সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
‘ছুটির ঘণ্টা’র স্মৃতিকথা...

আমাকে সুইপারপট্টিতে যেতে হয়েছিল : শাবানা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আমাকে সুইপারপট্টিতে যেতে হয়েছিল : শাবানা

‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথী মোদের ফুলপরী...’। ১৯৮০ সাল। মুক্তি পেল সেই বিখ্যাত ছবি ‘ছুটির ঘণ্টা’। এই ছবির জনপ্রিয় এ গানটি এখনো শ্রোতারা ভোলেননি। এমন স্মৃতিকথা জানিয়ে অভিনেত্রী শাবানা সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে জানালেন কীভাবে তিনি এই ছবিটির নায়িকা চরিত্রে যুক্ত হয়েছিলেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের বিউটি কুইনখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা বলেন, নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলছাত্র ঈদের ছুটির আগে বাথরুমে আটকা পড়েছিল এবং ১১ দিন স্কুল বন্ধ থাকাকালে বন্দিদশা অবস্থায় করুণ মৃত্যু হয় ছাত্রটির। পত্রিকায় এ খবরটি পড়ে প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন এ মর্মান্তিক সত্য ঘটনা অবলম্বনে তিনি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। আজিজুর রহমানের অনুরোধে প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক সত্য সাহা ছবিটি প্রযোজনায় উদ্যোগী হলেন। পত্রিকার দুই কলামের খবরে বিস্তারিত কিছু না থাকায় চিত্রনাট্যে অনেক ঘটনা ও চরিত্র জুড়ে দিতে হয়েছে। এমনকি জনপ্রিয় জাদুশিল্পী জুয়েল আইচকেও এই ছবিতে কাস্ট করা হয়। ঝামেলা বাধল গল্প নিয়ে। কারণ নায়ক-নায়িকা না থাকলে সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি চালাতে চাইবেন না। তাই স্কুলের ঘণ্টাবাদক হিসেবে ঠিক করা হলো নায়ক রাজ্জাককে। কিন্তু নায়িকার কী হবে। কাকতালীয়ভাবে নায়িকার চরিত্রটি গল্পে যুক্ত হয়। কাকরাইল ফিল্মপাড়ায় এক দিন পরিচালক আজিজুর রহমান তাঁর অফিসের দরজা খুলে দেখতে পান এক মহিলা অফিসের টেবিলের ওপর বসে সিগারেট ফুঁকছেন। মহিলা জানালেন, তিনি সুইপারের স্ত্রী, স্বামীর জ্বর হয়েছে, তাই তিনি ঝাড়ু দিতে এসেছেন। নির্মাতা আজিজুর রহমানের ওই দৃশ্য দেখে মাথায় নায়িকার আইডিয়া আসে। নায়িকা হবে স্কুলের ঝাড়ুদারনি। সেই চরিত্রে আমিই নাকি যথাযথ। প্রস্তাব পেয়ে না করিনি। ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমাকে নিয়ে ধোলাইখালের সুইপারপট্টিতেও গিয়েছিলেন পরিচালক। তাদের পরিবেশ, আচার-আচরণ, পোশাক, চলাফেরা কাছ থেকে দেখে শিখেছিলাম। যে স্কুলছাত্রকে নিয়ে ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে সেই স্কুলছাত্র খোকার ভূমিকায় নেওয়া হয় শিশুশিল্পী সুমন সাহাকে; যে প্রযোজক সত্য সাহার ছেলে। ছবির শুটিং হয়েছিল কাপ্তাই ও এফডিসিতে। দিনাজপুরের মডার্ন হলে ম্যাটিনি শোতে এক মহিলা ছবি দেখতে দেখতে আবেগে কোলের শিশুসন্তানকেই চাপ দিয়ে মেরে ফেলেন। এখনো ছবিটির কথা মনে পড়লে কানে বেজে ওঠে সেই মর্মস্পর্শী গান... ‘একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাব...!’ চির অমর হয়ে থাকবে ছুটির ঘণ্টা।

সর্বশেষ খবর