রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিনেমা হল মালিকের অভিযোগ

ছবি আছে মান নেই

রমজানের আগ পর্যন্ত ১৮ ছবি মুক্তির জন্য এন্ট্রি

আলাউদ্দীন মাজিদ

ছবি আছে মান নেই

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা ছটকু আহমেদ নির্মাণ করেছেন ‘আহারে জীবন’ শিরোনামের একটি ছবি। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ ছবিটির নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করে তিনি মুক্তির তারিখ নিতে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতিতে আবেদন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার যান। কারণ এ সমিতিই ছবি মুক্তির তারিখ দেয়। এ নির্মাতা চেয়েছেন জাতীয় নির্বাচনের পরে জানুয়ারিতে ছবিটি মুক্তি দিতে। কারণ ছবি নির্মাণ করার পর মুক্তি দিতে দেরি হলে সেই ছবির ম্যারিট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রদর্শক ও দর্শক কারোরই ছবিটির প্রতি আর কোনো আগ্রহ থাকে না। ছটকু আহমেদ আবেদন নিয়ে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিতে যাওয়ার পর তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় রমজানের আগ পর্যন্ত মুক্তির জন্য ছবি এন্ট্রি শেষ। ঈদের পর ছাড়া তাঁর ছবিটি তারা আর নিতে পারবে না। এতে চরম হতাশ হয়ে ছটকু আহমেদ বলেন, ‘একটি ভালো কাজ করতে গিয়ে যদি প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাহলে কোনো ভালো ছবি নির্মাণ হবে না, নির্মাতারাও মানসম্মত ছবি নির্মাণে আগ্রহ হারাবে। আর ভালো ছবি না পেলে দর্শকরা সিনেমা হলবিমুখ হবে, এতে সিনেমা হল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

একটি ভালো কাজ করতে গিয়ে যদি প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাহলে কোনো ভালো ছবি নির্মাণ হবে না, নির্মাতারাও মানসম্মত ছবি নির্মাণে আগ্রহ হারাবেন। আর ভালো ছবি না পেলে দর্শকরা সিনেমা হলবিমুখ হবে। এতে সিনেমা হল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ছটকু আহমেদ

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, চলতি বছরে ডিসেম্বরে আর কোনো ছবি মুক্তি পাচ্ছে না। ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে রমজানের আগে পয়লা মার্চ পর্যন্ত ১৮টি ছবি মুক্তির জন্য সমিতিতে এন্ট্রি হয়ে গেছে। ১২ মার্চ থেকে যেহেতু রমজান শুরু তাই রমজানের আগে আর কোনো ছবি মুক্তির জন্য এন্ট্রি করা সম্ভব নয়। ঈদ এবং ঈদের পর মুক্তির জন্য এন্ট্রি করা যেতে পারে। সমিতিতে খোঁজ নিয়ে সেই ১৮ ছবির যে তালিকা পাওয়া গেছে তাতে খোদ সিনেমা হল মালিকরাই হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ এসব ছবি কারা নির্মাণ করেছে, এতে কে অভিনয় করেছে প্রায় সবই অপরিচিত। ছবিগুলো দর্শক দেখবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। দর্শক যদি কোনো ছবি না দেখে তাহলে সিনেমা হল মালিকরা ট্যাক্স, বেতন ও মেনটেইন্যান্স খরচ চালাতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। এদিকে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির কর্মকর্তা সৌমেন বাবু বলেন, এমন অনেক ছবিই সমিতিতে এন্ট্রি হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় প্রদর্শকরা এসব ছবি নিতে চায় না, প্রযোজকরাও এ ধরনের ছবিগুলো আর মুক্তি দিতে পারে না। এ অবস্থায় প্রদর্শক ও নির্মাতাদের প্রশ্ন- ‘তাহলে কোনো মানহীন ছবি এন্ট্রি করে ভালো ছবিকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। প্রযোজক সমিতিতে এন্ট্রিকৃত ১৮ ছবি ও এগুলোর মুক্তির তারিখ হলো- ৫ জানুয়ারি শূন্য হৃদয়, ১২ জানুয়ারি- দুনিয়া ও নাও, ১৯ জানুয়ারি শেষ বাজি ও কাগজের বউ, ২৬ জানুয়ারি ছায়াবৃক্ষ ও রুখে দাঁড়াও। ২ ফেব্রুয়ারি- আজব কারখানা ও বিরোধ। ৯ ফেব্রুয়ারি- ময়না ও চরিত্র, ১৬ ফেব্রুয়ারি- পাতাল ঘর ও শ্রাবণ জোছনায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি- সৈয়দপুরের সৈয়দ সাহেব ও টালমাটাল। ১ মার্চ- বান্ধব ও মেঘনা কন্যা।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রশাসক বহাল আছেন, তিনি ছবির গুণগত মান বিবেচনা করতে চান না। সিরিয়ালি যারা আসে তাদের তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। এখন সমিতিতে যে ছবিগুলো মুক্তির জন্য এন্ট্রি করা আছে সেই ছবিগুলোর অধিকাংশের গুণগত মানের ব্যাপারে সেন্সর বোর্ডে প্রচণ্ড আপত্তি তুলেছে, কারণ ছবিগুলো কোনোভাবেই সিনেমা হলে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই

সুদীপ্ত কুমার দাস

এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, চলচ্চিত্র রিলিজ কমিটি গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে এফডিসির অধীনে। সেই কমিটিতে চলচ্চিত্র পরিবেশক, প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মানে এটি একটি যৌথ কমিটি ছিল। এতে এ পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল এফডিসির নেতৃত্বে। এর অধীনে দুটি সাব কমিটি ছিল। একটি রিলিজ সাব কমিটি, অন্যটি কমপ্লেইন (অভিযোগ) সাব কমিটি। সেই রিলিজ কমিটি নির্মাতাদের আবেদনের ভিত্তিতে ছবির মুক্তির তারিখ নির্ধারণ করে দিত। সেখানে রিলিজ কমিটি তখন সম্ভাব্য মুক্তির তালিকায় থাকা ছবিগুলোর ব্যবসায়িক গুণগত মান বিবেচনা করে কোন ছবির সঙ্গে কোন ছবি রিলিজ হবে তা ঠিক করে দিত, যাতে প্রযোজক ও প্রদর্শকরা ব্যবসায়িক দিক দিয়ে মার না খায়। দীর্ঘদিন এ কমিটিগুলোর অধীনে রিলিজ হওয়ায় ব্যবসায়িক নিয়ম শৃঙ্খলা বহাল ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজের আমলে এ রিলিজ কমিটি এককভাবে প্রযোজক সমিতির অধীনস্থ করা হয়। এখন প্রযোজক সমিতিতে যখন দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রশাসক বহাল আছেন তিনি ছবির গুণগত মান বিবেচনা করতে চান না। সিরিয়ালি যারা আসে তাদের তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। এখন সমিতিতে যে ছবিগুলো মুক্তির জন্য এন্ট্রি করা আছে সেই ছবিগুলোর অধিকাংশের গুণগত মানের ব্যাপারে সেন্সর বোর্ড প্রচণ্ড আপত্তি তুলেছে, কারণ ছবিগুলো কোনোভাবেই সিনেমা হলে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে সার্বিক অবস্থায়ই ব্যবসায়িক বিবেচনায় ভীতিপ্রদ। তা ছাড়া দু-একটি ভালো নির্মিত ছবি এসব বস্তপচা ছবির অবৈধ চাপের কারণে সঠিক সময়ে মুক্তি দিয়ে ব্যবসায়িক ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। এতে প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এটি সামগ্রিকভাবে দেশীয় চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই আমি এ বিষয়টি অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে সম্ভাব্য ভালো ছবিগুলো সহজেই মুক্তি পেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর