বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিল্পীর অপেশাদারিত্ব সমাধান কোন পথে

শিল্পীর অপেশাদারিত্ব সমাধান কোন পথে

শিল্পী ও সাংবাদিকরা একে অন্যের পরিপূরক। কিন্তু এই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নানা ইস্যুতে শিল্পীদের বিমাতাসুলভ আচরণ দেখা যায়। শিল্পীদের অপেশাদারিত্ব মনোভাব দেশের মিডিয়ার ওপর থেকে মানুষের আস্থা ও আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। অচিরেই এ সংকট দূরীভূত না হলে শিল্পী ও শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ পান্থ আফজাল

 

উভয়কে দায়িত্ববান হতে হবে

হাবিবা রহমান

[সহকারী অধ্যাপক, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে বলব, দুই পক্ষেরই নিজ নিজ পেশার ক্ষেত্রে দায়িত্ববান হতে হবে। দুই পক্ষকেই কীভাবে প্রশ্ন করা যায় এবং প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায় সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এমন কোনো প্রশ্ন করা যাবে না যাতে প্রশ্নটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যেমন কান চলচ্চিত্র উৎসবে এক সাংবাদিক অভিনেত্রী বাঁধনকে প্রশ্ন করে বসেন ‘আপনি নাকি অমুকের সঙ্গে প্রেম করছেন?’ এটি একটি বিব্রতকর প্রশ্ন। প্রশ্নটি অন্যভাবেও করা যেত। শিল্পীদের বেলায় আমি বলব, যারা নতুন শিল্পী আসছে তারা আসলে কতটুকু শিল্পী হতে পেরেছে তা নিজেদেরই যাচাই করে দেখা উচিত। কারণ এমন নতুন শিল্পীরা অনেক সময় সাংবাদিকদের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে। সাংবাদিক ছাড়াও সহশিল্পী, নির্মাতা বা অন্যদের সঙ্গেও এরা অযৌক্তিকভাবে বাজে আচরণ করে থাকে। উভয়পক্ষকেই পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহনশীল হতে বলব।

 

সচেতন ও সহনশীল হতে হবে

অনুপম হায়াৎ

[চলচ্চিত্র গবেষক ও সাংবাদিক]

বর্তমানে মিডিয়ায় যেসব অভিনয়শিল্পী আসছে তাদের মধ্যে জ্ঞানগরিমা ও সহনশীলতার প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। এ কারণে শিল্পী হয়ে ওঠার আগেই তাদের মধ্যে এমন অহমিকা জন্মায় যে, তারা কাউকে পাত্তা দিতে চায় না। তাদের ভাবখানা এমন যে, ‘আমি ওমুক, তুমি কোন হনুরে’। নব্য শিল্পীদের এমন আচরণের কারণেই প্রায়শই সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দেয়। আবার বর্তমানে ইউটিউব ও নামসর্বস্ব কিছু অনলাইন পোর্টালে সাংবাদিক নামধারী কিছু ছেলে-মেয়ে আসছে যারা সাংবাদিকতার ‘স’ও জানে না। তারা শিল্পীদের সঙ্গে এমন অপেশাদার আচরণ করছে, যাতে শিল্পীরা ক্ষুব্ধ হচ্ছে এবং এর দুর্নাম সব সাংবাদিকের গায়ে কালিমা লেপন করছে। এ জন্যই বলব উভয়ক্ষেত্রে নামধারী নয়, যথাযথ পেশাদারিত্ব থাকতে হবে।

 

এমন অবস্থা কাম্য নয়

ববিতা [অভিনেত্রী ও নির্মাতা]

শোবিজ জগতে আগে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা দেখিনি। নিজ নিজ দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করেছে সবাই। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা ছিল।

বর্তমান সময়ে এর যথেষ্ট অভাব দেখছি। এমন অবস্থা তৈরির জন্য অপেশাদারিত্বকেই দায়ী করব আমি। কারণ সব জায়গায়ই দেখছি না জেনে, না বুঝে যে কোনো অজ্ঞ লোক ঢুকে পড়ছে। ফলশ্রুতিতে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ। যা কারও কাম্য নয়। আমি সবাইকে পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান ও সহনশীল হতে বলব।

 

সম্পর্ক হতে হবে অম্ল-মধুর

শহীদুজ্জামান সেলিম [অভিনয়তারকা]

শিল্পী তৈরির পেছনে সাংবাদিকদের পৃষ্ঠপোষকতা বা সাপোর্ট খুবই দরকার। শিল্পীদের সাংবাদিক সম্পর্কে জেনে, সংযত হয়ে উত্তর দেওয়া উচিত। আর একজন শিল্পী সম্পর্কে কোনো সাংবাদিক যদি জেনে প্রশ্ন করে, তবে শিল্পীর মনে এক আনন্দের শিহরণ জাগে। তবে অবান্তর প্রশ্ন একজন শিল্পীকে যেমন বিব্রত করে তেমনি শিল্পীদের অশোভনীয় আচরণ একজন দায়িত্বরত সাংবাদিককেও বিব্রত করে। সম্পর্ক হতে হবে অম্ল-মধুর।

 

পেশাদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ

এস এ হক অলিক

সাবেক সভাপতি [ডিরেক্টরস গিল্ড]

প্রথমেই বলতে চাই পেশাদারিত্বের গুরুত্বটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে যেই পেশায়ই থাকি না কেন, আমরা যদি আমাদের পেশার মর্যাদা রাখতে না পারি তাহলে সাধারণ মানুষের মনে সংশ্লিষ্ট সেক্টর ও ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে এবং আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা যাঁরা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। তাই সব পক্ষের পেশার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কারণ প্রশ্ন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।

 

পারস্পরিক সম্মান বোধ নেই

ডলি জহুর [অভিনেত্রী]

শিল্পীরা হালকা হয়ে গেছি। নতুন যারা এসেছে তারা সাংবাদিক কেন, কাউকেই সম্মান করতে শিখেনি। সাংবাদিক সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বোধ নেই। কিছু সাংবাদিক আছে যারা শিল্পী সম্পর্কে জেনে প্রশ্ন করে না। এমনও অনেক শিল্পী আছেন, যারা তার অনুগত সাংবাদিকদের ফোন করে তাদের কাজের ফিরিস্তি দিয়ে নিউজ করতে অনুরোধ করেন। শিল্পীদেরও সচেতন হতে হবে কথায় ও কাজে। মিডিয়ার সব ব্যাপার গুবলেট হয়ে গেছে। সেই পরিবেশ নেই সাংবাদিক-শিল্পীদের মধ্যে।

 

কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা দরকার

আহসান হাবীব নাসিম

সভাপতি (অভিনয়শিল্পী সংঘ)

আমাদের সবাইকে সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীদের, আমাদের গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার ক্ষেত্রে ভীষণ সচেতন থাকা দরকার। যাতে ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমাদের কথায় কষ্ট না পান। অসম্মানিত না হন। অভিনয়শিল্পীদের ভক্ত ও অনুসারীরাও যেন তার প্রিয় শিল্পীর কোনো আচরণে আহত না হন। এবং অশ্রদ্ধা না করেন।

 

তারা সঠিক শিল্পী হয়ে ওঠেনি

রোজী সিদ্দিকী [অভিনেত্রী]

শিল্পী ও সাংবাদিক তো একে অন্যের পরিপূরক। কেউ যদি পরিচয় দেয় আমি সাংবাদিক, শিল্পী হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা উচিত। দুজনের কথা বলাটাও শোভনীয় হওয়া উচিত। তবে যখন দেখি সাংবাদিক বা শিল্পীর জানার বিষয়টা বা প্রফেশনার দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ, তখন খুবই বেদনা অনুভব করি! মনে করি, শিল্পবোধের ধারক কিন্তু আপনারা। কিছু বেনামি অভিনয়শিল্পী মিডিয়াকে বেছে নেয় সেলিব্রেটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।

সর্বশেষ খবর