শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
শাকিরা

রেস্টুরেন্ট ওয়েটার থেকে জনপ্রিয় পপতারকা

রেস্টুরেন্ট ওয়েটার থেকে জনপ্রিয় পপতারকা

দুনিয়া কাঁপানো জনপ্রিয় পপতারকা শাকিরা ইসাবেল মেবারাক রিপোল। কলম্বিয়ান এই গায়িকাকে সবাই শাকিরা নামেই চেনে। গুণী এই গায়িকা, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, দুর্দান্ত পারফরমার, রেকর্ড প্রযোজক এবং অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকে নিয়ে আজকের শোবিজ প্রতিবেদন

 

শৈশবে টানাপোড়েন

১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বারানকুলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন শাকিরা। শাকিরার জন্মটা মোটামুটি বিত্তশালী পরিবারেই হয়। জীবনের প্রথম দিকটা সুখে-শান্তিতেই কাটে তার। কিন্তু হঠাৎই অর্থবিত্তের জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। তখন শাকিরার বয়স সবে আট বছর। ব্যবসায় ধস নামলে শাকিরার বাবা অর্থাভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন আর মেয়েকে জোর করে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকতে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর শাকিরা নিজ শহরে ফিরে এসে দেখেন তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

 

ছয় বছর বয়সে কবিতা থেকে গান গাওয়া

শাকিরার বাবা গল্প আর কবিতা লিখতেন। বাবার লেখা কবিতা ও গল্প পড়ে মুগ্ধ হতেন শাকিরা। নিজেও থেমে থাকেননি। তার প্রথম লেখা কবিতার নাম দেন ‘লা রোসা দো ক্রিস্টাল। বাবাকে টাইপরাইটারে প্রায়ই গল্প লিখতে দেখে তার নিজের একটা টাইপরাইটারের খুব শখ জাগে। বড়দিনের উপহার হিসেবে তাই জামা-জুতোর বদলে একটি টাইপরাইটার চেয়ে বসেন ছোট্ট শাকিরা। অবশেষে সাত বছর বয়সে হাতে আসে স্বপ্নের উপহার, তখনই কবিতা আর গান লিখে হাত পাকানো শুরু। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আরবীয় সুর ও ঐতিহ্যবাহী এক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সুরটি ছোট্ট শাকিরার এত ভালো লাগে যে উচ্ছ্বসিত হয়ে টেবিলের ওপর উঠে নাচতে থাকেন তিনি। বাবাকে কালো চশমা পরে থাকতে দেখে আট বছর বয়সে শাকিরা ‘তোমার কালো চশমা’ নামে তার প্রথম গান লিখে ফেলেন। তারপর একে একে বেশ কিছু কবিতা লিখেন শাকিরা। পরে সেগুলো গান হিসেবে বিভিন্ন অ্যালবামে ব্যবহার করা হয়। সেদিনের সেই শাকিরা এখন জগদ্বিখ্যাত। তার সুরের মোহনীয় জাদু ও কোমর দুলানো নাচে পুরো বিশ্ব কুপোকাত।

 

রেস্টুরেন্ট ওয়েটার থেকে শিল্পী

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের আত্মবিশ্বাস অটুট রেখে সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন শাকিরা। গানের টানে শাকিরা নিজ শহর বারানকুলা থেকে চলে যান রাজধানী শহর বোগোটায়। সেখানে তিনি একা। শুরুতে নিজের খরচ চালানোর জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। বার, রেস্টুরেন্টসহ বেশ কিছু জায়গায় পার্টটাইম কাজ করেছেন। পাশাপাশি ঘরে, বন্ধুদের মধ্যে অব্যাহত রেখেছেন গানের চর্চা।

 

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার

শাকিরার প্রথম দুটি অ্যালবাম ফ্লপ করে। ১৯৯৫ সালে তার অ্যালবাম ‘পিয়েস ডেসকালোস’ খ্যাতি নিয়ে আসে কলম্বিয়ায়। এরপর ১৯৯৮ সালে আরেকটি অ্যালবাম তাকে জনপ্রিয় করে দক্ষিণ আমেরিকায়। এরপর ২০০১ সালে তার মিউজিক ভিডিও ‘হোয়েন এভার হোয়্যার এভার’ জনপ্রিয়তা পায় গোটা বিশ্বে। বিশেষ করে শাকিরা সবাইকে নাচের জাদু দেখিয়ে মাত করে দেন। এর পরের অ্যালবাম ‘লন্ড্রি সার্ভিস’। শাকিরা দুবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন, সাতবার ল্যাটিন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস এবং একবার গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। কলম্বিয়ায় অন্য কোনো গায়িকার গান এত বিক্রি হয়নি যতটা হয়েছে শাকিরার। সারা দক্ষিণ আমেরিকায় শাকিরা হলেন দ্বিতীয় গায়িকা যার ৫০ মিলিয়নেরও বেশি অ্যালবাম বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয়েছে। ২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষ দিন অর্থাৎ ফাইনাল খেলার দিন খেলা শুরুর ঠিক আগে শাকিরা ভিক্লিফ জনের সঙ্গে হিপ্স ডোন্ট লাই গানটি লাইভ পারফর্ম করেন। বিশ্বকাপ দর্শক কিছু সময়ের জন্য মাতোয়ারা হন শাকিরার নাচে-গানে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’র মাধ্যমেও পুরো বিশ্ব মাত করেন শাকিরা। তার গাওয়া ২০১০ বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’ ছিল ইউটিউবে সর্বাধিক শোনা গানের অন্যতম। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও এর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে শাকিরা ‘লা লা’ গান দিয়ে মাতালেন পুরো বিশ্বকে। ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই এখন শাকিরা। তিনি অনর্গল কথা বলতে পারেন ইংরেজি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং ইতালিয়ান ভাষায়।

 

পিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ

শাকিরার প্রথম প্রেমিকের নাম অ্যান্টোনিও। শাকিরা ও অ্যান্টোনিও দীর্ঘ ১১ বছর একসঙ্গে বাস করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেম টেকেনি। অ্যান্টোনিওর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্প্যানিশ ফুটবল তারকা জেরার্ড পিকেকে নতুন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন শাকিরা। যদিও জেরার্ড পিকে শাকিরার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। তাদের সংসারে ফুটফুটে একটি ছেলেসন্তান থাকলেও সম্প্রতি বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন এ দুই তারকা। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বিচ্ছেদ ঘোষণা দেন তারা। কারণ ফুটবল তারকার পরকীয়া।

 

নতুন প্রেমে মন মজাইয়া

পিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগেছেন শাকিরা। সাবেক প্রেমিকের ওপর রাগ মেটাতে গানের কথাতেই উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। তবে এবার, শাকিরার জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়। হলিউডের এক তাবড় তারকার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এখন এই লাতিন পপতারকা।

 

বাংলাদেশে শাকিরা

২০০৩ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাকিরা ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হন। এর আগে এত অল্প বয়সে কেউ এই সম্মান পাননি। ২০০৭ সালে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হয়ে শাকিরা যান বাংলাদেশে। তিনি বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কথা বলেন, সময় কাটান। বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে তিনি যান। সেখানে বাচ্চাদের লেখাপড়ার বিষয়ে ইউনিসেফের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন।

 

শাকিরার নামে খেলনা

নিজের নামে খেলনা বের করেছেন শাকিরা। শাকিরার বানানো ছয় রকমের খেলনার মধ্যে থাকছে সুরেলা বাউন্সার, বর্ণমালা ব্লক ও সুরেলা ফুটবল। এগুলো বিক্রি থেকে প্রাপ্ত পুরো লভ্যাংশ দেওয়া হবে ৩৭ বছর বয়সী এই তারকার বেয়ার ফুট ফাউন্ডেশনে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে ব্যয় করা হবে এসব অর্থ।

 

মানব দরদি

নিজের অ্যালবাম ‘পিয়েস ডেসক্যালজোস’র নামে ১৯৯৭ সালে শাকিরা তার ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন নিজ দেশে। সর্বজনীন শিক্ষার প্রচারই এর মূল উদ্দেশ্য। যার অর্থায়নে তিনি মানবসেবার কাজ করে থাকেন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি ৮টি বিদ্যালয় গড়েছেন।

সর্বশেষ খবর