শিরোনাম
বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবির নেপথ্যের যত গল্প

‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবির নেপথ্যের যত গল্প

ঢাকাই চলচ্চিত্রের বরপুত্র খ্যাত নায়ক সালমান শাহকে নিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদ নির্মাণ করেন ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিটি। তুমুল জনপ্রিয় এ ছবিটি মুক্তি পায় সালমানের মৃত্যুর পরের সপ্তাহে ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। নির্মাতার বলা জনপ্রিয় এ ছবিটির নির্মাণ নেপথ্যের কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমি অবাক হলাম শাবানার কথা শুনে

‘সত্যের মৃত্যু নেই’ প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা ছটকু আহমেদের অতি জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। এ ছবির নির্মাতা চলচ্চিত্রটির শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, প্রথম দিনের শুটিং। এফডিসির ১ নম্বর ফ্লোরে কারাগারের সেট ফেলেছি। যেখানে সালমানের সেই সুপারহিট গান ‘চিঠি এলো জেলখানায়’ এর দৃশ্যায়ন হয়। মা শাবানার সঙ্গে সালমানের ফাঁসির আগে শেষ বিদায় নেওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্যের শুটিং হবে। মা শাবানা তার ফাঁসির ছেলে সালমানকে দেখতে কারাগারে আসে, আর ছেলে তখন মায়ের পা ধরে কেঁদে বলছে, মা তুমি আমাকে একটু আদর কর, মা একটু আদর কর। প্রথম দিনের শুটিং, তাই উত্তেজনা একটু বেশি। সকাল থেকে এসেই লাইট করা, সেট সাজানো সব শেষ করেছি। সহশিল্পীরা ৪টায় এসেই কয়েদির পোশাক পরে, মেকআপ করে রেডি। কলাকুশলী লাইটম্যান ক্যামেরাম্যান সহকারী সবাই রেডি। আমি ক্যামেরাম্যান শহীদুল্লাহ দুলালকে (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী) বললাম, চল শুটিং শুরু করি। দুলাল তো অবাক, বলল আর্টিস্ট তো এখনো আসেনি, কার শুটিং করবেন? আমি বললাম কয়েদিদের শট নেব। সালমানের গান শুনে কয়েদিরা কাঁদছে। মায়ের সঙ্গে ছেলের সংলাপ চলাকালীন কয়েদিদের রি- অ্যাকশন শট। দুলাল বিরক্ত হয়ে বলল একটা নতুন ছবির শুটিং করবেন শাবানা, সালমান, আলমগীর, রাজীব, মিশা সওদাগর, শাহনাজ। সব বড় বড় শিল্পী আপনার ছবিতে, আপনি কয়েদি দিয়ে ছবির শট ওপেন করবেন কেন? আপনি বসেন, চা খান, শাবানা এখনই এসে পড়বে তাঁর সুন্দর মুখের ক্লোজআপ দিয়ে ক্যামেরা ওপেন করব। সবাই দুলালকে সাপোর্ট দিল। আমি বললাম না, কয়েদির শট দিয়ে ওপেন করব। শাবানা, সালমান এসে পড়লে তখন ওদের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হব। দুলাল খুবই অভিমানি ছেলে। অভিমানে ভিতর ভিতর গজর গজর করতে করতে শট নিতে সম্মত হলো। লাইট জ্বলল, ক্যামেরা বসানো হলো। কয়েদিরা শট দেওয়ার জন্য রেডি হলো। অ্যাকশন বলব। সহকারী এসে বলল, শাবান ম্যাডাম এসেছে। কথা শেষ হওয়ার আগে সেটেই মেকআপ নিয়ে এলো শাবানা। বলল আমি রেডি। দুলাল সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ নিয়ে অমায়িক হেসে বলল, আমি বলেছিলাম শাবানা ম্যাডাম ঠিক টাইমে চলে আসবে। দেখলেন চলে এসেছে। উনার শট দিয়ে শুরু করি। আমি শাবানাকে বললাম, ঠিক আছে আপনি মেকআপ রুমে বসুন, আপনার শটের লাইট করে ডাকব। শাবানা বলল, না না আপনি যে শট রেডি করেছেন তাই নিন। আমাকে নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমি এসেছি আপনার শিডিউলের পুরো শিফটে এখানে থাকব। যখন প্রয়োজন হবে ডাকবেন। শাবানা চলে গেল মেকআপ রুমে। আমি অবাক হলাম শাবানার কথা শুনে। শাবানা ছিল টোটালি ব্যতিক্রম এক শিল্পী। তাই এত যত্ন নিয়ে সত্যের মৃত্যু নেই ছবিটা শেষ করতে পেরেছিলাম।

 

সালমানকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক ছটকু আহমেদ

সালমান জাম্প করে শাহনাজকে নিয়ে লাইন থেকে সরে যায়

সালমানের ভালোবাসা পেতে ব্যর্থ হয়ে শাহনাজ রেললাইন দিয়ে ছুটে যাবে ট্রেনের নিচে সুইসাইড করবে। পেছনে তাঁকে থামাতে ডাকতে ডাকতে যাবে সালমান। ট্রেন ছুটে আসবে। দুর্ঘটনা ঘটার চরম মুহূর্তে সালমান ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহনাজকে বাঁচিয়ে বলবে আই লাভ ইউ। শাহনাজ খুশিতে জড়িয়ে ধরবে। মোটামুটি এরকম দৃশ্যটা। প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম (পরে আমার মিথ্যার মৃত্যু ছবির প্রযোজক হয়েছিল)। সবসময় আমার খরচ বাঁচানোর চিন্তা করত। আমার আরেক ম্যানেজার রউফও চাইত আমার টাকা বাঁচাতে। যা এখনকার ম্যানেজারদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। যাক, সেলিম বলল ট্রেনের ভিতর কোনো শট নেই শুধু পাসিং শট। ট্রেন ভাড়া করে টাকা খরচ করে লাভ নেই। এয়ারপোর্ট রোডে কাউলার দিকে রেললাইন আছে, সেই লাইন দিয়ে একটু পরপর ঢাকা থেকে, টঙ্গী থেকে ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সেই সময় শট নিয়ে নেবেন। কথাটা মনোপুত হলো। সালমান- শাহনাজসহ ফুল ইউনিট নিয়ে চলে গেলাম খিলক্ষেত আর কাউলার মাঝামাঝি। রেললাইনে গিয়ে বসলাম। ট্রেন আসে শট নেই, ট্রেন চলে যায় বসে থাকি। সালমান মজার মজার হাসির গল্প করে মাতিয়ে রাখে। দুপুরের নাস্তার সময় হয়ে গেল। প্রোডাকশন ম্যানেজার সবাইকে নাস্তা দিল। সহকারীকে ট্রেন আসার দিকে চোখ রাখতে বলে আমরা ট্রেন লাইনের ওপর বসেই নাস্তা করতে থাকলাম। আরাম করে খাচ্ছি। হঠাৎ বেরসিকের মতো সহকারী বলে ওঠল, ভাই ট্রেন আসছে। ব্যস সবাই খাওয়া ফেলে দ্রুত শট নিতে রেডি হয়ে গেল। রেললাইনে দাঁড়িয়ে গেল শাহনাজ, একটু পেছনে সালমান। বললাম ক্যামেরা। শট শুরু হলো। ট্রেন আসছে শাহনাজ ও সালমানের দিকে। শাহনাজ দৌড়ে যাচ্ছে ট্রেনের দিকে, তাকে থামাতে চাইছে সালমান। বলছে আই লাভ ইউ। থেমে যায় শাহনাজ, ঘুরে সালমানের দিকে। পেছনে তখন দ্রুতগতিতে ট্রেন আসছে। অ্যাকসিডেন্ট হবে হবে মুহূর্তে সালমান জাম্প করে শাহনাজকে নিয়ে লাইন থেকে সরে যায়। ট্রেন লাইন কাঁপিয়ে চলে যায়। আমাদের খাবার-দাবার সব ছিটকে পড়ে। যুক্ত থেকেই শট নিয়ে ফিরে এলাম।

 

সর্বশেষ খবর