রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আলাপন

দর্শকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ

দর্শকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ

এ যেন এক রাজকীয় প্রত্যাবর্তন! বলিউডে বাংলাদেশি তারকা আজমেরী হক বাঁধন’-এর সাধারণরূপে অসাধারণ উপস্থিতি নজর কেড়েছে আলাদাভাবে। ‘খুফিয়া’ মুক্তির পর সবার চোখ আটকে গেছে বাঁধনে। এই অনন্যার ডাবল এজেন্ট বা গুপ্তচর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় আর আকর্ষণীয় লুক এখন প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। তার সঙ্গে ‘খুফিয়া’ চলচ্চিত্র ও সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন?

এই তো, ভালো আছি।

 

‘খুফিয়া’ মুক্তির পর সব আলোচনা এক বিন্দুতে, চারদিকে বাঁধন বন্দনা। সব মিলিয়ে কেমন লাগছে?

ভীষণ ভালো লাগছে। আমি দর্শকের ভালোবাসায় মুগ্ধ, অভিভূত। সবাই মুভিটি দেখছে, আমার চরিত্রটি নিয়ে আলোচনা করছে। দুই বাংলার মানুষের ফোন, এসএমএস, ফেসবুকে লেখালেখি দেখছি আর সত্যিই অবাক হচ্ছি। বেশির ভাগ দর্শক জানিয়েছে, আমার অভিনয়, আমার ন্যাচারাল উপস্থিতি এবং আমার কনফিডেন্ট তাদের ভালো লেগেছে। ইন্ডিয়ান বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলোও আমাকে নিয়ে লিখছে, এটা সত্যিই খুশির বিষয়। ছবিতে আমার উপস্থিতি হয়তো বেশি সময়ের নয় কিন্তু এটিতে কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এটা অভিনেত্রী হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও আমাকে ঋদ্ধ করেছে।

 

অক্টোপাস ছাড়া খুফিয়া...

একেবারেই অসম্পূর্ণ।

 

টাবুর সঙ্গে রসায়নের প্রশংসা করেছেন অনেক তারকা...

এত বড় একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি, সেটা পর্দায় কেমন লাগবে, তা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু মানুষ আমাদের রসায়ন এতটা পছন্দ করেছে যে, আমি মুগ্ধ। মুক্তির দিন খুদে বার্তা পাঠিয়ে শুভকামনা জানিয়ে টাবু লিখেছেন, ‘ছবিতে তুমি এত দুর্দান্ত করেছ, মানুষ তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে।’ বিশালও আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘অক্টোপাস চরিত্রে তুমি এত ভালো করেছ, চিন্তার কিছু নেই। আসলে কোনো চরিত্র যদি আমাকে রোমাঞ্চিত করে, তাহলে অন্য কিছু না ভেবে সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

 

অথচ ‘খুফিয়া’য় চরিত্রটি বাঁধনের আগে বাংলাদেশি কিছু অভিনেত্রী করতে রাজি হননি...

একজন অ্যাক্টর হিসেবে আমি মনে করি যে, আমাকে যে চরিত্রটা এক্সাইটেট করবে, যে চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং মনে হবে সেই চরিত্রটা করব। সঙ্গে ডিরেক্টর কে সেটাও অনেক ইমপরটেন্ট। এটিতে ডিরেক্টরটা দ্য গ্রেট বিশাল ভরদ্বাজ। সঙ্গে কো-অ্যাক্টর টাবু। আর যে ক্যারেক্টার সেটা আগে কখনোই করিনি। যখন এমন একটা চরিত্র পেয়েছি, অডিশন দিয়েছি। এরপর অপেক্ষা করেছি। কাস্টিং যখন ফাইনাল হয়েছে তখন কাজটি করতে গিয়েছি। আমি মনে করি একজন অ্যাকটর হিসেবে এটি অনেক বড় সুযোগ নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারার। নিজেকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারার। আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি।

 

টাবুর প্রেমিকা বাঁধন! মানে সমকামী চরিত্রে অভিনয়। চরিত্রটি করার আগে-পিছে কোনো ভাবনা এসেছিল?

অনেক দিন ধরেই টাবুর প্রেমে পড়ে আছি। তাই ভাবলাম এই সুযোগটাকে কাজে লাগানো যাক। আর অভিনেতাদের কোনো ব্যারিয়ার থাকা উচিত নয়। তবুও যা আমি নই, সেই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়েছে। সমাজের কথাও চিন্তা করেছি। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এই চরিত্রটায় নিজেকে এক্সপ্লোর করতে। আমার সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল তা দর্শকদের উচ্ছ্বাস থেকেই স্পষ্ট। এই ছবিতে চুমুর দৃশ্য ছিল, যেটাকে প্রফেশনাল জায়গা থেকে দেখেছিলাম আমরা দুজনেই। তাই কোনো সমস্যা হয়নি। একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করে দিয়েছিলেন পরিচালক।

 

 

এদেশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা মাথায় ছিল?

হ্যাঁ, ছিল। এই চরিত্রটা করার আগে অনেক ভেবেছি। কিন্তু যেহেতু এখন আমার মানসিক গঠনে পরিবর্তন এসেছে, আমি নিজের সিদ্ধান্তে দৃঢ় থেকেছি। বাংলাদেশে কিন্তু অনেক সমকামী আছেন। কিন্তু সবাই এমন ভাব করেন যে, তারা এগজিস্টই করেন না। সোসাইটিতে কোনো অ্যাকসেপট্যান্স নেই। কিন্তু দেখুন চিত্রটা। বাংলাদেশের দর্শকরা আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। আসলে এখন মানুষ প্রগ্রেসিভ ছবি দেখতে চান। আমরাই সেটা বুঝতে পারি না।

 

গত কয়েক বছরে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দর্শক খুঁজে পেয়েছে। আগে আপনাকে এক্সপ্লোর করার ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?

এই ইন্ডাস্ট্রির একটি বিষয় আছে, একটি চরিত্র ক্লিক করলে সেটাই ফিক্সড হয়ে যায়। কোনো শিল্পী একটা চরিত্র ভালো করলে ওই রকম চরিত্র ছাড়া ভিন্ন রকম ও চ্যালেঞ্জি কোনো চরিত্রে ডাক পায় না খুবই সহজে। নিমাতা-প্রযোজকদের মনে সর্বদায় একটি বিষয় থাকে, ‘সে কি এই চরিত্রটি ক্যারি করতে পারবে?’ যেমনটি আমার ক্ষেত্রে অনেকেই ভেবেছিলেন ২০১৮ সালের আগে। সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন সৃজিত, অনিন্দ্য, সাদ কিম্বা বিশাল ভরদ্বাজ। তারা আমাকে ভাবনায় রেখেছিলেন বলেই চরিত্রগুলো করেতে পেরেছিলাম। আমি বলব ২০১৭-এর আগ পর্যন্ত আমি কাজগুলো ইনজয় করতাম না। তখন ভালো লাগত না। তখন অ্যাকটিংয়ের জন্য নিজেকে ফোকাস করতে পারিনি। তবে এখন যা করছি, ভালো লাগা থেকেই করছি।

 

জীবন এখন কতটা সুন্দর?

খুবই সুন্দর! আমি এখন বর্তমানকেই বেশি ফোকাস করতে চাই। জীবনকে উপভোগ করতে  চাই। আগে অতীত নিয়ে খুব বেশি ভাবতাম, পড়ে থাকতাম। এখন আর ভাবি না। যত দিন বাঁচি কাজ করে যেতে চাই।

সর্বশেষ খবর