বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এ কী হাল এফডিসির

বেতন-ভাতা বন্ধ, শুটিং নেই, বছরের পর বছর লোকসান

আলাউদ্দীন মাজিদ

এ কী হাল এফডিসির

এভাবে কর্মশূন্য হয়ে পড়ে আছে এফডিসি

গত চার-পাঁচ বছরে অবসরে যাওয়া এফডিসির ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের গ্রাচ্যুয়িটি বাবদ পাওনা সাড়ে ১২ কোটি টাকা এখনো বুঝে পাননি। তাঁরা কোনো পেনশনও পাচ্ছেন না বলে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনের পর দিন উপোস করছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মাসে তাঁদের সন্তানদের স্কুলের বেতন ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।  উপোস আর হতাশায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে এ পর্যন্ত আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।

দুই মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ, চলতি মাস শেষের পথে, এ মাসের বেতনও অনিশ্চিত। অবসরগ্রহণকারীরাও বছরের পর বছর পাচ্ছেন না প্রাপ্য, তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এফডিসির এমন করুণ অবস্থা এখন। এর মূল কারণ সংস্থাটির আয় কমে যাওয়া। যেমন- গত তিন মাসে এফডিসিতে কাজ হয়েছে মাত্র দুটি ছবির। এফডিসির একটি সূত্র জানায়, সংস্থাটিতে বর্তমানে স্টাফ রয়েছেন ২১৫ জন। প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ তাঁদের মাসিক বেতনের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ২ লাখ টাকা। তাছাড়া বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচসহ এই সংস্থার মাসিক ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। অথচ এর বিপরীতে চলচ্চিত্রের কাজ থেকে আয় মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। এই আয় কমে যাওয়ায়ই এফডিসি পড়েছে চরম সংকটে। এমন চিত্র কমপক্ষে ২০১০ সাল থেকে। অর্থের অভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে বিদ্যুৎ ও পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ এলিভেটর এক্সপ্রেসের জন্য এফডিসির সামনের রাস্তাটি অধিগ্রহণ বাবদ এফডিসিকে সরকার যে ৬ কোটি টাকা প্রদান করে তা এফডিআর করে রাখা হয় এবং তা থেকে লোন নিয়ে বেতন পরিশোধ চলছিল। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙিয়ে বেতন প্রদান ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। একসময় এফডিআর শেষ হয়ে গেলে সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল। এখন সরকারি থোক বরাদ্দে চলে এফডিসি। কিন্তু এই বরাদ্দের টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না বলে এফডিসির হাল এখন বেহাল হয়ে পড়েছে। সূত্র মতে, গত চার-পাঁচ বছরে অবসরে যাওয়া এফডিসির ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের গ্রাচুয়িটি বাবদ পাওনা সাড়ে ১২ কোটি টাকা এখনো বুঝে পায়নি। তাঁরা কোনো পেনশনও পাচ্ছেন না বলে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনের পর দিন উপোস করছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মাসে তাঁদের সন্তানদের স্কুলের বেতন ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। উপোস আর হতাশায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে এ পর্যন্ত আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। বাকিদের বেশির ভাগের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানায় এদের অনেকে। এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায় সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বাণিজ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এফডিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির আয়ের প্রধান উৎস ছিল নেগেটিভ বিক্রি ও ছবি প্রিন্ট করা। এ খাত থেকে এফডিসির মাসিক আয় ছিল ব্যয়ের বিপরীতে প্রায় ৭০ ভাগ। এর বাইরে শুটিং, ডাবিং আর এডিটিংসহ অন্যান্য কাজে যে আয় আসত তা থেকে ব্যয় নির্বাহের পর বেশি পরিমাণে অর্থ বেঁচে যেত। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছবি নির্মাণ শুরু হলে এফডিসির প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় থাকা জহির রায়হান কালার ল্যাবটি ২০১০ সালের পর থেকে কর্মশূন্য ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে এফডিসির প্রধান আয়ের উৎস। এদিকে, এফডিসি বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে বকেয়া পাওনা হিসেবে পাবে আনুমানিক ২৩ কোটি টাকারও বেশি। এই টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু চেক ও চুক্তিভঙ্গের মামলা হয়েছে বেশ কটি প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধে। আরও মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় এফডিসি সূত্র। প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার কাছে ১৯৮৪ সাল থেকে বকেয়ায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সুবিধা ও পি ফিল্ম প্রথায় চলচ্চিত্র নির্মাণ বাবদ এফডিসির পাওনা রয়েছে এই টাকা। অন্যদিকে বর্তমানে এফডিসিতে অবস্থিত ছয়টি চলচ্চিত্র সমিতি যেমন- প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী, চিত্রাগ্রহক, সিডাব ও উৎপাদন ব্যবস্থাপক সমিতির কাছ থেকে ঘর ভাড়ার টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকায় এফডিসি এসব সমিতির কাছ থেকে আনুমানিক ২০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তাছাড়া সমিতিগুলো বিদ্যুৎ ও পানির বিলও বকেয়া রেখেছে বিশাল অঙ্কের। প্রযোজনা সংস্থা ও সমিতির বকেয়া টাকা ফেরত পেলে এ মুহূর্তে এফডিসি এই বেহালদশা থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পেত বছরের পর বছর লোকসান গোনা এই সংস্থাটি। জানান এফডিসি কর্তৃপক্ষ।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর