শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিয়ের ৫০ বছর

অমিতকে পাত্তা দিতেন না জয়া

আলাউদ্দীন মাজিদ

অমিতকে পাত্তা দিতেন না জয়া

এখন ২০২৩ সাল। ঠিক ৫০ বছর আগে মানে ১৯৭৩ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন ও গুড্ডি গার্ল জয়া ভাদুড়ি। আর দিনটি উপলক্ষে চলতি বছর বলিউডের সব তারকা ও অনুরাগীর শুভেচ্ছায় ভেসেছে বিগ-বির সোশ্যাল হ্যান্ডেল। তিনি নিজেও বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সামনে এনেছেন তাঁদের বিয়ের অজানা গল্প। জানিয়েছেন, বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন যদি হুকুম না দিতেন, তাহলে নাকি জয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়েই হতো না। অমিতাভ-জয়ার বিয়ের গল্পটা এমন- সালটা ১৯৭১। পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ সুপারহিট। নায়ক-নায়িকা অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। এরপর ১৯৭৩ সালে পরিচালক প্রকাশ মেহেরার ‘জঞ্জির’ও ব্লকবাস্টার হিট। সেখানেও জুটি অমিতাভ-জয়া। মাঝের দুটো বছর অনেকটা বদলে দিয়েছে তাঁদের পর্দা রসায়ন। রিল রোম্যান্স ধীরে ধীরে পাখা মেলেছে বাস্তবেও। উভয়ের ‘গুড্ডি’র সেটের ভালো লাগা ততদিনে গভীর ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। তখন রীতিমতো ‘বম্বে’তে ফিসফিস, কানাকানি শুরু হয়ে গেছে অমিত-জয়ার গোপন প্রেম নিয়ে। অমিতাভ বচ্চনের বাবা কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের কানে হালকা খবর পৌঁছলেও কতটা গাঢ় হয়েছে ছেলে আর হবু বউমার রসায়ন, তখনো তিনি জানেন না। ‘জঞ্জির’ প্রথমে হিট, তারপর সুপারহিট। তখনকার বেশ কিছু ছবির রেকর্ড ভেঙে ব্লকবাস্টার তকমা ছুঁইছুঁই ছবিটির। এর তো একটা সেলিব্রেশন চাই! সঙ্গে রয়েছে অমিত-জয়ার প্রেমের দুই বছর পূর্তি। সবমিলিয়ে হাওয়ায় উড়ছেন এই প্রেমিক যুগল। গোপনে তাঁরা ঠিক করে ফেলেছেন, দুই পর্ব মিলিয়ে জমজমাট সেলিব্রেশন করবেন। তবে ভারতে নয়, এই চনমনে প্রেমিক-প্রেমিকা উড়ে যাবেন লন্ডনে। সেই খবর কানে পৌঁছাল হরিবংশ রাইয়ের, ছেলে লন্ডনে উড়ে যাওয়ার আগের দিন। সত্যি যাচাই করতে তিনি ডেকে পাঠালেন অমিতকে। স্পষ্ট করে জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাচ্ছ? কাকে সঙ্গে নিয়ে?’ বাবাকে সেদিন সত্যি উত্তর দিয়েছিলেন অমিত। বলেছিলেন, জয়া আর তিনি যাচ্ছেন। শোনার পরই হরিবংশ রাইয়ের হুকুম, ‘লন্ডন সেলিব্রেশন পরে, আগে বিয়ে কর। বিয়ে না করে এভাবে সেলিব্রেশন আমি মেনে নেব না।’ হরিবংশ হুকুম দিয়ে খালাস। কিন্তু এক রাতের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা হয় কী করে? নিরুপায় অমিত না ফেলতে পারেন বাবার নির্দেশ না সরাতে পারেন জয়ার আকর্ষণ। ফলে তিনি ছুটলেন জয়াদের বাড়ি। রাজি করালেন তাঁর সাংবাদিক-লেখক বাবা তরুণ ভাদুড়ি ও মা ইন্দিরা ভাদুড়িকে। তাঁদের মত নিয়ে ১৯৭৩ সালের ৩ জুন রাতারাতি বিয়ে সেরেছিলেন অমিত-জয়া। সেই রাতেই উড়ে গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমায় লন্ডনে। অনেকেই বলেন, বাবার কড়া হুকুম না থাকলে গাঢ় প্রেম থাকলেও বিয়ে হতো কি না সন্দেহ। তবে এই সন্দেহের মূলে জোরালো কোনো যুক্ত ছিল না। মানে সন্দেহটা অমূলক বটে। কারণ অমিত আর জয়ার প্রেম ছিল প্রগাঢ়। এই বিয়ে নিয়ে আরও একটি মজার গল্প আছে। সম্পর্কের শুরুতে জয়া বলিউডের মস্ত তারকা। অমিতাভ তখন এদিক-সেদিক জুতা ঘষাচ্ছেন। এমন অসম প্রেম নিয়ে নাকি ভয়ানক আপত্তি ছিল সে সময়কার সুপারস্টার রাজেশ খান্নার। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাবুর্চি’ ছবির সেটে ঘনঘন দেখা যাচ্ছিল অমিতকে। তাঁকে দেখলেই নাকি রেগে লাল হতেন রাজেশ। তার আগে অবশ্য জয়াও পাত্তা দিতেন না অমিতকে। কিন্তু হরিবংশ রাই বচ্চনের ছেলে জানার পর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। তাই তাঁদের প্রেম যখন বিয়ে পর্যন্ত গড়াল, ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন রাজেশ। আর এক বিপরীত ছবি বলিউড দেখেছিল হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। কাজের প্রথম দিন থেকেই তাঁর সঙ্গে ভীষণ ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছিল জয়ার। জয়া তাঁকে বাবার সম্মান দিতেন। কিন্তু লজ্জায় অমিতের সঙ্গে প্রেমের কোনো কথাই জানাতে পারেননি। এদিকে জয়ার মাধ্যমে পরিচালকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অমিতের। তাই বিয়ে ঠিক হতেই সবার আগে তিনি প্রিয় হৃষিদাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, বরপক্ষের হয়ে বিয়েতে তাঁকে থাকতে হবে। প্রবীণ পরিচালক এককথায় রাজি। অমিতের পর জয়াও কথা বলেন হৃষিকেশের সঙ্গে। অনুরোধ করেন, কন্যাদান তাঁকেই করতে হবে। কারণ, তাঁর কাছে পরিচালক পিতৃসম। কিন্তু জয়ার প্রস্তাব নাকি নাকচ করে দিয়েছিলেন হৃষিকেশ। জানিয়েছিলেন, আগেই বরকর্তা হিসেবে একই দিনে একই সময়ে তাঁকে আরেকটি বিয়েতে উপস্থিত থাকতে হবে। শুনেই কেঁদে ফেলেন জয়া! বলেন, ‘আমার ভরসা ছিল, আপনি কন্যাদান করবেন। সেই ভরসায়ই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। সেই আপনিই থাকবেন না! কী করে বিয়ে হবে আমার?’ তখন হাসতে হাসতে মাথায় হাত বুলিয়ে হৃষিকেশ জয়াকে আশ্বস্ত করেন, ‘আরে পাগলি! তোর বিয়েতে আমি থাকব না, হয় নাকি? আমি থাকব বরপক্ষের হয়ে। কারণ, অমিত আমাকে আগে বুক করেছে।’ ব্যস দুজনের ছাদনাতলায় বসার সব আয়োজন পাকা। মনের ঘরে উচ্ছ্বাস আর একে অপরকে নিবিড় করে পাওয়ার আকুলতায় দ্রুত সাতপাকে ঘুড়ে প্রেমিকযুগল থেকে স্বামী-স্ত্রীর বাঁধনে নিজেদের বেঁধে নিলেন অমিতাভ বচ্চন-জয়া ভাদুড়ি। তারপর ভাদুড়ি টাইটেল ঝেড়ে ফেলে জয়া বচ্চন হয়ে ৫০ বছর ধরে অমিতাভের ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন জয়া।

সর্বশেষ খবর