শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিন দশকে মিস্টার পারফেকশনিস্ট

তিন দশকে মিস্টার পারফেকশনিস্ট

তিন দশকের বেশি সময় ধরে বলিউড মাতিয়ে রাখার কাজটি করে যাচ্ছেন বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতা আমির খান। তার অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছুই নেই। যে কোনো চরিত্রেই তিনি মানানসই। তাকে নিয়েও বলার কিছুই নেই। তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নিপুণ অভিনয়-দক্ষতার জন্য তাকে  বলা হয় বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। খানদের সেরা এ বলিউড তারকাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

কে এই মোহাম্মদ আমির হোসেন

বলিউড চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী অভিনেতা আমির খান। জন্ম ১৯৬৫ সালে মার্চের ১৪ তারিখ। ভারতের মুম্বাইয়ে বান্দ্রা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম মোহাম্মদ আমির হোসেন খান। কিন্তু সবার কাছে আমির খান হিসেবেই সুপরিচিত। মায়ের নাম জীনাত হোসেন। পিতা তাহির হোসেন ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চাচা নাসির হোসেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। আমিরের তিন ভাই- ফয়সাল খান, ফরহাত খান এবং নিখাত খান। অভিনেতা ইমরান খান হলেন আমির খানের ভাগ্নে।

 

বিবাহিত জীবন ও সন্তান, ডিভোর্স

আমির রীনা দত্ত নামের এক তরুণীকে ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেন। এ রীনা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ চলচ্চিত্রের একটি গানে কিছুক্ষণের জন্য অভিনয় করেছিলেন। জুনায়েদ খান নামে তাদের এক পুত্র এবং ইরা খান নামে এক মেয়ে হয়। রীনা আমিরের চলচ্চিত্র ‘লগন’-এর প্রযোজক হিসেবে কাজও করেছিলেন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে আমির রীনাকে তালাক দেন এবং জুনায়েদ ও ইরার দায়িত্ব রীনা নেন। ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমির কিরণ রাওকে বিয়ে করেন, যিনি আমিরের ‘লগন’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে এ দুজনের পথও অন্য পথে গেছে। যেটি ২০২১ সালে তারা ঘোষণা দেন ডিভোর্সের।

 

অভিনয় জীবনে পদার্পণ

মাত্র আট বছর বয়সে চাচা নাসির হোসেনের ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ (১৯৭৩) ছবিতে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন আমির। ১১ বছর পর প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেতা হিসেবে কেতন মেহতার ‘হোলি’ (১৯৮৪) ছবিতে কাজ করেন। প্রথম সফল ছবি চাচাতো ভাই মনসুর খানের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। এ ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার আমির চকলেট হিরো লুকের জন্য ‘টিন আইডল’ হিসেবেও পরিচিত।

 

খানের নায়িকারা

আমির খান বরাবরই ছিলেন একাই একশ। নায়িকানির্ভর নায়ক নন তিনি। বেশিরভাগ ছবি তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন, নায়িকার দরকার হয়নি। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছু ছবিতে তিনি নায়িকাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। ছবিতে আমির খানের নায়িকা ছিলেন জুহি চাওলা, ঊর্মিলা মাতন্ডকর, রানী মুখার্জি, সোনালী বেন্দ্রে’, পূজা ভাট, টুইঙ্কেল খান্না, গ্রেসি সিং, র‌্যাচেল শেলি, রাভিনা ট্যান্ডন, কারিশমা কাপুর, মাধুরী, মনীষা কৈরালা, আয়েশা জুলেখা, কাজল, প্রীতি জিনতা এলিস প্যাটার্ন, অসিন, আনুশকা শর্মা, ফাতিমা সানা।

 

যে ছবি তাকে ‘আমির’ করেছে

৫৯ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে বলিউডের সুপারস্টারের অভিনয় করা সিনেমার সংখ্যা ৬০টির বেশি। একেকটি সিনেমায় বিচিত্র সব চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার বদলে দর্শক ও ভক্তদের সামনে এনেছেন তিনি। বলিউডের ছবিতে হিট মানে আমির, আমির মানেই হিট। মেধা ও মনন দিয়ে রীতিমতো বলিউড শাসন করেছেন। তবে যে ছবি তাকে আমির করেছে সেগুলো হলো- ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’,  ‘রঙ্গিলা’, ‘লগন’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘রং দে বাসন্তি’, ‘তারে জমিন পর’, ‘গাজিনি’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’ এবং ‘দঙ্গল’, লাল সিং চাড্ডা।

 

যে ছবিগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন

চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় ‘সাজন’ এবং ‘ডর’ আমির করেননি। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ করার জন্য আমিরকে অফার করা হলে তিনি চিত্রনাট্যে কিছু পরিবর্তনে মতবিরোধ হলে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ও ব্যস্ততার কারণে প্রত্যাখ্যান করে। ‘হাম আপনে হ্যায় কৌন’ ছবিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

 

প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ

তিনি নিজস্ব উদ্যোগে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা আমির খান প্রোডাকশন্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ ‘তারে জমিন পার’-এর মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

 

তার ‘আমির’ হওয়ার মূলমন্ত্র

আমির সবসময়ই নিজেকে পুনঃআবিষ্কার করে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। আজ তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন অস্কার মনোনীত চিত্র প্রযোজক, প্রভাবশালী দানবীর। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর আয় অনেকের কাছে সব সময় ঈর্ষণীয়।

 

সামাজিক সমস্যা নিয়ে ‘সত্যমেব জয়তে’

সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে ‘সত্যমেব জয়তে’ টকশো পরিবেশনা করেছিলেন। যা মানুষকে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করে।

 

একজন মানবিক আমির

প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসেন আমির। তবে কখনো সেটা ফলাও করে প্রকাশ করেননি। করোনা সংকটে একাধিক সংগঠন, পিএম কেয়ারস ফান্ড, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তহবিলসহ বলিউডের দিনমজুরদের পাশেও ছিলেন।

 

২০২৪ সালে নতুন লুকে চমক

বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত অভিনেতা আমির খানের ২০২২ ও ২০২৩ সালটা খুব সাদামাটা ছিল। অভিনেতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘লাল সিং চাড্ডা’র ব্যর্থতার পর সিনেমা জগৎ থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছেন তিনি। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্যজিৎ রায়ের লুকে হাজির হয়ে রীতিমতো ভক্তদের চমকে দিয়েছেন আমির। এ যেন একেবারে সত্যজিৎ রায়!

সর্বশেষ খবর