রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেভাবে বলিউড কৌতুক অভিনেতা

যেভাবে বলিউড কৌতুক অভিনেতা

বলিউডের ছবিতে কৌতুক অভিনেতারাও রীতিমতো তারকা। তারা কে কীভাবে অভিনয়ে এলেন এমন কয়েকজন কৌতুক অভিনেতার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

হকার থেকে জনি ওয়াকার

মাতালের অভিনয় তিনি এতই ভালো করতেন যে হুইস্কির বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নামে রুপালি পর্দায় তার নাম হয় জনি ওয়াকার। অথচ তিনি কখনো মদ স্পর্শ করেননি। তার বাবা যে কারখানায় চাকরি করতেন সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অভাবে পড়ে পরিবারটি। তারা মহারাষ্ট্রে চলে আসেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে কাজে নামতে হয় তাকে। রাস্তায় রাস্তায় লজেন্স, ক্যান্ডি, কুলফি, সবজি ও নানা ধরনের জিনিস ফেরি করতেন। অভিনয়ের প্রতি দারুণ আগ্রহী ছিলেন। বস্তির শিশুদের অভিনয় দেখাতেন। একটু বড় হয়ে মুম্বাইয়ে বাসের হেলপার হন। পরে বাসের কনডাক্টর হন। এ সময় বাসযাত্রীদের অভিনয় দেখিয়ে আনন্দ দিতেন। এক সময় একজন সহকারী পরিচালক তাকে ‘হালচাল’ ছবিতে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে পার্ট দেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বলরাজ সাহানি তাকে নিয়ে যান পরিচালক গুরু দত্তের কাছে। মাতালের ভূমিকায় তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গুরুদত্ত তার নতুন নাম দেন জনি ওয়াকার। ১৯৫১ সালে মুক্তি পায় গুরুদত্তের নতুন ছবি ‘বাজি’। এ ছবিতে অভিষেক ঘটে জনির। অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তার নামে টিকিট বিক্রি বেশি হতো। তিনি ছবিতে গান গেয়েও তুমুল জনপ্রিয়তা পান। জনি ওয়াকার ৩০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘চাচি ৪২০’ মুক্তি পায়। ‘মধুমতি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৫৮ সালে পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ‘শিকার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার আসরে কমেডি চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।

 

জওহরলাল নেহরুকে মুগ্ধ করেন জগদীপ

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি। মঞ্চের নাম জগদীপ, ৪০০রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। জগদীপ শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়জীবন শুরু করেন, বিআর চোপড়ার ‘গুলি আফসানা’ তারপর ‘আব দিল্লি দূর নেহি’র মতো চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কে এ আব্বাসের ‘মুন্না’, গুরুদত্তের ‘আর পার’ থেকে, বিমল রায়ের ‘দো বিঘা জমিন’ এবং এভিএমের ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’ ছবিতে অভিনয় করেন। ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’র পরে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান। পন্ডিত জওহরলাল নেহরু ‘হাম পাঞ্চি এক ডাল কে’-তে তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য জগদীপের কাছে ব্যক্তিগত কর্মীর মাধ্যমে উপহার পাঠান। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গলি গলি শোর হ্যায়’ ছিল তার শেষ অভিনীত ছবি।

 

শোলে ছবির সেই জেলার আসরানি

রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’ ছবির সেই বিখ্যাত চরিত্র ‘জেলার’। যার মুখে একটি সংলাপ ‘ফলো মি...হা...হা...’ এখনো দর্শককে হাসায়। এ চরিত্রটি রূপায়ণ করে যিনি বিখ্যাত কমেডিয়ান বনে যান তিনি হলেন আসরানি। বন্ধুদের অনুরোধে অভিনয়ে এসে তিনি শুধু অভিনেতা হিসেবেই সফল হননি। প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, গায়ক সংগীত পরিচালক রূপেও পেয়েছেন সাফল্য। শুধু হিন্দি নয়, গুজরাটি, পাঞ্জাবি ও ইংরেজি ছবির জন্যও পান্ডুলিপি লেখেন তিনি। প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন আসরানি।

 

মীনা কুমারীকে টেবিল টেনিস শেখান মেহমুদ

মেহমুদ। এ অভিনেতা গায়ক, পরিচালক এবং প্রযোজক ছিলেন। তিনি হিন্দি ছবিতে কমিক চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। চার দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে তিনি তিন শতাধিক হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন। মেহমুদ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য পঁচিশবার মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে কমেডি ভূমিকায় সেরা পারফরম্যান্সের জন্য উনিশবার মনোনয়ন পান। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি কিসমত চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন। পরে তিনি বেশ কয়েকটি অদ্ভুত পেশায় কাজ করেন। যেমন হাঁস-মুরগির পণ্যড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেন। মেহমুদ অভিনেত্রী মীনা কুমারীকে টেবিল টেনিস শিখিয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে অভিনেত্রী মীনা কুমারীর ছোট বোন মধুকে বিয়ে করেন।

 

ঈশ্বরের ইচ্ছায় অভিনয় ছাড়েন জনি লিভার

জনি লিভার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান পুরস্কারের জন্য তেরবার মনোনীত হন এবং দিওয়ানা মাস্তানা (১৯৯৭) ও দুলহে রাজা (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন এবং এ যাবৎ এক শর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জনি লিভার একজন খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। একসময় তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন। জনির কথায়- এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল। একটি ঘটনা আমার জীবনকে বদলে দেয়। আমার ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। আমি অসহায় হয়ে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলাম। আমি চলচ্চিত্রে কাজ বন্ধ করে দেই এবং তার জন্য প্রার্থনা করে আমার পুরো সময় ব্যয় করি। ১০ দিন পরে যখন তাকে একটি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় তখন ক্যান্সার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা অবাক হয়েছিলেন। এটা আমার নতুন জীবনের শুরু ছিল।

 

দিলীপ কুমারের আমন্ত্রণে অভিনয়ে কাদের খান

কাদের খান। ১৯৭০ সালে তিনি কলেজ অব ইঞ্জেনিয়ারিংয়ে পুরকৌশলের শিক্ষক ছিলেন। তখন কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করে। বলিউড মোগল দিলীপ কুমার এ অভিনয় সম্পর্কে জানতে পেরে তাকে অভিনয়ে আমন্ত্রণ জানান। ৪৫০টিরও বেশি হিন্দি এবং উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ২৫০টিরও বেশি সিনেমার সংলাপ লিখেছেন। মনমোহন দেশাই ১৯৭৪ সালে ‘রুটি’ সিনেমার সংলাপ লেখার জন্য ১ লাখ ২১ হাজার রুপি পরিশোধ করেন। তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান।

সর্বশেষ খবর