বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেমন আছেন সেই তিন দাপুটে অভিনেত্রী

যেমন আছেন সেই তিন দাপুটে অভিনেত্রী

সত্তর দশকে অভিনয়ে আসা অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার জনপ্রিয়তার রেশ না কাটতেই নব্বই দশকে অভিনয়ে এলেন তিন নতুন মুখ। তাঁরা হলেন- আফসানা মিমি, বিপাশা হায়াত ও শমী কায়সার। দক্ষ এবং সাবলীল অভিনয় দিয়ে সহজেই তাঁরা জয় করে নেন দর্শক-নির্মাতার মন। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ে সক্রিয় থাকলেও এখন তাঁরা পর্দায় নিয়মিত নন। বর্তমানে কেমন আছেন এবং কী নিয়ে ব্যস্ত তাঁরা সে কথাই তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

মঞ্চে ও ওটিটিতে আফসানা মিমি

নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন নাটকের প্রিয়মুখ আফসানা মিমি এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। মাঝে মধ্যে ওটিটিতে দেখা যায় তাঁকে। এবার এ অভিনেত্রী ফিরছেন মঞ্চেও। নিজের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় ফিরলেন তিনি। ৩৩ বছর আগে ‘দর্পণ’ নাটক দিয়ে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় আফসানা মিমির। ২০০২ সালের শেষের দিকে ‘খাট্টা তামাশা’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ ও ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। মাঝে ২০ বছর মঞ্চে দেখা যায়নি অভিনেত্রীকে। দুই দশক পর তিনি ফিরছেন ৩৩ বছর আগে অভিনয় করা সেই নাটক দিয়ে। মাঝে অবশ্য প্রাচ্যনাটে কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী। এ দলের হয়ে ‘রাজা এবং অন্যান্য’ নাটকে ২০০৭ সাল থেকে টানা চার বছর অভিনয় করেছেন। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটিতে ‘নিখোঁজ’ ও ‘মহানগর ২’-এ অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। বিরতির পর এসব কাজ করতে গিয়ে মঞ্চে ফেরার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি আফসানা মিমি ‘দিল’, ‘চিত্রা নদীর পারে’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘পাতালঘর’-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

মিমি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি। প্রযোজনা ব্যবসায়ও ব্যস্ত ছিলাম। অভিনয় থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। ২ বছর ধরে যখন একটু একটু করে অভিনয় করছিলাম; তখন প্রতিদিনই মনে হতো আমি তো কিচ্ছু জানি না। কিচ্ছু হয় না। বারবার মনে হতো, আমার থিয়েটারের পাঠশালাটা যদি আবার ফিরে পেতাম, খুব ভালো হতো। থিয়েটার তো আমাদের কাছে শেখার সবচেয়ে বড় স্কুল, পাঠশালা। সেখানে গিয়ে একজন নির্দেশকের তত্ত্বাবধানে কাজ করি, শিখি, চর্চা করি, ওটা খুব মিস করছিলাম। ভাবছিলাম, ইশ, কেউ যদি মঞ্চে কাজ করতে ডাকত আমায়, খুব ভালো হতো!’ ওই ভাবাভাবির সময়ে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই। সারা আপা (যাকের) ‘দর্পণ’ নাটকে আমাকে হ্যামলেটের মা চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। এরপর নায়লা আজাদ নূপুরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এমনিতে তাঁর নির্দেশনায় কাজ করার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মিমির। ফেরার কাজটা তাঁর মাধ্যমে হওয়ায় ভীষণ উচ্ছ্বসিত মিমি। এত বছর পর মঞ্চে ফেরা, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কাজ করা ও বন্ধুদের দেখা পাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে রোমাঞ্চিত মিমি।

 

ছবি আঁকা চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত বিপাশা হায়াত

অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সঙ্গে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোযোগী হয়ে পড়েন বিপাশা। যুক্তরাষ্ট্রেও থিতু হয়েছেন তিনি। তারপরও সময় পেলেই দেশে ছুটে আসেন। ব্যস্ত হন শিল্পের সৃজনশীল কাজে। এ দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে আরিশা আহমেদ, ছোট ছেলে আরিব। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বর্তমানে ছবি আঁকা ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জয়নুল গ্যালারি, প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ডিভাইন আর্ট গ্যালারিসহ দেশে-বিদেশে বহু স্থানে বিপাশার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। বিপাশা হায়াত নব্বই দশকের টেলিভিশন পর্দায় এক অপরিহার্য নাম। প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শিল্পের চর্চা করে চলেছেন স্বমহিমায়। একজন নাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন। বর্তমানে নিজেকে একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেও পরিচিত করতে আনন্দ বোধ করেন। আর নিপুণ হাতে সামলে চলেছেন সংসার, সন্তানও। বাবা আবুল হায়াত একজন গুণী অভিনেতা। তাই অভিনয়ের সঙ্গে বিপাশার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই। ১৯৯০ সাল থেকেই শিল্পকলার জগতে তাঁর বিচরণ। ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স করেছেন এ গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। নব্বইয়ের দশকে বিপাশা হায়াতের উত্থান টিভি নাটকের মধ্য দিয়ে। ক্যারিয়ারে নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অনেক চরিত্রকেই তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর অর্জনের ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’তে অভিনয় করে এ পুরস্কার জয় করে নেন তিনি।

 

ব্যবসা, রাজনীতি ও ছবি প্রযোজনায় ব্যস্ত শমী কায়সার

নব্বই দশকের দাপুটে অভিনেত্রী শমী কায়সারের জন্ম প্রখ্যাত লেখক শহীদুল্লা কায়সার ও পান্না কায়সার দম্পতির ঘরে। নন্দিত অভিনেত্রী শমী বর্তমানে টিভি নাটকে আর নিয়মিত নন। ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন এ অভিনেত্রী।। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি এবং এফবিসিসিআই-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ ছবির প্রযোজনা দিয়ে নিজের অঙ্গনে ফিরলেন শমী। গত জুলাইয়ে এ ছবির শুটিংও শুরু করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন ওয়াহিদ তারেক। এ ছবির আগে তিনি ‘আলগা নোঙর’ নামের একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন। ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ ছবির মাধ্যমে পান্না কায়সারের দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদুল্লা কায়সারকে আবিষ্কার করা হবে। ১৯৮৯ সালে প্রয়াত প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘কে বা আপন কে বা পর’ নাটকে শমী প্রথম অভিনয় করেন। এরপর ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় ও আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় তিন পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘যত দূরে যাই’-এ অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এ অভিনেত্রীকে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- নক্ষত্রের রাত, ছোট ছোট ঢেউ, স্পর্শ, একজন, অরণ্য, আকাশে অনেক রাত, মুক্তি, অন্তরে নিরন্তরে, স্বপ্ন, ঠিকানা প্রভৃতি। শমী কায়সার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাছন রাজা’ এবং তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘লালন’ সিনেমা দুটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সিনেমা দুটি দর্শকের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর অভিনয় জীবনের প্রথম নায়িকা শমী কায়সার। তাঁরা দুজন বেশ কিছু খন্ড নাটক ও ধারাবাহিকে কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বটাও ছিল বেশ দারুণ। শমী কায়সার মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় দুই যুগ। ঢাকা থিয়েটারের নাট্যকর্মী হিসেবে বেশ কিছু মঞ্চনাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে সেলিম আল দীন রচিত ‘হাতহদাই’ অন্যতম। ১৯৯৭ সালে শমী কায়সার গড়ে তোলেন তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি প্রোডাকশন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় মুক্তি এবং অন্তরে নিরন্তরে নাটক নির্মিত হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তাঁর প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেড রেডিও অ্যাক্টিভ নামে একটি বেতার কেন্দ্রের নিবন্ধনও পায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় বুদ্ধিজীবী দিবসের বিশেষ নাটক ‘সাড়ে তিনখানা চিঠি’তে অভিনয় করেন শমী কায়সার। এরপর তাঁকে আর নতুন কোনো নাটকে দেখা যায়নি। তবে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রচারিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে দেখা গেছে শমী কায়সারকে। একটা সময় পর অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। ধানসিঁড়ি প্রোডাকশন নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। এরপর ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শমী কায়সার।

সর্বশেষ খবর