শাহরুখের কিলার লুক, অ্যাকশন দৃশ্য এবং আবেগে ‘জওয়ান’র পর্দায় যেন আগুন ধরিয়েছে রীতিমতো। তবে ছবির গল্পে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা শুধু দর্শক নয়, একজন দেশপ্রেমিক নাগরিককেও মুগ্ধ করেছে। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, গোরক্ষপুর হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা থেকে শুরু করে ‘জওয়ান’কে ছুঁয়ে গেছে ‘স্বদেশ’, ‘কিল বিল’, ‘শোলে’র মতো ছবি। বলছে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকপ্রিয় প্রাচীন পত্রিকা আনন্দবাজার। ছবিটি দেখতে গিয়ে সেই সত্যতা শতভাগ খুঁজে পাওয়া গেল। শাহরুখের মুভি প্রযোজনা সংস্থা ‘রেড চিলিস’-এর ব্যানারে এ ছবিটি নির্মাণ করে আড়ালে-আবডালে একটি দেশের সিস্টেম লসকেই খোঁচা দিয়ে ফেললেন শাহরুখ খান? আজাদ না কি বিক্রম রাঠৌর ‘জওয়ান’-এ তার পরিচয় আসলে কী? চার বছরের বিরতি নিয়ে আবার বড় পর্দায় ফিরলেন শাহরুখ। ছবির অন্তিম পর্বে দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তাও দিলেন তিনি। বোঝালেন ‘আঙুলের’ ক্ষমতার আড়ালে তার ব্যর্থতাও। সরকার নির্বাচনের সময় কী কী প্রশ্নচিহ্ন তোলা প্রয়োজন, তা চোখে চোখ রেখে বললেন। ‘জওয়ান’-এ নিজের ছবিরই ছাপ ফেলেছেন শাহরুখ। ২০০৪ সালে আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘স্বদেশ’। শাহরুখ অভিনীত এ ছবি প্রশংসাও কুড়িয়েছিল। ‘স্বদেশ’ ছবির ছাপই ধরা পড়েছে ‘জওয়ান’-এ। ‘স্বদেশ’ ছবিতে শাহরুখের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কিশোরী বল্লাল। তার চরিত্রের নাম ছিল কাবেরী আম্মা। যদিও ছবিতে শাহরুখের গর্ভধারিণী মা ছিল না সে। ‘জওয়ান’ ছবিতেও কাবেরী আম্মা নামের একটি চরিত্র রয়েছে। ‘স্বদেশ’-এর মতোই ‘জওয়ান’-এ কাবেরীর চরিত্র একই সুতোয় বোনা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুবন্দোবস্তের অভাবে মরণ রোগ এনসেফালাইটিসে মৃত্যু হলো ৬০ শিশুর। ‘জওয়ান’-এর এই দৃশ্য দর্শকের মনে ভয় ধরাতে বাধ্য। তবে এর সঙ্গে মিল রয়েছে বাস্তব ঘটনারও। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরের হাসপাতালেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিয়েছিল। কাফিল খান নামে সেখানকার এক চিকিৎসক নিজের খরচে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত ৬৩ শিশু। কাফিলের দাবি, হাসপাতালের পরিস্থিতি উচ্চ আধিকারিকদের জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং শিশুদের মৃত্যুর পর মিথ্যা অভিযোগে কাফিলকে জেলে পাঠানো হয়। ২০২১ সালে এ ঘটনা নিয়ে একটি বইও লেখেন তিনি। ‘জওয়ান’ মুক্তির পর ছবি নির্মাতাসহ শাহরুখকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাফিল। কাফিল বলেন, ‘বড় পর্দায় আসল অপরাধী সাজা পেয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন। আমার সঙ্গে আরও ৮১টি পরিবার আজও ন্যায়ের পথ চেয়ে বসে রয়েছে।’ বাস্তবের কাফিলই কি শাহরুখের ছবিতে ইরাম হয়ে উঠল? মুফাসা এবং তার পুত্র সিম্বা। বাবা-ছেলের সম্পর্কের পাশাপাশি বন্ধুত্বের-ভরসার সম্পর্ক তাদের। ‘দ্য লায়ন কিং’ ছবিতে মুফাসা-সিম্বা জুটি দর্শকের মন কাড়ে। ‘জওয়ান’ ছবিতেও টেনে আনা হয়েছে মুফাসা-সিম্বার কথা। আজাদকে তুলনা করা হয়েছে সিম্বার সঙ্গে। বিক্রম রাঠৌর অর্থাৎ আজাদের বাবার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মুফাসার নাম। ‘জওয়ান’-এর দুটি চরিত্রেই শাহরুখ যেন সিংহ। মুফাসা-সিম্বার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে শাহরুখের জীবনেও। ২০১৯ সালে মুক্তি পায় ডিজনির ‘দ্য লায়ন কিং’। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি ভাষাতেও ডাবিং হয় ‘দ্য লায়ন কিং’-এর। হিন্দি ভাষায় ‘দ্য লায়ন কিং’ ছবিতে মুফাসার কণ্ঠ দিয়েছিলেন শাহরুখ। সিম্বার নেপথ্য কণ্ঠে ছিলেন শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খান।
তবে এটি নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা মোটেই কমেনি। বক্স অফিসে ৩৫তম দিনেও সিনেমাটি রেকর্ড ভেঙেছে। শাহরুখ দীর্ঘদিন পর কামব্যাক করেও আগের মতোই সাফল্যের শীর্ষে রয়েছেন। সিনেমাটি ভারতে এরই মধ্যে ৬২৭.০৫ কোটি রুপি আয় করেছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৩৬ কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি আয় করেছে ১১১৭.৩৯ কোটি রুপি। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৯১ কোটি টাকারও বেশি। ছবির শেষ দৃশ্যে দুই শাহরুখের মুখে ‘রামাইয়া বাতা বাইয়া, মেনে দিল তুঝকো দিয়া’ গানটি জয় করে নিল পৃথিবীজুড়ে দর্শক হৃদয়।
