রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রহমানের কারণেই নায়িকা হন শবনম

আলাউদ্দীন মাজিদ

রহমানের কারণেই নায়িকা হন শবনম

এ দেশের চলচ্চিত্রের প্রথম স্টাইলিশ নায়ক ছিলেন রহমান। তাঁর স্মার্টনেস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত তিনি অসাধারণ নায়ক ছিলেন। তাঁর স্টাইলিশ লুক, গেটআপ, কস্টিউম সিলেকশন, হাঁটাচলা, কথা বলার ধরন এগুলো ছিল অনবদ্য। পরিচালক এহতেশাম যখন তাঁকে ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবির জন্য কাস্ট করেন তখন প্রথম দিন শুটিং করতে এসে একটা ঘটনা ঘটেছিল। তিনি সিঁড়ি বেয়ে পরিচালকের রুমে যাচ্ছিলেন। তখন সিঁড়িতে থাকা দুটি মেয়ের একজন তাঁকে দেখে বলে ওঠে- ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়ে তো বিলকুল উত্তম কি তারা লাগতা হ্যায়’। উত্তম বলতে মহানায়ক উত্তম কুমারকে বুঝিয়েছিল। সত্যিই তিনি উত্তম কুমারের মতো দেখতে ছিলেন। অভিনেত্রী শবনমের সঙ্গে তাঁর জুটি দুর্দান্ত ছিল। রহমানের কারণেই শবনম নায়িকা হয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে? অভিনেতা রহমান তাঁর জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘১৯৬০ সালে মুক্তি পেল আমার প্রথম অভিনীত ছবি ‘এ দেশ তোমার আমার’। ছবিটি সুপারহিট হলো। এরপর ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির নায়ক হলাম, নায়িকা শবনম। এটিও সুপারহিট। শুরু হলো নবযাত্রা।’ রহমান যখন চলচ্চিত্রে আসেন তখন এ দেশের চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে কাজ করছিলেন সুমিতা দেবী, চিত্রা সিনহা, নাছিমা খানসহ আরও কয়েকজন। রহমান বললেন, ‘এ নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিল। তখন আমার বয়স এত কম ছিল যে, সুমিতা দেবীকে দেখতে আমার দিদি মনে হতো, চিত্রা সিনহাও তথৈবচ। এর সমাধান? নতুন নায়িকা নিতে হবে। খোঁজ খোঁজ। অবশেষে পাওয়া গেল, ভারি মিষ্টি চেহারা। এর আগেও ছবিতে গ্রুপ ড্যান্স করেছে সে। নাম ঝর্ণা। হালকা পাতলা গড়ন। চোখ আর দাঁত অপূর্ব। এহতেশাম সাহেব তাঁর নাম দিলেন ‘শবনম’ অর্থাৎ শিশির। এরপর তাঁর সঙ্গে আমার জুটি কালোত্তীর্ণ হয়ে গেল।’ ‘পিরিত না জানে রীত’ নামের ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেন রহমান। ১৯৬৩ সালের জানুয়ারিতে শুটিং করার জন্য গেলেন সিলেটে। এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েই রহমান এক পা হারালেন। শুটিং চলছিল, এক দিন শুটিংয়ের বিরতিতে রহমান গাড়ি নিয়ে বের হবেন। অনেকেই না করলেও তিনি বের হয়ে যান। সেদিন সিলেটে জিপগাড়িতে রহমানের এক পা ছিল বাইরে। মুরারী চাঁদ কলেজের সামনে যেতেই একটি ট্রাক এসে রহমানের এক পা কেড়ে নিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৬ মাস, লন্ডনে ৪ মাস চিকিৎসার পরও পা ফিরে পেলেন না।

এই বেদনাদায়ক ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রহমান বলেছিলেন,  ‘সিলেটের এক ভদ্রলোক তাঁর একটি ছবিতে অভিনয়ের অফার দিলেন। নাম ‘পিরিত না জানে রীত’। ১৯৬৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আমি আর শবনম সিলেটে রওনা দিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। দুর্ঘটনায় একটি পা হারালাম। জিপের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ, সঙ্গে সঙ্গে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ধানখেতে। আমরা খাদিমনগরে শুটিং করছিলাম। ছয় মাস ঢাকার হাসপাতালে ছিলাম। কিন্তু পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়ায় লন্ডন পাঠানো হলো। সেখানে দ্বিতীয়বার অপারেশনের পর আমার ডান পা উরুর কাছ থেকে কেটে ফেলা হলো। বগলে ক্রাচ। সেখান থেকেই শুরু হলো আমার নতুন জীবনযুদ্ধের ইতিহাস।’

সর্বশেষ খবর