বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নতুন বছরেও ভালো নেই এফডিসি

আয় কমেছে আরও ॥ বেতন বন্ধ তিন মাস ॥ সরকারি প্রণোদনা জরুরি

আলাউদ্দীন মাজিদ

নতুন বছরেও ভালো নেই এফডিসি

বকেয়া বেতনের দাবিতে এফডিসির কর্মচারীদের বিক্ষোভ -সাম্প্রতিক ছবি

নতুন বছরের শুরু। অথচ গত দুই মাস শেষ হলো এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়নি। এ মাসেরও বেতন অনিশ্চিত। এর মূল কারণ আগের তুলনায় করপোরেশনের আয় আরও কমেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এ প্রতিষ্ঠানটি একসময় লাভজনক ছিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেও সরকারের রাজস্বের জোগান দিত। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের আয় উদ্বেগজনক হারে কমার কারণ হিসেবে এফডিসি প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘৩৫ মিলিমিটারে (সেলুলয়েড) চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় কাঁচা ফিল্ম বিক্রি হতো, ২০১২ সাল থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মাণ শুরু হলে এফডিসির আয়ের প্রধান উৎস এ কাঁচা ফিল্ম বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের ডিজিটাল ল্যাব প্রিন্টও বন্ধ হয়ে গেছে এবং এফডিসির নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হওয়ায় আগের তিনটি শুটিং ফ্লোর ৩, ৪, ৫ ভেঙে ফেলায় প্রতিষ্ঠানটি ৭০ ভাগ আয় কমে গেছে। এ ছাড়াও সিনেমা হল কমে যাওয়ায় প্রযোজকদের চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ কমেছে। তাই এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ ক্রমেই কমছে। বর্তমানে এফডিসিতে ফ্লোর, ক্যামেরা ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, বিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়। এর বিপরীতে সংস্থাটির ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল আনুষঙ্গিক মিলে মাসে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এভাবে আয় কমাতে এফডিসি এখন চরম সংকটে, বলতে গেলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সর্বশেষ সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণের জন্য এফডিসির কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করে এবং এ বাবদ সরকার এফডিসিকে যে ৬ কোটি টাকা প্রদান করে তা এফডিআর করে রাখা হয়। উক্ত এফডিআর থেকে লোন নিয়ে গত আট মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। বর্তমানে এফডিআরের বিপরীতে লোন নেওয়ার সুযোগ না থাকায় গত দুই মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভেঙে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে গেলে সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না বলে এফডিসির হাল এখন বেহাল হয়ে পড়েছে। এদিকে গত চার-পাঁচ বছরে অবসরে যাওয়া এফডিসির প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ছুটি নগদায়ন এবং গ্রাচ্যুয়িটি বাবদ পাওনা প্রায় ১৩ কোটি টাকা এখনো বুঝে পাননি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্বভুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র নির্মাণের এ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি এত বছরেও সরকারের রাজস্বভুক্ত হয়নি। এতে এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্বভুক্ত না হওয়ায় অবসরের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনও পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা আক্ষেপ করে বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে দিনের পর দিন অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন তারা। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। এখনো গ্রাচ্যুয়িটি না পাওয়ায় অর্থকষ্ট আর হতাশায় অবসরকালীন সময়ে এ পর্যন্ত আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। বাকিদের বেশির ভাগই দুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। নতুন বছরের এই প্রথম মাসে তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো ও আনুষঙ্গিক নানা ব্যয় মেটাতে পারছেন না বলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, একসময় তারা কাজ দিয়ে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে এফডিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। এফডিসিকে এখন সরকারের রাজস্বভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  এ সংস্থার প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, চলতি সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। মন্ত্রণালয় বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের প্রণোদনার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন অর্থ ছাড়ে এত গড়িমসি করছে তা এখন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এফডিসির ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখন শেষ ভরসার কথা হলো, এফডিসির নতুন কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে সংস্থাটির চলতি দৈন্যদশা হয়তো একদিন লাঘব হবে।  তবে এ প্রতিষ্ঠানটির ঘুরে দাঁড়ানো সময়সাপেক্ষ বলে বর্তমান সংকট মোচনে সরকারের আর্থিক প্রণোদনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর