সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুফিয়া আলোচনায় বাঁধন...

খুফিয়া আলোচনায় বাঁধন...

দুই বাংলার সিনেমা দুনিয়ার অন্যতম চমক আজমেরী হক বাঁধন। এই তুলনাহীনা তাঁর সৌন্দর্যে ও অভিনয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিহাস সৃষ্টির পর এই ঢাকাই অভিনেত্রী বলিউডের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন ‘খুফিয়া’ বন্দনায়। এই ওয়েব ফিল্মটিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শককে সম্মোহনী শক্তিতে পর্দায় ধরে রেখেছে।  এই অনন্যাকে নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল

গত বৃহস্পতিবার ওটিটি প্ল্যাটফরম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বিশাল ভরদ্বাজ নির্মিত ‘খুফিয়া’। যার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হলো বাংলাদেশের মেধাবী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের। মুক্তির পর থেকে ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছেন বাঁধন। সিনেমাটি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছেন দুই বাংলার দর্শকসহ অনেক নামকরা নির্মাতা ও তারকা অভিনয়শিল্পী। এর আগে ওপার বাংলায় সৃজিত মুখার্জির ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে আসেননি’ ওয়েব সিরিজে ‘মুশকান জুবেরি’ চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকের মুগ্ধতা কেড়েছিলেন এই অভিনেত্রী। এতে অনির্বাণ, অঞ্জন দত্ত, রাহুল বোসের মতো গুণী শিল্পীদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে অভিনয় করতে দেখা গেছে তাঁকে। যেখানে তাঁর চরিত্র প্রাধান্য পাবে সেটিই সর্বদা করার চেষ্টা করে গেছেন বাঁধন। সেই সার্থকতাও রেখেছিলেন সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ। ফলশ্রুতিতে বিশ্বের সেরা আসর কান উৎসবে নিজের দিকে দর্শক নজরও কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রদর্শনী শেষে দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান বাঁধন-সাদসহ সবাইকে। ভূমধ্যসাগরের তীরে কান সৈকতে বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়। এই সময়ে সিনেমা আছে, কিন্তু আস্থা ও অর্জন নেই। তবে কিছু তারকা ও তাঁদের অভিনীত সিনেমা ফিকে হয়ে যাওয়া সেই স্বর্ণালি যুগের প্রত্যাবর্তনের বাতাবরণ দিয়ে যাচ্ছে। সব অর্জনই একেকটি ইতিহাস, বাঁধনের অর্জনটিও যেন অন্যরকম ইতিহাস।

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে এখন বাঁধন মর্ত্যে এসে সাফল্যের পালক মেলে উড়ে বেড়াচ্ছেন। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয়ে দর্শকের মুগ্ধতা কাড়ছেন সিনেমাসহ নানারকম ওয়েব কনটেন্টে অভিনয়ের বদৌলতে। তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন তিনি। খুফিয়ায় তাঁর অভিনয় নিয়ে দর্শক রেসপন্স দেখে ভীষণ খুশি বাঁধন। তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো রেসপন্স পাচ্ছি দর্শকদের। সবাই দেখছে, আমার চরিত্রটি নিয়ে আলোচনা করছে। ছবিতে আমার উপস্থিতি হয়তো বেশি সময়ের নয় কিন্তু এই কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এটা অভিনেত্রী হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও আমাকে ঋদ্ধ করেছে। এই মুুহূর্তে ট্রেন্ডিং-১ এ রয়েছে খুফিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছি। এই অল্প সময়ে দুই বাংলার এত মানুষের ফোন, এসএমএস, ফেসবুকে লেখালেখি দেখছি, তাতে সত্যিই অবাক হয়েছি। ইন্ডিয়ান গণমাধ্যমগুলো এই ছবিতে আমার অভিনয় নিয়ে ভালো ভালো লিখেছে। ভালোই লাগছে। এর আগে যখন ট্রিজার, ট্রেইলার রিলিজ হয় একই রকমভাবে সাড়া পেয়েছিলাম।’ যদিও এই ওয়েব ফিল্মে বাঁধনের উপস্থিতি খুব বেশি নয়, তবুও এই অভিনেত্রীর অভিনয় আর সপ্রতিভ উপস্থিতি দিয়ে দর্শককে মাত করেছেন বলা যায়। ছবিতে বাঁধনের অভিনয় ও টাবুর সঙ্গে তাঁর রসায়নের প্রশংসা করেছেন অনুপমা চোপড়াসহ ভারতের অনেক সমালোচক। টাবুর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাঁধন বলেন, ‘এত বড় একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি, সেটা পর্দায় কেমন লাগবে, তা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু মানুষ আমাদের রসায়ন এতটা পছন্দ করেছে যে, আমি মুগ্ধ। মুক্তির দিন খুদে বার্তা পাঠিয়ে শুভকামনা জানিয়ে টাবু লিখেছেন, ‘ছবিতে তুমি এত দুর্দান্ত করেছ, মানুষ তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে।’ নির্মাতা বিশালও আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘অক্টোপাস চরিত্রে তুমি এত ভালো করেছ, চিন্তার কিছু নেই। আসলে কোনো চরিত্র যদি আমাকে রোমাঞ্চিত করে, তাহলে অন্যকিছু না ভেবে সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এখন মুক্তির পর যখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক মাধ্যম আমার অভিনয় নিয়ে লিখছে সেটা আমার মধ্যে একরকম ভালো লাগা তৈরি করছে।’ এদিকে বিভিন্নজনের মতো সিনেমাটি দেখে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। বাঁধনের অভিনয়ের প্রশংসা করে ‘চোখের সামনে নটী হয়ে উঠলেন তিনি’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বন্যা মির্জা। বন্যা মির্জা বলেন, ‘আজমেরী হক বাঁধন তুমি করে দেখালে। আর আমরা দেখলাম যে, কীভাবে একজন নটীর জন্ম হয়! বাঁধন কানে গেছেন। দারুণ অভিনয় করেছেন। তবু আমি বাঁধনকেই দেখেছি। আমি হিন্দি সিনেমার ফ্যান নয়। বাঁধনের জন্যই দেখেছি। কিন্তু কোথাও আমি তাঁকে দেখিনি! হিনাকে দেখলাম। হিনার জীবন দেখলাম। ডায়ালগ, গেসচার, এক্সপ্রেশন সবমিলিয়ে অনবদ্য। একজন অভিনেতার জীবনে এটুকুই সত্য যে, সে হয়ে ওঠে অন্য আরেকজন!’

পূর্বে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’, ‘গুটি’ থেকে ‘খুফিয়া’- সবকটিতেই তিনি স্বাধীনচেতা ও সাহসী নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যেখানে রেহানা, মুশকান জুবেরি, সুলতানা কিংবা অক্টোপাস চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য। বাঁধনকে নিয়ে যারা লিখেছেন, তাদের বেশির ভাগেরই কথা, বাঁধন তাঁর পরিশ্রম ও ধৈর্যের মর্যাদা পেয়েছেন। বাঁধনের অর্জন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভালো কাজের জন্য সততা ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কাজের মতো কাজ হলে অর্জন এক দিন আসবেই। শুধু অর্জনের জন্য নয়, শিল্পের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই অভিনয় ক্যারিয়ারে যুক্ত হবে সম্মান। তার প্রমাণ বাঁধনের যত অর্জন। যতই দিন যাচ্ছে, অভিনেত্রী বাঁধনের পর্দায় সৌন্দর্যের জৌলুস তত বেড়েই চলছে। আর সঙ্গে নিত্যনতুন সাফল্যের পালক যুক্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর