শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাইবার বুলিংয়ের শিকার তারকারা

সাইবার বুলিংয়ের শিকার তারকারা

বিশ্বে প্রায় ৫৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। তার মধ্যে ৬০ শতাংশই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। পাবলিক ফিগার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমের তারকাশিল্পী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী, শিশুশিল্পী এমনকি তাদের পরিবারের সদস্য পর্যন্ত বাদ পড়ছে না এই বুলিং থেকে। এ যাবৎকালে সাইবার বুলিংয়ের শিকার তারকাদের নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন- পান্থ আফজাল

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সাইবার বুলিং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তারকাশিল্পীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব থেকে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। তাদের প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে নানানরকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন কতিপয় নেটিজেন। বিষয়টি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে অনেক তারকারই থানায় অভিযোগের নজির রয়েছে। যদিও অভিনয়শিল্পীদের আইনি সহায়তা, পরামর্শ, সাইবার বুলিং ও অপপ্রচার প্রতিরোধে লিগ্যাল উইংস গঠন করা হয়েছে। তবুও থামছে না সাইবার বুলিং। সাম্প্রতিক সময়ে শিশুতারকা সিমরিন লুবাবা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। বুলিং প্রসঙ্গে লুবাবা বলেন, ‘আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি, আমাকে সাইবার জগতে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাকে নিয়ে অনেক ভিডিও করা হয়েছে। এ ভিডিওগুলোর মধ্যে একটা খুবই আপত্তিকর ছিল। যারা এমন কনটেন্ট বানাচ্ছেন, আমাকে বুলিং ও মিম বানাচ্ছেন, আমি তাদের অনুরোধ করব তারা যেন এ ধরনের কাজ না করেন।’ লুবাবার অভিযোগের পর অভিযুক্তকে আটক করা হয়। তবে তাকে ক্ষমাও করে দেন শিশুশিল্পী লুবাবা। এদিকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন অভিনয়শিল্পী তানজিন তিশা। যদিও উল্টো তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেই সাংবাদিক ও সাংবাদিক মহলকে ‘উড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকির অডিও রেকর্ড সবার সামনে আসে। তিশা যেসব কথা বলেছেন, তা অপেশাদারি আচরণ বলে মনে করেছেন সাংবাদিকরা। এমন আচরণের প্রতিবাদে বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও রেডিওতে কর্মরত বিনোদন বিভাগের সংবাদকর্মীরা ঢাকার কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনও করেন।

বাংলাদেশে সাইবার বুলিং কতটা প্রকট তা প্রভা, ভাবনা, তাহসান-মিথিলা, শবনম ফারিয়া, শখ, দিঘী, মোশাররফ করিম কিম্বা চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া আগের ঘটনা পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। কোনো তারকাই রেহাই পাচ্ছেন না এই সাইবার বুলিং থেকে। এর আগে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমকে একটি চ্যানেলে নারীদের পর্দা নিয়ে মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে হেনস্তা করা হয়। এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তার ব্যক্তিগত জীবন, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-নুসরাত ইমরোজ তিশার দাম্পত্যজীবন নিয়েও ফেসবুকে অনেকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিল। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার করোনা আক্রান্তের খবরেও একসময় ফেসবুকে জড়ো হয়েছিল আজেবাজে মন্তব্য। রাফিয়াদ রশীদ মিথিলা ব্যাপক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। মিথিলা বলেন, ‘সাইবার বুলিং বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমালোচনাগুলো যে দেখি না বা পড়ি না, তা কিন্তু নয়। আমি আমার জায়গায় সঠিক। কাউকে জবাবদিহি করতে হবে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি আমার সঠিক কাজটাই করে যাচ্ছি। কারও সমালোচনায় কান দিচ্ছি না।’ আগের ঘটনা। মা দিবসে চঞ্চল চৌধুরীর পোস্ট করা তাঁর মায়ের ছবির নিচে একেকজন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে। এতে চঞ্চল চৌধুরী ক্ষুব্ধ হন। তারপর প্রতিবাদ হিসেবে প্রোফাইল পিকচার বদলিয়ে হ্যাশট্যাগে লেখেন- ‘চঞ্চল চৌধুরী ইজ আওয়ার ব্রাদার’, ‘তোমার মা আমার মা’, ‘আমার মা, তোমার মা’, ‘স্টপ সাইবার বুলিং’, ‘হোক প্রতিবাদ’। সে সময় আক্রমণের শিকার হন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার, উপস্থাপক ও অভিনয়শিল্পী মিশু চৌধুরী। নায়িকা পরীমণিও কম বুলিংয়ের শিকার হয়নি। অভিনেত্রী দিঘী তার টিকটক ইস্যু, কাজ ও শারীরিক গঠন এবং ওজন নিয়ে প্রায় সময়ই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন এখনো। অপু বিশ্বাস সাইবার হয়রানি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কিন্তু আলোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমাদের সবাই পছন্দ করেন না। তাই সমালোচনা কিংবা বকাঝকা সহ্য করার মতো মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে। এখন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা। তাই সবকিছু মেনে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’ নিয়মিত কাজ করেও বিভিন্ন ইস্যুতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন শবনম বুবলী। সাইবার বুলিং নিয়ে জয়া আহসান বলেন, ‘যখন বিদেশে কাজ করতে যান এবং ওই দেশেরই ভক্তরা যখন বলেন, আপনাদের দেশেই আপনার ভক্তরা সম্মান দিতে প্রস্তুত নয়, আপনার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল দেখেই বুঝি। খারাপ লাগাটা এখানেই। তবে সব খারাপ লাগা এড়িয়ে গিয়েই কাজ করছি এবং করে যাব।’ এর আগে অভিনেত্রী ভাবনা নিজের মা ও বোনের সঙ্গে কেক কাটার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলে নেতিবাচক মন্তব্য আসে একের পর এক। ভাবনা বলেন, ‘আমার হাতা কাটা ব্লাউজ নিয়ে তাদের কথা। আমার মা কেন টিপ পরল। আমার মা হিন্দু। আমার মা হিন্দু হোক, আর মুসলিম হোক, তবে সে মানুষ। আমার মায়ের ওড়না দেখা যাচ্ছে না কেন?। এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করা জরুরি।’ সাইবার বুলিং নিয়ে মেহজাবীন বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে সাইবার বুলিং হচ্ছে। শোবিজের মানুষ শিকার হচ্ছে বেশি। সাইবার বুলিং প্রতিহত করতে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে।’ এর আগে কপালে টিপ পরায় এক নারীকে হেনস্তার প্রতিবাদে কপালে টিপ পরে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করলে অভিনেতা সাজু খাদেম নিজেই বুলিংয়ের শিকার হন। সাজু খাদেম বলেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলে আর কী হবে! প্রতিবাদ করার সময়ও আমাদের বুলিংয়ের শিকার হতে হয়।’ সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সরব মডেল, অভিনেত্রী, উপস্থাপক পিয়া জান্নাতুল। তিনি জানান, ‘এখনই উপযুক্ত সময় এসব বন্ধ করার। যারা সাইবার বুলিং করেন তাদের উচিত এসব বাদ দিয়ে নিজের জীবনটাকে উন্নত করার চেষ্টা করা।’ কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিম জানান, ‘কোনো নেতিবাচক খবর বা মন্তব্য শেয়ার করি না। এগুলো শেয়ারের ফলে বুলিংকারীরা উৎসাহ পায়। এখন তো অবশ্য মেয়েদের পাশাপাশি অনেক ছেলেরাও সাইবার বুলিংয়ের শিকার।’

বাস্তবতা হচ্ছে, এই তারকারা সমাজের অন্য আর সব মানুষজনের মতোই। তাদের মানসিক সক্ষমতা সমাজের অন্য আর ১০ জনের চেয়ে আলাদা হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। যে কোনো সুস্থ শিল্পী এমনকি সুস্থ মানুষকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দেওয়ার জন্য এই সাইবার বুলিংই যথেষ্ট কারণ। শুধু তাই নয়, মানসিকভাবে শক্তিশালী না হতে পারলে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানালেন তারকাদের কেউ কেউ। তবে আশার কথা হলো, ইদানীং সাইবার বুলিং নিয়ে তারকাদের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি আমলে নেওয়া হচ্ছে। আটকও করা হচ্ছে অভিযুক্তদের।

সর্বশেষ খবর