রায় ৬০ বছর বয়সে সোফিয়া অভিনয় জগতে ফিরে আসেন। ‘প্রিট-আ-পোর্টার’ নামের ছবিতে বক্স অফিস কাঁপিয়ে আবারও দশর্কদের মুগ্ধ করেন তিনি। এরপর বিচ্ছিন্ন কিছু ছবিতে অভিনয় করলেও মূলত বিরতিতে চলে যান সোফিয়া। ২০০৭ সালে স্বামী কার্লো পন্টিকে হারান এই অভিনেত্রী। তাঁর দুই ছেলে কার্লো পন্টি জুনিয়র ও অ্যাডৌরা পন্টি। আশির দশকের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দেন সোফিয়া। সময় কাটান স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর