রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমি ডিমান্ড-টিমান্ডের মধ্যে নাই

বিশেষ সাক্ষাৎকার

 আমি ডিমান্ড-টিমান্ডের মধ্যে নাই

শীর্ষ অভিনেতা মোশাররফ করিম। দুই যুগ ধরেই টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে কাজ করছেন সদর্পে। একসময় সরব ছিলেন মঞ্চে। বেশ কয়েক বছর হলো দুই বাংলায় ওটিটি ও চলচ্চিত্রে কিছু চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করে হইচই ফেলে দিয়েছেন এ ভার্সেটাইল অভিনেতা। এবার পশ্চিমবঙ্গের কুখ্যাত গ্যাংস্টার ‘হুব্বা’ চরিত্রে ভিন্নভাবে এপার-ওপার বাংলার দর্শকদের সামনে হাজির হলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের অতিথি হয়ে এ তারকা  তার জানা-অজানা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পান্থ আফজাল এর সঙ্গে।

 

হুব্বার প্রচারণায় ছিল ভিন্নতা...

হ্যাঁ। ভালোই প্রচারণা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মেট্রোরেলে পর্যন্ত ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। রেলগাড়ির চেহারা মনে হয়েছে হুব্বা গাড়ি। আসলে আমার সাধারণত একটা স্বভাব আছে যা তোমরাও জানো, অত বেশি ফোন ধরি না। খুব একটা গা করি না। অনেকটা অলস টাইপের। কিন্তু এ চরিত্রটির ক্ষেত্রে আমিই বারবার ফোন করে ব্রাত্যদাকে নক করতাম যে এটির শুটিং কবে শুরু হবে?

 

আপনি চরিত্রের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেন না। এমনকি পানিতেও যদি নামতে হয় সেটা করতেও কার্পণ্যবোধ করেন না, ঠিক বলেছি?

তোমরা এ বিষয়গুলো ভালোই জানো। হ্যাঁ, অনেক গল্প আছে। একবার অরণ্য আনোয়ারের এক কাজে, অন্য আরেকটি কাজেও নদী সাঁতরে পার হয়েছিলাম।

 

দুই বাংলার মানুষের প্রবল আগ্রহটাকে কীভাবে দেখেন?

শিল্পের জন্য এটা খুব দারুণ বিষয়। এখন কিন্তু সিনেমা-টিনেমা সবকিছু ঘরে ঢুকে গেছে। ঘরের মধ্যে একটা বিশাল টিভি। নেটফ্লিক্সসহ ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই তো আছে। তবে এর সঙ্গে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার কিন্তু একটা বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আগে যেরকম ছিল যে, একটি সিনেমা একটা পরিবারের জন্য স্বস্তি ছিল। মাসে একটি সিনেমা। সেই সিনেমাটা দেখার মধ্য দিয়ে সে তার অনেক অবসাদ কেটে যেত। ওইটা পুরো পরিবারের জন্য বিনোদন ছিল। সেই জায়গাটা তো কমে গেছে। হলে যাওয়া মানে কিন্তু আমি আগে থেকেই প্রস্তুত। তার মানে এটিকে আমি সিরিয়াসলি নিলাম। টিকিট কাটছি, ভিতরে ঢুকছি। তারপর অন্ধকার একটি হলে বসে পুরো ছবিটি আমরা দেখছি। সো, হলে দেখা আর ঘরে বসে দেখার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। এই যে সিনেমা দেখার আগ্রহ, এটার দরকার আছে।

 

তবে শিল্পের বিনিময় প্রথা আগে ওপার বাংলায় তেমন করে ছিল না...

সেটা সত্যি। তেমন করে ছিল না। এটা হতে পারে যে আমাদের কাজ, অভিনয় সম্পর্কে ওখানকার মানুষের তেমন একটা ধারণা ছিল না। সেটা না থাকাই স্বাভাবিক, কারণ ওখানে আমাদের কোনো চ্যানেলই চলত না। এখনো কিন্তু চলে না। কিন্তু এ ইউটিউব আসার পরে এর মাধ্যমে প্রচুর দর্শক আমাদের কাজগুলো দেখল। এরপর ওটিটি, অ্যাপসেও দেখল। আমাদের কাজগুলো তাদের ভালো লাগল। সেখান থেকে প্রচুর আগ্রহ তৈরি হলো। মূল কথাটা হচ্ছে দর্শক। দর্শকের যখন আগ্রহ তৈরি হয় তখন নির্মাতাদেরও আগ্রহ তৈরি হতে থাকল। তারা ভাবল এখানকার শিল্পীদের নিয়েও ভালো কাজ করা যায়। তবে ব্রাত্যদার আমাকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি হলো নূর ইমরান মিঠুর ‘কমলা রকেট’ দেখার পর। ভালো লাগল তার। এরপর তার সঙ্গে কাজ করা শুরু হলো। 

 

‘হুব্বা’ কাজটি আপনি না করলে ব্রাত্য বসু নিজেই করতেন। এই যে আপনি ছাড়া বিকল্প কাউকে ভাবতে পারছেন না, সেটা কতটা আনন্দের?

আনন্দের তো অবশ্যই। এটা ভাবলে সেই মান্নাদের গানের মতো বলতে হয়, ‘খুশি আর লজ্জার মাঝামাঝি সেই হাসি’...হাহাহা। তো লজ্জাও লাগে আবার ভালোও তো লাগে।

 

‘গুকাকু’র কাজটি হবে?

হতে পারে। তবে কাজটি আটকে আছে। গল্পটি খুব দারুণ ছিল। অসাধারণ। এ ছাড়া  আরও কিছু কাজ করার কথা আছে। বাংলাদেশে এবং ঐখানে।

 

ওটিটি প্রসঙ্গে কী বলবেন?

আসলে যে কাজগুলো আমরা করি সেটি ইউটিউব বা টেলিভিশন নাটকের জন্য তার  চেয়েও ওটিটির যত্নটা আরেকটু বেশি। যত্নটা বেশি কারণ খরচটা আরেকটু বেশি নিতে পারছে। সময়টা একটু বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং আগে থেকেই একটা কনটেন্ট নিয়ে প্রচুর ভাবা হচ্ছে। পুরো গল্পটারই ডিটেইলস ধরা হচ্ছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সেক্টর থেকে ভাবছেন। যে কারণে কাজগুলো ভালো হচ্ছে। তবে আমি চাই ওটিটিতে আরও অন্য ধরনের কাজ হোক।

 

মহানগরের সিক্যুয়েলে ফের দেখা যাবে ওসি হারুনকে?

এটা আমি এখনো জানি না। তবে হবে বলেই বলল। আর এ বিষয়ে নিপুণ বিস্তারিত বলতে পারবে।

 

সবাই বলে আপনি অনেক ডিমান্ডেবল। কথাটি কতখানি সত্য?

না, আমি তো উল্টোটা। আমি ডিমান্ড-টিমান্ডের মধ্যে নাই। থাকে না যে- আমি সেটে গেলে এই লাগবে, সেই লাগবে, এটা-ওটা! আমার এটা একদমই নাই। হয়তো অনেক সময় জিজ্ঞেস করে ভাই কী খাবেন? তখন মনে করতে পারি না কী খাব আমি! আমি আসলেই জানি না কী খাব আমি! কখনো কিছু মনে করতে না পেরে বলে দিই, ‘মুড়ি নিয়ে আসো, গুড় পেলে দিও’।

 

বলতে চাইছি আপনার পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে...

আমরা তো আর মাগনা কাজ করি না। টাকা-পয়সা নিয়েই কাজ করি। তুমিও জানো কত টাকা নিই। তবে টাকা-পয়সা নেওয়ার ব্যাপারটা আমি আমার জীবনে কখনো নিজে নির্ধারণ করি নাই। কখনোই বলি নাই, আচ্ছা আমাকে এত টাকা দিতে হবে। মার্কেট আমার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিয়েছে। অনেক সময় শিডিউলে আমাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন শিডিউল পাওয়ার জন্য মার্কেটই আমার পেমেন্ট বা ডিমান্ড বাড়াচ্ছে। এখন আমি আবার ওইরকম মহৎ না যে, আমাকে দিলে আমি নিতে চাইব না। দেখ, অফিস থেকে তোমার বেতন বাড়ালে তুমি তো নিশ্চয়ই বলবে না যে, প্লিজ স্যার বেতন বাড়াইয়েন না...হাহাহা। আসলে ব্যাপারটা এরকমই।

 

নাটক, সিনেমা, ওটিটি কনটেন্ট সবই কি সমানতালে চলবে?

চলছে তো। খারাপ চলছে না, ভালোই। একসময় তো আমি মঞ্চের মানুষও। আমি এভাবে চলতে পছন্দ করি। আমার কাছে মনে হয় না এটা ওচ্ছুত, এটাকে বাদ দিতে হবে বা এটাই শুধু করে যেতে হবে।

 

সিনেমায় কোনো গান করেছেন?

সিনেমায় গান করেছি। আমারই লেখা।

 

নির্মাণে আসবেন?

লক্ষ্য স্থির করে কোনো কাজ করি না। সো, এটা এখনো জানি না।

 

তারকাদের কেমন হওয়া উচিত?

ভালো মানুষ হওয়া উচিত। মানুষ তো! দোষ-গুণ থাকবেই, তবে সেসব দোষ থেকে বিচ্যুৎ হয়ে তাকে মানবিক হওয়া প্রয়োজন। তারকার ক্ষেত্রে এটা দরকার।

 

বাড়ির বাজার করেন?

বাজার করতে আমি যাই না। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি একটু অন্যরকম। আমার ফ্যামিলির কেউ আমাকে কখনো বাজারে পাঠাতে পারত না। আমি আসলে ‘কামচোরা’ ছিলাম। আমি কাজ করতে পছন্দ করতাম না। কোনো কাজই না।  কাজ থেকে পালাতে পারলেই আমি বাঁচতাম। সেই আমিই এখন সবচেয়ে বেশি কাজ করি।

সর্বশেষ খবর