সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকাই ছবিতে নতুন গল্পে বাজিমাত

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকাই ছবিতে নতুন গল্পে বাজিমাত

নতুন গল্পে বদলে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমা। সময়ের পথে হেঁটে নতুন গল্প দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দর্শক। আসলে আমাদের দেশে মৌলিক ও জীবনধর্মী গল্পের অভাব নেই। দর্শক চলচ্চিত্রে  নিজের পারিপার্শ্বিকতাকে দেখতে চায়। আয়নায় আপন চেহারা দেখার মতো যখন ছবিতে নিজেদের চিরচেনা জীবনচিত্র খুঁজে পায় তখনই তারা সেই ছবির কৃষ্টি ও কালচারের জয়গান গায়। আর এমন গল্পের ছবি বদলে দেয় একটি দেশের চলচ্চিত্রকে...

সম্প্রতি মুক্তি পেল চলচ্চিত্র ‘১৯৭১ সেইসব দিন’। হৃদি হক তাঁর এই প্রথম চলচ্চিত্রে খুব সাবলীলভাবে একটি ধারা বর্ণনায় দুটি লাইন বলেছেন। যা এ ছবি ও সাম্প্রতিক বোধের দুনিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায় ‘আমরা নিরপেক্ষ থাকার আড়ালে কিছু বিষয় প্রশ্রয় দিই বা কিছু অনৈতিকতাকেও সমর্থন করি।’ হৃদি হকের চলচ্চিত্রের গল্প ও গল্পের বয়ান দর্শকমন ছুঁয়েছে বলেই দর্শক মনোযোগ দিয়ে ছবিটি দেখেছে। ছবিটির মাধ্যমে নির্মাতা আবারও প্রমাণ করলেন সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত গল্প হলে সেই ছবি দর্শক অবশ্যই দেখে। এই ছবির গল্পের প্লট মুক্তিযুদ্ধকালীন শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনগুলোর নানা সংকটকে ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে এর আগে শহুরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমস্যা নিয়ে ছবি কেউ করেননি। এ কারণেই নতুন গল্প পেয়ে দর্শক আগ্রহ বেড়েছে ছবিটি দেখতে। আসলে গল্পে বদলায় একটি দেশের ছবি। মানে, সময় ও নিজ দেশের পারিপার্শ্বিকতাকে ঘিরেই ছবি নির্মাণ করতে হবে, এটি দর্শক চাহিদা। চলচ্চিত্রকার আর দর্শকদের একটিই কথা- ‘ভালো  গল্প আর মানসম্মত ছবি পেলে দর্শকমহলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হয়। চলতি বছরের কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ, লালশাড়ি, প্রহেলিকা ও ক্যাসিনো- এই পাঁচ ছবির প্রতি দর্শক আগ্রহ তাই বলছে। দর্শকের দাবি ‘প্রিয়তমা’ প্রেমের গল্পের ছবি হলেও গল্পের নতুনত্ব মানে যেভাবে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত না দেখে বের হওয়ার উপায় নেই। এই ছবির গল্পে যথেষ্ট টুইস্ট আছে। ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিটি একটি সত্যি ঘটনার চিত্ররূপ। রহস্যে ভরা গল্পের ছবি এটি। লালশাড়ি ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে চিরায়ত বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য তাঁতশিল্প ও এর সঙ্গে যুক্তদের সুখ-দুঃখের গল্প নিয়ে। তাই বাংলার মাটির গন্ধ মাখা এই ছবির গল্প বাঙালিকে সিনেমা হলে যেতে সহজেই উৎসাহ জুগিয়েছে। প্রহেলিকা ছবিটির গল্প প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত অন্যরকম রহস্যের আবরণে মোড়া। তাই দর্শক টানটান উত্তেজনায় ছবিটি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। ক্যাসিনো ছবিটি এ দেশে ঘটে যাওয়া ক্যাসিনোকান্ড ও মানিলন্ডারিংয়ের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ও বলিষ্ঠ প্রতিবাদের অগ্নিরূপ। তাই দর্শক সৈকত নাসির পরিচালিত এই ছবিটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছে। প্রকৃত অর্থে ২০২২ সাল থেকেই দেশীয় চলচ্চিত্রের হাওয়া বদল শুরু হয়। মানে সিনেমার পরাণে আশাজাগানিয়া বছর। ওই বছর মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ ছবি দুটি রীতিমতো দেশ-বিদেশে পরাণের সঞ্চার করেছে আর স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে নতুনভাবে গল্প বলার জোরে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ছবিটি দিয়ে এই সফলতার যাত্রা শুরু হয়। এরপর খসরুর ‘গলুই’, রহিমের ‘শান’ দিয়ে যে দর্শক জোয়ার শুরু হয়েছিল; তাকে আরও কয়েকগুণ ত্বরান্বিত করে রায়হান রাফীর ‘পরাণ’ ও মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’। গলুইতে ওঠে এসেছে গ্রামবাংলার চিরন্তন রূপ আর সংস্কৃতি। আর শানের গল্পে ফুটে ওঠেছে মানব পাচারের মতো বিবেকবোধহীন অর্থলিপ্সুদের অপতৎপরতার চিত্র ও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসিকতা। বিশেষ করে ওই বছর ‘গলুই’, ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’র জোয়ারে চাঙা হয়ে উঠে ঢাকাই সিনেমা। আশায় বুক বাঁধেন পরিচালক প্রযোজকরা। চলতি বছরও ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রহেলিকা’ ছবিগুলো ভিন্নধর্মী গল্পের কারণে সফলতা দেখিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি ছবিতে জীবনবোধের গল্প ওঠে আসা এবং দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেন, নতুন গল্পে বদলে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমা। সময়ের পথে হেঁটে নতুন গল্প দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে দর্শক। আসলে আমাদের দেশে মৌলিক ও জীবনধর্মী গল্পের অভাব নেই। দর্শক চলচ্চিত্রে নিজের পারিপার্শ্বিকতাকে দেখতে চায়। আয়নায় আপন চেহারা দেখার মতো যখন ছবিতে নিজেদের চিরচেনা জীবনচিত্র খুঁজে পায় তখনই তারা সেই ছবি কৃষ্টি ও কালচারের জয়গান গায়। আর এমন গল্পের ছবি বদলে দেয় একটি দেশের চলচ্চিত্রকে। কিছুদিন আগে কয়েকটি বিদেশি পত্রিকা বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাঁদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে প্রতিবেদন ছেপেছিল।  পত্রিকাগুলোর মধ্যে ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডেইলি স্ক্রিন’-এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলা চলচ্চিত্রের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্মাতারা এখন ভিন্ন আঙ্গিকে গল্প বলছে। এটা ওই দেশের সিনেমার জন্য শুভ লক্ষণ।

সর্বশেষ খবর