শুটিংয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দেশ-বিদেশের তারকারা। ১৯৮২ সালে বলিউডে মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন ‘কুলি’ ছবির শুটিংয়ে’। এতে তাঁর প্রাণও যেতে বসেছিল। আমাদের চলচ্চিত্রেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।  এমন কিছু দুর্ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

অনন্ত জলিল

উটের পিঠ থেকে পড়ে যান

২০২১ সালে ইরানে ‘দিন : দ্য ডে’ ছবির শুটিংয়ে ইরানের হেরাতের দুর্গম পাহাড় ও মরুভূমি এলাকায় অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং করার সময় উটের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন অনন্ত। স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরে থাইল্যান্ডের হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগেও তিনি ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন।

পপি

ওড়নায় আগুন

একটি টেলিছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন চিত্রনায়িকা পপি। ‘ক্যান্ডেল লাইট’ নামে টেলিছবিটির শুটিং চলাকালীন পপির পরিহিত ওড়নায় আগুন ধরে যায়। সেখান থেকে সেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পপির হাত পুড়ে গিয়েছিল। পপি ছাড়াও পরিচালক শাহীন সুমনের হাতও পুড়েছে। এছাড়া পপি একাধিকবার শুটিং সেটে আহত হয়েছেন।

ফেরদৌস-পূর্ণিমা

মোটরসাইকেল উল্টে আহত

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা নোয়াখালীর একটি চরাঞ্চলে শুটিং সেটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। সেখানে ‘গাঙচিল’ ছবির শুটিং করছিলেন তাঁরা। শুটিংয়ের দৃশ্যটি ছিল, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন পূর্ণিমা। পেছনে বসেছিলেন ফেরদৌস। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাস্তায় চাকা পিছলে তাঁদের মোটরসাইকেল উল্টে যায়। ফেরদৌস আর পূর্ণিমা ছিটকে গিয়ে রাস্তার পাশে পড়েন। আহত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ডিপজল

কাঁধে আঘাত পান

ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘এক কোটি টাকা’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সময় কাঁধে আঘাত পান অভিনেতা ডিপজল। সাভারের ফুলবাড়িয়া বাজারে এ ছবির শুটিং চলছিল। দৃশ্যটি ছিল এমন- এক মেয়ের চিৎকার শুনে তাকে বাঁচাতে যাচ্ছেন ডিপজল। বেশ কিছু মানুষ মেয়েটিকে আটকে রেখেছে। মেয়েটিকে বাঁচাতে লোকগুলোর সঙ্গে মারামারি করেন তিনি। মারামারির একপর্যায়ে সত্যি সত্যি কাঁধে আঘাতপ্রাপ্ত হন ডিপজল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়েছিল।

শবনম বুবলী

কাচের দরজায় আঘাত পান

২০১৯ সালে জাকির হোসেন রাজুর পরিচালনায় ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবির শুটিং করছিলেন শবনম বুবলী। শুটিং চলছিল রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে। ছবির একটি দৃশ্যে শাকিব খান বুবলীকে কাঁধে নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন। ক্যামেরার সামনে দ্রুত চলতে গিয়ে কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে আসার সময় বুবলী মাথায় আঘাত পান। হাসপাতালে শুটিং চলছিল বলে দ্রুত তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর অল্প সময় তিনি আর শুটিংয়ে অংশ নিতে পারেননি।

ববি

বোমা বিস্ফোরণে আহত

সিলেট শহর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা দূরত্বে বিজলী ছবির শুটিং করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন নায়িকা ববি। দৃশ্যটি ছিল চারদিকে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। এর মধ্যেই নায়ক ও নায়িকা দৌড়াতে থাকেন। ববি শুটিং শুরু করার পরপরই কিছু দূরত্বে বিস্ফোরিত হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর সামনেই বিস্ফোরিত হয় বোমা। সঙ্গে সঙ্গে আহত হন ববি। সেদিন সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। এরপর বেশ কদিন শুটিংয়ে অংশ নেওয়া হয়নি তাঁর।

সাইমন সাদিক

কাঁধে চোট পান

২০১০ সালে গুলশানের একটি বাড়িতে চলছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘জ্বী হুজুর’ ছবির শুটিং। ছবিতে মারামারির একটি দৃশ্যে ডান হাতে প্রচন্ড ব্যথা পান নায়ক সাইমন সাদিক। শুটিংয়ের সময় ডান হাতের অংশে, কাঁধে, জয়েন্টে মারাত্মক চোট লাগে তাঁর। এ কারণে ‘জ্বী হুজুর’ ছবির শুটিং-পরবর্তী ২২ দিন বন্ধ রাখা হয়। এ দিনগুলোয় সাইমন কোনো কাজ করতে পারেননি। প্রচন্ড ব্যথায় দিন কেটেছিল তাঁর। উন্নত চিকিৎসায় পরবর্তী সময়ে সুস্থ হন নায়ক সাইমন সাদিক।

বাপ্পী

অজ্ঞান হয়ে পড়েন

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে চলছিল  ভৌতিক চলচ্চিত্র ‘ডেঞ্জার জোন’-এর শুটিং। একটি ঝুঁকিপূর্ণ শট দৃশ্যায়নের সময় বাপ্পীর সঙ্গে ছিলেন ছবির নায়িকা জলি। বাপ্পীর কোমরে বাঁধা ছিল ক্রেনের কালো সুতা। দৃশ্যটি ছিল জাদুর ধাক্কায় উড়ে যাবেন বাপ্পী। কিন্তু কোমরে বাঁধা সুতার টানটা এতটাই জোরে হয়েছিল যে, ঘাড়টা বাঁকা হয়ে নিচের দিকে চলে যায়। এতে করে বাপ্পীর মাংসপেশিতে মারাত্মক টান লাগে। ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।

পূজা চেরি

আঙুল ফেটে নখ উল্টে যায়

‘মাসুদ রানা’ সিনেমার মারপিটের দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন নায়িকা পূজা চেরি। পূজার ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙুল ফেটে রক্ত বের হয়। নখ অনেকটা উল্টে যায়। এ অবস্থায় ব্যথায় কাতরাতে থাকেন পূজা। রাত দেড়টার দিকে মারপিটের দৃশ্যের একপর্যায়ে ইউনিটের লোকজন দেখতে পান, তাঁর পা থেকে রক্ত ঝরছে। এরপর দেখা যায় তাঁর ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ পুরোপুরি উল্টে গেছে। এ কারণে কয়েকদিন শুটিংয়ে অংশ নিতে পারেননি পূজা।

নিরব

জোঁকের কামড়ে আহত

সাইফ চন্দন পরিচালিত ‘কয়লা’ ছবির শুটিং করছিলেন নিরব। সিলেটের পদ্মবিলে নৌকায় শুটিং চলাকালীন নিরবের বাম পায়ের তালু কেটে জখম হয়। প্রায় ৫ ইঞ্চির জোঁক কামড় দেয়। প্রথমে বুঝতে পারেননি জোঁক। পরে কোনোভাবেই জোঁক সরাতে না পেরে নৌকার বাঁশের ছাঁচে সজোরে ঘষা দিলে পায়ের তালু অনেকখানি জখম হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জয়ন্তিকা সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়ে নিরবকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেলাইয়ের পর ব্যান্ডেজ করা হয় এবং শুটিং থেকে বিরত থাকেন।