মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কেন হারলেন তারকারা

কেন হারলেন তারকারা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শোবিজ তারকাদের মধ্যে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম, চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এ ছাড়া স্বতন্ত্র এবং বিভিন্ন দলের প্রার্থী হন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম। এর মধ্যে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও ফেরদৌস ছাড়া বাকিরা জয়ী হতে পারেননি। কেন হারলেন এই তারকারা সে কথাই তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে   নৌকা প্রতীক নিয়ে শোবিজ তারকাদের মধ্যে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম, চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এ ছাড়া স্বতন্ত্র এবং বিভিন্ন দলের প্রার্থী হন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম। এর মধ্যে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও ফেরদৌস ছাড়া বাকিরা জয়ী হতে পারেননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌস ও মমতাজ। নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর হয়ে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে নকুল কুমার বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের হয়ে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেন হিরো আলম। এর মধ্যে ফল ঘোষণার আগেই অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ডলি সায়ন্তনী ও হিরো আলম। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে  প্রার্থী হয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। নকুল কুমার নির্বাচনে অংশ নিলেও এ অঞ্চলের মানুষ নির্বাচিত করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে। রাজশাহী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মায়িকা মাহি পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৯টি ভোট। তার আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়েও ভোটযুদ্ধে এবার হেরে গেছেন সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে এর আগে দুবার নির্বাচিত হলেও এবার পারলেন না তিনি। ‘হ্যাটট্রিক’ এর সুযোগ হারালেন এই শিল্পী ও নেত্রী। এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু। তিনি পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৫২৫ ভোট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৬৯ ভোট। পাবনা-২ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নোঙ্গর প্রতীকের কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৩৮২ ভোট। ভোটে হেরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর  হিরো আলম। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোট প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরে তিনি জামানত হারিয়েছেন। বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে ডাব প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ১৭৫ ভোট। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করেছেন হেরে যাওয়া প্রার্থীরা। তাদের কথাই এখানে তুলে ধরা হলো-

 

আমি পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ না : মাহি

মাহিয়া মাহি বলেন, ফলাফল যা হওয়ার হয়েছে,  হেরে গেলেও সবাইকে জানাচ্ছি, আমি এলাকাবাসীর সঙ্গে আছি। এটা আমার প্রথম নির্বাচন। অন্যদের মতো আমি একদম পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ নয়। অনেকেই আমার বয়সের আগে থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের কার্যক্রম যতটা মসৃণ হবে, সেখানে আমার তো একটু ঘাটতি থাকবেই। তবে ওভারঅল সবকিছু ভালোই আছে। নির্বাচনে ফেল করেছি এখন এটা আমার কাছে বড় বিষয় নয়। আমি মানুষের এত কাছাকাছি গিয়েছি, এত বয়স্ক মানুষের দোয়া পেয়েছি যা বলার মতো নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি এবং অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। মানুষের কষ্টের কথাগুলো শুনেছি। এর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের জন্য আমার অনেক করণীয় আছে।

 

ভোটের মাঠে দেরিতে নেমেছিলাম : হিরো আলম

রবিবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হিরো আলম তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘বিভিন্ন অনিয়মের কারণে হিরো আলম এই নির্বাচন বর্জন করলেন।’ বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তিনি। তিনি  বলেন, ‘ভোটের মাঠে এবার দেরিতে নেমেছিলাম। তাই সবার কাছে পৌঁছতে পারিনি। যার কারণে ভোট কম পেয়েছি।’

 

ভোটাররা যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই জয়ী করেছেন : নকুল কুমার

নকুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তো কোটিপতি নই, তাই জনগণের কাছে টাকা চেয়েছি। জনগণ ভালোবেসে আমার নির্বাচনের খরচ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সংগীতশিল্পী, আর শিল্পীর আছে মমতা। জীবনে অনেক মমতা পেয়েছি, আর মমতা দিয়ে অনেক কাজও করেছি। কিন্তু সংসদে আছে ক্ষমতা। ক্ষমতা থাকলে জনগণের জন্য কাজ করাটা সহজ হয়। এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জানিয়ে নকুল কুমার বলেন, আমি এলাকায় নিজের টাকায় মসজিদ, মন্দির করেছি। জনগণের জন্য অনেক কাজ করেছি। এমপি হতে পারলে সরকারের যে বরাদ্দ আছে, তা দিয়ে জনগণের জন্য আরও কাজ করতে পারতাম। যাই  হোক ভোটাররা যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই জয়ী করেছে। আমি জিততে না পারলেও এলাকার মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে যাব। কারণ তাদের কাছে আমি চিরঋণী।

 

সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি : ডলি সায়ন্তনী

প্রতিটি কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে নৌকার ভোটার ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সকাল ১০টার আগেই নৌকার প্রার্থী প্রায় ৭৫ ভাগ ভোট নিয়ে নিল। এ অবস্থায় নির্বাচন করা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। তাই বেলা ২টার দিকে স্থানীয় ডিসিকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আমি নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হই। এটি একটি এক তরফা নির্বাচন হয়েছে। যা আমার কাম্য ছিল না।

 

এই ফলাফল অবিশ্বাস্য : মমতাজ

কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বলেন, সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর থেকে আমার পর্যবেক্ষণে বলতে পারি সুন্দর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। যা এর আগে এই আসনে দেখিনি। এলাকাবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনে আমি আবারও আমার বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আস্থাশীল ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি ফলাফল আমার বিপক্ষে যাওয়াটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। আমি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই নির্বাচিত না হতে পারলেও আমি সবসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে তাঁর ও দেশের মানুষের পাশে সবসময় থাকব। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মমতাজের দ্বন্দ্বের কারণেই কী তার পরাজয় হয়েছে? এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে রাজি হননি প্রার্থী মমতাজ।

সর্বশেষ খবর