মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খলনায়কদের নায়ক রাজীব

খলনায়কদের নায়ক রাজীব

রুপালি পর্দার অপ্রতিদ্বন্দ্বী খল অভিনেতা ওয়াসীমুল বারী রাজীব। পর্দায় তাঁর দরাজ কণ্ঠের গর্জন ছিল বাঘের মতো। তাঁর কণ্ঠে খলনায়কের বীভৎসতা যেমন প্রাণ পেত তেমনি সাদামাটা চরিত্রও দর্শকের মন জয় করত। নায়ক হিসেবে অভিষেক হলেও ভিলেন হিসেবে যিনি সফল হয়েছিলেন। আজ এই শক্তিশালী অভিনেতার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি মাত্র ৫২ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর স্মরণে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

রাজীব নামেই সুপরিচিত

ওয়াসীমুল বারী রাজীব হলেও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে রাজীব নামেই সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলার দুমকীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর গম্ভীর ঝাঁজালো কণ্ঠ, রহস্যভরা চোখের চাহনি, বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি যেমন দর্শককে দিত টানটান উত্তেজনা তেমনি করত আতঙ্কিত। পর্দায় খলনায়ক হলেও পরিবার, সন্তান, ভক্ত, সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন মিশুক, হাস্যোজ্জ্বল আর আড্ডাবাজ এক মানুষ।

 

চলচ্চিত্রে আসার আগে

চলচ্চিত্রে আসার আগে তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

 

নায়ক হিসেবে ফিল্মে অভিষেক

প্রবাদপ্রতিম খলঅভিনেতা রাজীব ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে আসেন। তবে অনেকের মতে ১৯৮২ সালে কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ নামের একটি সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রাজীবের। ‘দাবি’ নামে আরেকটি সিনেমায় নায়কও ছিলেন।

 

খলচরিত্রে অনবদ্য

এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীদের কাছে এখনো স্বপ্নের মানুষ হয়ে আছেন তিনি। নানা চরিত্রে অভিনয় করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। খলচরিত্রের বাইরেও ছিল তাঁর পদচারণা। অনেক চলচ্চিত্রে ইতিবাচক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। রাজীবের চোখের ব্যবহার ছিল দুর্দান্ত। এই চোখ দিয়েই তিনি নিজেকে অন্যতম খলঅভিনেতা হিসবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিছু কিছু চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রকে রাজীব এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে, কেবল তাঁর অভিনয়শৈলীর কারণেই সিনেমাগুলো অমর হয়ে আছে।

 

ব্যতিক্রমী চরিত্রে অবিসংবাদিত

রাজীবের অভিনয়ে নিজস্ব ভাষা ছিল। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘বাবার আদেশ’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমী চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। ওই সব চরিত্রেও তিনি প্রশংসিত হন। কেয়ামত থেকে কেয়ামতের পর ‘দেনমোহর’ সিনেমায় সালমান শাহর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। দুর্দান্ত খল থেকে তিনি হয়ে যান আদর্শ বাবা। অমর নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। দুজনই জুটি বেঁধে বেশ সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমায় দুর্র্ধর্ষ ডাকাত চরিত্র থেকে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’-এ যেমন স্বাধীনতাকামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তেমনই ‘মেঘের পরে মেঘ’-এ করেছিলেন রাজাকারের চরিত্র।

 

ভাইরাল সংলাপ

তাঁর মুখে ‘রাজনীতিতে একটা কথা আছে’ সংলাপটি এখনো মানুষের মুখে ঘুরে ফিরে।

 

যমজ ছেলের নৌকা ডুবে মৃত্যু

রাজীব ও স্ত্রী ইশমত আরার যমজ সন্তান ১৯৯৬ সালে নৌকা ডুবে মৃত্যুবরণ করে। রাজীবের অন্য সন্তানদের সিনেমা নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।

 

এখনো পাননি একুশে পদক

শক্তিশালী অভিনেতা চার শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্র জগতে অবদানের জন্য তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও মৃত্যুর এত বছর পার হলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি একুশে পদক।

 

১৯ বছর রাজীবহীন চলচ্চিত্র

খলচরিত্রের দিকপাল এই মহাপুরুষ দীর্ঘায়ু নিয়ে পৃথিবীতে আসেননি। তাই ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর, মাত্র ৫২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর পূর্বে কর্কট ব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

 

রাজীব স্মরণে কাজী হায়াৎ-মিশা সওদাগর

রাজীবকে স্মরণ করে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে ছিলেন বেশ শক্তিশালী। মানুষ হিসেবে ছিলেন ভীষণ অমায়িক।’ রাজীবের জন্য দোয়া কামনা করে মিশা সওদাগর বলেন, ‘অনেক ভালো, উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর