মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

কোনো শিল্পীই হারিয়ে যান না

কোনো শিল্পীই হারিয়ে যান না

ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান সময়ের ব্যস্ত শিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা। ‘সখি গো আমার মন ভালা না’ খ্যাত এই ফোকশিল্পীর গাওয়া অসংখ্য মৌলিক গান শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরে। গত বছরের মতো নতুন বছরেও টিভি-স্টেজ শো, প্লেব্যাক আর রেকর্ডিংয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই কণ্ঠতারকা। তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

গতকাল কিশোরগঞ্জে স্টেজ শো ছিল। শ্রোতাদের কেমন মাতালেন?

আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো হয়েছে। মিঠামইনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা উপলক্ষে মিঠামইন হেলিপ্যাড প্রাঙ্গণে শোটি হয়। মূলত আকাশ মাহমুদের সঙ্গে আমার গাওয়া ‘মনপাখি’ ও ‘কাজলের চেয়ে কালো’ গান দুটিকে টার্গেট করেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা। প্রথমবার আমরা দুজন মিলে একটি স্টেজ শোতে গাইলাম।

 

গত বছরটা লায়লার কেমন গেল?

আমার কাছে কোনো বছরই খারাপ যায় না। প্রত্যেকটা বছরই সুন্দর গেছে। আমি সুস্থ আছি, পরিবারের সঙ্গে আছি, গানের সঙ্গে আছি- এর থেকে সুন্দর জীবন আর কী হতে পারে? তবে গত বছরে অন্য বছরের তুলনায় মৌলিক গান বেশি করেছি। ‘মন পবন’ টিম নিয়ে অসংখ্য স্টেজ শো করেছি। মনে রাখার মতো বেশ কিছু গানও করেছি। খুবই ভালো সময় গেছে।

 

নতুন বছরের শুরুটা কেমন হলো?

এবার নির্বাচনের কারণে তেমন করে স্টেজ শো হয়নি, টুকটাক হয়েছে। তবে নিজের চ্যানেল ‘লায়লা অফিশিয়াল’র জন্য ৭-৮ গান এবং অন্য চ্যানেলের জন্য ১৩-১৪টি মৌলিক গান করেছি।

 

‘লায়লা অফিশিয়াল’ নিয়ে পরিকল্পনা?

অনেক আগেই খুলেছিলাম চ্যানেলটি। তবে সময় দিতে পারিনি। বেশ কিছু গান করেছি। এখন নিয়মিত আপ দিচ্ছি। সামনেও অব্যাহত থাকবে। এখন ৬ লাখের ওপরে সাবস্ক্রাইবার। সম্প্রতি চ্যানেলে রিলিজ করেছি ‘বিনয় করে ডাকি’। এ গানটিসহ সব গানই শ্রোতারা পছন্দ করেছেন। আসলে এখন তো প্রত্যেক শিল্পীই চায় নিজের চ্যানেলে পছন্দের গানগুলো একসঙ্গে থাকুক। যেগুলো স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। অন্য চ্যানেলের জন্য তো অনেক গানই করেছি। এখন নিজের জন্য করি কিছু। নিজের চ্যানেল মানেই সারাজীবনের কিছু কাজ জমা। মনিটাইজ হলে কিছু না কিছু একসময় পাওয়া যাবে। অনেক সময় ভালো গান করলেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নেয় না। সেক্ষেত্রে নিজের চ্যানেলে রিলিজ দিলে সবাই শুনবে। কোন গান কখন জনপ্রিয় হবে কেউ বলতে পারে না।

 

ফোক গানের বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হয়?

অনেক ভালো। আগে তো কম ফোক গান করা হতো। এখন স্টুডিওতে অন্যান্য গান যেখানে ৩০টি রেকর্ডিও হচ্ছে, সেখানে ফোক হচ্ছে ৭০টি। মঞ্চে দাঁড়ালে একসময় হিন্দি গানের রিকুয়েস্ট করত। কিন্তু আব্বার ভয়ে কখনোই গাইনি; ফোক গানই করতাম। এখন জনপ্রিয় ফোকশিল্পীর কাতারে আমার নামও আসে, সেটা আমাকে খুবই গর্বিত করে। এখন কিন্তু ফোক গান ছাড়া স্টেজ মাতানো অনেক কঠিন।

 

ট্যালেন্ট হান্ট থেকে বের হয়ে শিল্পীরা হারিয়ে যায়। এর কারণ কী?

কোনো শিল্পীই হারিয়ে যান না। এই কথাটি শিল্পীকে দারুণ কষ্ট দেয়। আমি মনে করি, উপযুক্ত সুযোগ আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শিল্পীরা নিয়মিত হতে পারে না। এটার প্রমাণ আমি নিজেই। আমি ২০১২ সালে ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও দীর্ঘ আট বছর অনেক স্ট্যাগল করতে হয়েছে। ২০১৯ সালে এসে আমাকে সবাই চিনছে। একটার পর একটা গান হিট হয়েছে। আসলে লেগে থাকতে হবে। আর ৩-৪টি ভালো প্ল্যাটফরমে সুযোগ পেলে শিল্পীদের স্টেজ শোও বাড়ে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পায়।

 

শিল্পীরা গান গাওয়া থেকে নিজেকে দেখাতে বেশি মনোযোগী। গান শোনার নাকি দেখার?

ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দেখানোটা জরুরি না। যখন সিডি-ক্যাসেট ছিল, তখন আমি মমতাজ ম্যাডামের একটা ক্যাসেটই ঘুরেফিরে বারবার শুনতাম বাধ্য হয়েই। এখন তো সবকিছু হাতের মুঠোয়। অনেক অপশন। তবে আমাকে কেউ মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে চেনেনি, আলাদা করেও কখনো ফটোশুট করিনি। তেমন করে আমার মিউজিক ভিডিও নেই। ভিডিও ফ্যাক্ট না, শ্রোতাদের টেস্ট চেঞ্জ করতে হবে। ভালো গান হলেই এনাফ। যে কোনো গানের পেছনে দরকার শিল্পীর ডেডিকেশন, অবশ্যই ভাগ্য।

 

লায়লার বিয়ে নিয়ে ভাবনা কী?

ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ নেই। আব্বা-মার পছন্দ ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। ভালো ছেলে পেলে সামনের বছরেও বিয়ে হতে পারে। পাত্রের অনেক কিছু থাকতে হবে তা নয়। তবে যেই হোক সে যেন আমার সংগীত সাধনাকে ভালোবাসে। ভালো মানসিকতার হয়, আধ্যাত্মিকতাকে বোঝে। বিয়ের পর সংগীত জীবনকে গলা টিপে হত্যা যেন না করে।

সর্বশেষ খবর