রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এফডিসিতে শুটিং কেন কমছে

এফডিসিতে শুটিং কেন কমছে

নির্মাতাদের দাবি, এফডিসিতে তাঁরা শুটিং করতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। কারণ এখানে ফ্লোর ও সরঞ্জামের ভাড়া বেশি। এ কারণেই একসময় চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজে প্রাণবন্ত এই সংস্থাটি এখন প্রায় কর্মশূন্য, এমনটাই বলছেন নির্মাতারা। এফডিসির দাবি ভাড়ার হার যৌক্তিক। বিষয়টি তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

কমপক্ষে ২০০০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার খ্যাত ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’ তথা এফডিসি চলচ্চিত্র নির্মাণকাজে উৎসবমুখর থাকত। কিন্তু পরবর্তীতে এই সালের মাঝামাঝি থেকে এখানে তেমনভাবে আর ‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন-রোল’- এসব শব্দ শোনা যায় না। মানে চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ এখানে ক্রমান্বয়ে কমছে। এতে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির মূল্যবান সরঞ্জামাদি নষ্টের আশঙ্কায় পড়েছে। অথচ ২০১২ সালের পর ‘এফডিসির আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীনে এখানে অত্যাধুনিক ক্যামেরা, লাইটসহ নানা নির্মাণ সরঞ্জাম আনা হয়েছে। তারপরও কেন এখানে এখন চলচ্চিত্র নির্মাণকাজে খরা চলছে। এর জবাব দিয়েছেন কয়েকজন প্রখ্যাত নির্মাতা। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেছেন, এফডিসিতে শুটিং করতে গেলে খরচ বেশি। এখানে লাইট, প্লেস ভাড়া থেকে সবকিছুই বেশি। অথচ বাইরে শুটিং করলে দেখা গেছে সেখানে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িঘর সবকিছু আছে, ইউনিটের লোকজনও থাকতে পারে। এফডিসিতে তো লোকজন থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, এফডিসি কর্তৃপক্ষ তা করবেও না। এখন যেহেতু সিনেমা হল ও দর্শক কমে গেছে তাই চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয়ও নির্মাতারা কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এফডিসিতে শুটিং করতে গেলে প্রতিটি স্থানের আলাদা ভাড়া দিতে হয়। বাইরে করলে তার প্রযোজন হয় না। এখানে লাইট খরচ আছে। বাইরে রিফ্লেক্টর দিয়ে কাজ করা যায়। এসব কারণে এফডিসিতে কাজ কমে গেছে। এস এ হক অলিক বলেন, প্রথমত. এফডিসির চত্বরে শুটিং করতে গেলে প্রতিটি জায়গার জন্য আলাদা করে ভাড়া গুনতে হয়। একটি ছবির শুটিং তো আর এক জায়গায় হবে না। এত ভাড়া দিয়ে এই দুর্মূল্যের বাজারে বেশি ব্যয় করে কীভাবে ছবি নির্মাণ সম্ভব? সরঞ্জামের বেলায়ও তাই। এ ব্যাপারগুলো এফডিসি কর্তৃপক্ষের সহজ করা উচিত। না হলে কেন এখানে নির্মাতারা আসবেন? এখানে তো যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে। মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, বাইরের যে ক্যামেরা আছে রেড, রেড ড্রাগন, রিফলেক্স- এসব বাইরে থেকে নিয়ে লাগাতার দুই মাস কাজ করলে ২ লাখ টাকার বেশি আসে না। অথচ এফডিসিতে একই সময়ের বিলের পরিমাণ সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাও আবার চক্রবৃদ্ধি হারে বিল হয়। এ জন্য ভয়ে কেউ এফডিসির সেবা নিতে চায় না। আমরা এফডিসি কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি আপনারা প্যাকেজ করে দিন। আপনারা ৩০ দিন বা দেড় মাসের একটি ক্যামেরা, ডাবিং এডিটিং, আরআরসহ যা লাগে সব একবারে প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসুন। বিষয়টি আমরা তথ্যমন্ত্রীকে বারবার বলেছি। মন্ত্রীকে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে বসে এর একটা সুরাহা করতে হবে।

এফডিসিতে যদি পুরো চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ সুলভ মূল্যে প্যাকেজের আওতায় আনা হয় তাহলে অবশ্যই সব নির্মাতা এফডিসিতে কাজ করতে আসবেন। শুটিংয়ের জন্য এফডিসি চত্বর, ফ্লোর সবই দরকার। এফডিসিতে নির্মাতাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হলে সবকিছু প্যাকেজে আনার কোনো বিকল্প নেই। ইকবাল বলেন, বাইরে একটি ফ্লোরে কাজ করলে ৫ হাজার আর এফডিসিতে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। এ সংস্থায় উন্নত মানের সরঞ্জামাদি আছে। কিন্তু উচ্চ ভাড়ার কারণে তা নিতে নির্মাতারা সাহস পান না। আর আগে কখনো এফডিসিতে বিদ্যুৎ যেত না। এখন দিনে ৮-৯ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আমি এখানে কিল হিম ছবির শুটিং করতে গিয়ে এক দিন বিপাকে পড়েছিলাম। সারা দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। অথচ এফডিসিকে পুরো বিল ঠিকই দিতে হয়েছে।

অন্যদিকে এর বিপরীতে এফডিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার দাবি, নির্মাতাদের সব অভিযোগ যথার্থ নয়, আমাদের এখানে সবকিছুর ভাড়া বাইরের থেকে তুলনামূলক কম। একটি শুটিং ফ্লোরের ভাড়া এক শিফটে মাত্র ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর এফডিসির চত্বরে সব জায়গার জন্য একটি মাত্র ভাড়া নেওয়া হয়, পৃথক নয়। তাছাড়া জায়গায় জায়গায় ভাড়া নেওয়া হয় না। সেট নির্মাণ করলে সেটির ভাড়া তো দিতেই হবে। ঝরনা স্পটের ভাড়া আছে এক শিফটে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। ক্যামেরা ১ শিফটে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মাত্র।

এফডিসির চত্বরে প্রথম দুই দিন ২ হাজার ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। তৃতীয় দিনে আর সেট ভাড়া নেওয়া হয় না, শুধু শুটিং ভাড়া নেওয়া হয়। আসল কথা হলো দেশে এখন অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। তাই নির্মাতারা ছবির সুন্দর দৃশ্যের স্বার্থে এফডিসির পরিবর্তে সেখানে চলে যাচ্ছে। আর কোনো পার্টি বাইরে থেকে শুটিং ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিলে তাদের যে আপ্যায়ন করা হয় এই সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেই বাবদ কোনো বাজেট তো নেই। আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো পার্টি পেতে সব সময় এফডিসি থেকে খরচ কম নেয়। আমাদের কথা হলো, এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে আশা করি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে নির্মাতারা এফডিসিতেই ছবির কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর