শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডিপফেকের শিকার তারকারা

ডিপফেকের শিকার তারকারা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এখন নতুন ত্রাস সেলিব্রেটিদের ডিপফেক ছবি ও ভিডিও। গত নভেম্বর মাস থেকে এ যাবৎকালে ডিপফেক ভিডিওর শিকার হন বলিউড তারকা রাশমিকা, ক্যাটরিনা, কাজল, আলিয়া এবং সর্বশেষ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে ভিডিও নয়, প্রিয়াঙ্কার ভুয়া অডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ে ডিপফেকের শিকার তারকাদের নিয়ে আজকের প্রতিবেদন-

ইন্টারনেটের যুগে মাঝেমধ্যেই হঠাৎ কিছু জোয়ার আসে। সেই ধারাবাহিকতায় চলমান এক জোয়ারের নাম ডিপফেক। সম্প্রতি ভুয়া ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ডিপফেক মূলত এমন প্রযুক্তি যার সাহায্যে কারও ছবি বা ভিডিও এমনভাবে এডিট করে দেওয়া যাতে আপাতদৃষ্টিতে আসল-নকলের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়।

‘ডিপফেক’-এর বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে। একটি প্রোফাইল থেকে সমাজমাধ্যমে গ্যাল গ্যাডট, টেলর সুইফ্ট, স্কারলেট জনসনের মতো হলি তারকাদের মুখ বসানো নকল ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি ভারতের বাজারেও ছেয়ে গেছে ‘ডিপফেক’। শুধু নায়িকাদের নকল ছবি এবং ভিডিও তৈরি করে নয়, সমাজের সর্বস্তরে সব রকম অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এ প্রযুক্তি। ডিপফেকের অপব্যবহার বাড়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইনফ্লুয়েন্সার, মডেল, ক্রীড়াবিদসহ অনেকেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

গত নভেম্বর মাসে সমাজমাধ্যমের পাতায় ছড়িয়ে পড়েছিল বলিউড অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার একটি ডিপফেক ভিডিও। অন্য এক মহিলার ভিডিওতে বসানো হয়েছিল রাশমিকার মুখ। নেট মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছিল সেই আপত্তিকর ভিডিও। ডিপফেকের শিকার হয়ে রাশমিকা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিপফেক ভিডিও ছড়ানোর প্রবণতা কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এটাকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছি, যেটা মোটেও উচিত নয়। এটা সত্যিই ভয়ানক। এটা নিয়ে কথা বলা কতটা জরুরি।’ রাশমিকার ঘটনার কয়েক দিন পরেই ডিপফেক ভিডিওর কোপে পড়েন অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ ও কাজল। ‘টাইগার ৩’ ছবিতে স্নানপোশাকে ক্যাটের ছবিকে বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সমাজমাধ্যমে। অন্যদিকে সমাজমাধ্যমের পাতায় ভাইরাল হয় এমন একটি ভুয়া ভিডিও, যাতে দেখা যায় ক্যামেরার সামনেই নিজের পোশাক খুলছেন কাজল। এরপরই ডিপফেকের শিকার হন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। সেই ভিডিওর একটি খোলামেলা পোশাকে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় তাকে। ভিডিও থেকেই স্পষ্ট, ওই মহিলা আদৌ আলিয়া নন। আধুনিক প্রযুক্তির কারসাজির সাহায্যে আলিয়ার মুখ বসানো হয়েছিল ওই ভিডিওতে। সর্বশেষ ডিপফেকের তালিকায় আরও এক নায়িকা এসে পড়ে! তিনি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে এবার আর ভিডিও নয়, নায়িকার ভুয়া অডিও ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমের পাতায়। ছড়িয়ে পড়া সেই অডিওতে যার কণ্ঠ শোনা যায়, সেটা প্রিয়াঙ্কার কণ্ঠ বলে মনে হলেও আদতে তা প্রযুক্তির কারসাজি। প্রিয়াঙ্কার একটি ভিডিও বেছে নিয়ে তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় সেই ভুয়া অডিও। সব মিলিয়ে তৈরি করা হয় এমন একটি ক্লিপিং, যাতে মনে হয়েছিল এক সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন করছেন প্রিয়াঙ্কা। এমনকি ওই ক্লিপিংয়ে নিজের বার্ষিক আয়ের হদিসও দিয়েছেন এই আন্তর্জাতিক তারকা। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ওই ক্লিপিং দেখে নেটাগরিকদের অনেকের দাবি, ডিপফেকের কোপে এভাবে প্রভাবিত হতে পারে বিনোদন-সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবসাও। তবে শুধু যে বলিউড-হলিউডের তারকারাই এ আতঙ্কে তা নয়, বাংলাদেশি অনেক তারকারাও রয়েছেন। এতটা সূক্ষ্মভাবে এসব ডিপফেক ভিডিও ও ছবি তৈরি করা হচ্ছে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসল-নকলের পার্থক্য করা কঠিন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের তারকাদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা গেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তারকার এ ধরনের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন পরীমণি, নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, তানজিন তিশা, ভাবনা, সাফা কবিরসহ আরও কয়েকজনের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাসতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় চরম আতঙ্কে অন্য শিল্পীরাও। বিষয়টির মৌলিক এবং স্থায়ী সুরাহা করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি উঠেছে সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের মধ্যে। এদিকে ডিপফেক প্রযুক্তি অসৎ কাজে বেশি ব্যবহৃত হলেও এ প্রযুক্তির বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। বিশেষত বিনোদনশিল্পে এ প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেশি সহায়কের ভূমিকা পালন করে। যেমন- ডাবিংয়ের মান উন্নত করতে, মৃত অভিনেতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে কিংবা জাদুঘর বা গ্যালারিকে প্রাণবন্ত করতে এর জুড়ি মেলা ভার। যেমন ‘স্টার ওয়্যারস’ খ্যাত অভিনেত্রী ক্যারি ফিশার। ২০১৬ সালে এই চলচ্চিত্র সিরিজের একটি প্রিকুয়েল ‘রৌগ ওয়ান’ মুক্তি পায়। এ সিনেমার এক দৃশ্যে সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র প্রিন্সেস লিয়ার যুবতী সময়ের কিছু দৃশ্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ক্যারি ফিশার তখন ষাট বছরে পা দিয়েছেন। ফলে তার কম বয়সী সংস্করণ তৈরি করতে ডিপফেক প্রযুক্তির আশ্রয় নেওয়া হয়। যদিও ডিপফেক প্রযুক্তি তৈরি করার পেছনে মূল নির্মাতাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও এটি মানুষকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে পারছে না। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপফেকের ফলাফল খুবই ভয়ংকর হয়েছে এবং সামনে আরও ভয়ংকর হবে বিশেষ করে গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সেলিব্রেটিদের জন্য এটি বিপর্যয়কর পরিণতি নিয়ে আসবে। ডিপফেকের প্রভাবে শুধু ক্যারিয়ার নয়, জীবনও নষ্ট করা সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েও যেতে পারে। এ প্রযুক্তি দিয়ে যেমন একজন ব্যক্তির খ্যাতি ক্ষুণ্ন করা সম্ভব, তেমনি এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাউকে দিয়ে এমন কিছু বলাতে বা করাতে পারে যার ফলাফল বিশ্বব্যাপী হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর