রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাষট্টিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী টম ক্রুজ

আলাউদ্দীন মাজিদ

বাষট্টিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী টম ক্রুজ

ওয়ার্নার ব্রোসের সঙ্গে বছরজুড়ে চুক্তি
হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারির সঙ্গে চুক্তি করলেন সুপারস্টার টম ক্রুজ। ২০২৪ সালে এ প্রযোজনা সংস্থা থেকে অরিজিনাল এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমা তৈরি করার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি। সেই চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয়ও করতে যাচ্ছেন টম ক্রুজ। ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি জানিয়েছে, হলিউডের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় অভিনেতা টম ক্রুজের সঙ্গে তারা একটি চুক্তি করেছে। তারা একসঙ্গে ২০২৪ সালে অরিজিনাল এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিল্মগুলোর নির্মাণ ও প্রযোজনা করবে। টম ক্রুজ সে চলচ্চিত্রগুলোর সবকটিতে অভিনয় করবেন। টম ক্রুজের সঙ্গে ফিল্ম পার্টনারশিপের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন ওয়ার্নার ব্রোস, মোশন পিকচার গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাইকেল ডি লুকা, পাম আবডি এবং সিইও ডেভিড জাসলাভ, যারা বরাবরই ক্যামেরার পেছনে এবং ক্যামেরার সামনে শীর্ষ প্রতিভা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে এসেছেন। কমস্কোরের সিনিয়র মিডিয়া বিশ্লেষক পল ডারগারবেডিয়ান বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র তারকা টম ক্রুজের সঙ্গে এ চুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চুক্তির পর এ অভিনেতা বারব্যাঙ্কের ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি লটে একটি অফিস পেতে চলেছেন যেখানে ক্লিন্ট ইস্টউড এবং ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার মতো তারকারা রয়েছেন।

পাঁচ দশকে শীর্ষ আয়ের ছবি
আশির দশক থেকেই টম ক্রুজ বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে অন্যতম। তার পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারজুড়ে ক্রুজের সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী ১২ বিলিয়নেরও বেশি আয় করেছে। ২০২২ সালে টমের ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’-এর মুক্তি পায় যা প্রায় ১.৫ বিলিয়ন আয় করেছে। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘মিশন ইম্পসিবল : ডেড রেকনিং- পার্ট ওয়ান’ বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৫৬৮ মিলিয়ন আয় করেছে।

সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের অভিনেতা
হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন হলিউডের শীর্ষতম অভিনেতা টম ক্রুজ। টম ক্রুজ তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’-এর জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি উপার্জন করেছেন। সুতরাং গোটা বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষতম পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন টম ক্রুজ। ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’-এ অভিনয়ের পাশাপাশি এ সুপারহিট সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন টম ক্রুজ। এ ছবিটির বক্স অফিস আয়, অভিনেতার পারিশ্রমিক, স্ট্রিমিং রাজস্ব, সব মিলিয়ে এ ছবিটির জন্য মোট ১০০ মিলিয়নেরও বেশি আয় করেছেন টম ক্রুজ। ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’ গত বছরের মে মাসে মুক্তি পেয়েছে। আর এ ছবিটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এটি বক্স অফিসে বিলিয়ন-ডলারের চিহ্ন অতিক্রমকারী প্রথম টম ক্রুজ চলচ্চিত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।

৬২ বছরেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী
বয়সটা এখন ৬২। এখনো স্টান্ট আর অ্যাকশনে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় হলিউড তারকা টম ক্রুজ। গত বছরের ১২ জুলাই মুক্তি পেয়েছে তার নতুন সিনেমা ‘মিশন : ইমপসিবল-ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’। এ সিনেমাতেও ঝুঁঁকিপূর্ণ স্টান্ট করতে দেখা গেছে এ অভিনেতাকে। ‘মিশন : ইমপসিবল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সপ্তম সিনেমা ‘মিশন : ইমপসিবল-ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’। আর এ সিনেমার বাজেট ২৯০ মিলিয়ন ডলার, যা এ ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্য সিনেমা থেকে বেশি। শুধু তাই নয়, ২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিটের সিনেমা এ সিরিজের দীর্ঘতম সিনেমাও। জানা গেছে, এ সিনেমার জন্য ১২ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক নিয়েছেন টম ক্রুজ, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩০ কোটি থেকে ১৫২ কোটি টাকা। এ ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের ছয়টি সিনেমাতেও মোটা অংকের অর্থ পকেটে পুরেছেন টম। সেই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তার পেছনে এত অর্থ খরচ করলেও তা বৃথা যায়নি। অন্য সিনেমার মতো শেষ সিনেমাটিও ঝড় তুলেছে বক্স অফিসে। টম ক্রুজ বরাবরই দুর্দান্ত স্টান্ট দিয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শককে। এ সিনেমাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে আরও নতুন নতুন স্টান্ট করতে দেখা যায় এ তারকাকে। ৬২ বছরেও দুর্দান্ত সব স্টান্ট করে যাচ্ছেন এ তারকা। এ প্রসঙ্গে ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’কে এ অভিনেতা জানিয়েছেন, হ্যারিসন ফোর্ডের মতো তারও ৮০ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

যেভাবে বয়সকে বাগে এনেছেন
বয়স হয়ে গেছে ৬২। কিন্তু চেহারায় তার ছাপ নেই। এমনভাবেই বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে রেখেছেন টম ক্রুজ। কীভাবে এ অসম্ভবকে সম্ভব করছেন ‘মিশন ইম্পসিবল’ তারকা। তিনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর ভরসা করেন। নিত্যনতুন প্রাকৃতিক টোটকা ব্যবহারের প্রতি বেশ আগ্রহী তিনি। সব সময় খোঁজখবর রাখেন এ জগতে নতুন কী যোগ হলো। ইদানীং তেমনই এক নতুন টোটকা ব্যবহার করছেন টম ক্রুজ। সেটা দারুণ কাজও দিচ্ছে। ত্বকের ময়লা দূর ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নাইটিঙ্গেল পাখির মল দিয়ে বানানো মাস্ক মাখেন টম ক্রুজ। সেই সঙ্গে ত্বককে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করেন আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক। এভাবেই বুড়িয়ে গিয়েও বয়স বাড়ায় বাঁধ দিয়ে রেখেছেন ‘টপ গান’ তারকা।

‘টাইটানিক’কে ছাড়িয়ে ক্রুজের ‘টপ গান’
২০২২ সালে মুক্তির পর থেকে একের পর এক বাজিমাত করছে ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’। প্রথম সপ্তাহে রেকর্ড পরিমাণ আয়। পরে ঢুকে পড়ল বিলিয়ন ডলার আয়ের তালিকায়। এরপর সিনেমাটি নতুন রেকর্ড গড়ল। বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে পরিচিত ব্লকবাস্টার ‘টাইটানিক’ সিনেমাকে পেছনে ফেলে দেয় ‘টপ গান’। ডমেস্টিক বা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই আয়ে শীর্ষ ৮-এ রয়েছে ‘টাইটানিক’। ১৯৯৭ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। সিনেমাটির আয় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২২ সালে টাইটানিককে ছাড়িয়ে গেল ‘টপ গান : ম্যাভেরিক’। টম ক্রুজ অভিনীত সিনেমাটির ডমেস্টিক আয়ে শীর্ষ ৭-এ অবস্থান করে নেয়। সিনেমাটির আয় ৬৬২ মিলিয়ন ডলার।

রেসলিং থেকে বাদ পড়া সেই কিশোর
কৈশোরে পুরোহিত হতে চেয়েছিলেন। বয়স তখন ১৪। তবে এক বছরের মাথায় শিক্ষালয় থেকে ঝরে পড়েন। তারপর ঘটনাক্রমে হয়ে উঠেন অভিনেতা। হলিউড ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের দর্শকদের কাছে তিনি এখন পছন্দের তারকা। খেলাধুলা ও দৌড় খুবই পছন্দ। একবার হাঁটুতে চোট লেগে রেসলিং টিম থেকে বাদ পড়েন। তার পর থেকে দুরন্ত এ বালক দৌড়ঝাঁপ থেকে দূরে থাকেন। তখন সিদ্ধান্ত নেন, অভিনয় করবেন। ১৯৮১ সালে ক্যারিয়ার শুরু হয়। সে বছরই ‘ট্যাপস’ সিনেমা থেকে পারিশ্রমিক পান ৫০ হাজার ডলার। এ আয়ই বলে দেয় হলিউডে শুরুতে সংগ্রাম করতে হয়নি তাকে। তবে খ্যাতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঠিক ১০ বছর পর ‘ডেজ অব থান্ডার’ সিনেমা থেকে পারিশ্রমিক পান ৯ মিলিয়ন ডলার, যা তার জন্য ছিল রেকর্ড। এ তারকা প্রথম বাজিমাত করেন ১৯৮৬ সালে ‘টপ গান’ দিয়ে। তিনি টম ক্রুজ। সেবার বছরের সেরা আয় করা সিনেমার তারকা বনে যান তিনি। তার পর থেকেই তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘গ্রহের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা’।

সর্বশেষ খবর