রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

যেভাবে উত্তম কুমারের নায়িকা অলিভিয়া

আলাউদ্দীন মাজিদ

যেভাবে উত্তম কুমারের নায়িকা অলিভিয়া

মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে বাংলাদেশের মাত্র একজন অভিনেত্রী অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি অলিভিয়া গোমেজ। এ গুণী অভিনেত্রী উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘বহ্নিশিখা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অলিভিয়াকে বলা হতো চলচ্চিত্রের ‘বনলতা সেন’। ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্রনির্মাতা এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন অলিভিয়া। দর্শক তাকে প্রথম পর্দায় দেখল ১৯৭২ সালে মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ‘জীবন সংগীত’-এ নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে। শুরু থেকেই যে সময় এদেশের নায়িকারা পোশাকের ব্যাপারে যথেষ্ট রক্ষণশীল সেখানে অলিভিয়া মিনি স্কার্ট পরে ফটোগ্রাফারদের সামনে যেতে ভয় পেতেন না। ঢাকাই ছবির প্রতিষ্ঠিত তারকারা যেসব দৃশ্য বা পোশাকে সাহসী হতেন না সেখানে অলিভিয়া জানিয়ে দেন, চরিত্র ও দৃশ্যের প্রয়োজনে আমি যে কোনো পোশাক পরতে পারি। প্রথমদিনকার ছবি ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’তে অলিভিয়া অতি আধুনিকা। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে যখন বাংলা সিনেমায় বোম্বে ধারার অ্যাকশন এলো, সেই প্রবাহে মাসুদ পারভেজের ‘মাসুদ রানা’ ও আজিমের ‘টাকার খেলা’য় অলিভিয়া নতুন মাত্রায় উন্মোচিত। ‘মাসুদ রানা’য় অলিভিয়ার নাচ ঢাকার সিনেমায় অভিনব। এখানে অলিভিয়ার নৃত্যকলা বোম্বের মুমতাজ, হেলেন প্রমুখ সেকালের হট তারকাদের সমতুল্য। বাংলা সিনেমার নায়িকাদের সনাতনী বেড়া ভেঙে অলিভিয়া এখানে অনেক উদার, খোলামেলা। এ সূত্রে নির্মাতারা তাকে যৌনাবেদনময়ী নায়িকার খোলসে দর্শক মাতাতে প্রয়াসী হলেন। পরিচালক অশোক ঘোষ বলেছিলেন, ‘অলিভিয়া অত্যন্ত গ্ল্যামারস। তার মধ্যে সেক্স অ্যাপিলটাই বেশি।’ ১৯৭৪-এ স্বামী পরিচালিত এস এম শফির ‘দূর থেকে কাছে’ নতুন অলিভিয়াকে জন্ম দিল। অলিভিয়া হয়ে উঠছিলেন বাঁধভাঙা যৌবনের প্রতিভূ। ১৯৭৬-এ ইবনে মিজানের ‘বাহাদুর’ অলিভিয়াকে ‘সেক্স বম্ব’ খেতাব পাইয়ে দিল। একই বছর এস এম শফির ব্যয়বহুল রঙিন ছবি ‘দি রেইন’ (যখন বৃষ্টি এল)-এ অলিভিয়া আরও বেশি সজিব, প্রাণবন্ত।

ঢাকার চলচ্চিত্রে যখন আধুনিক অলিভিয়াকে নিয়ে দর্শক- নির্মাতারা উন্মাতাল তখনই ওপার বাংলা থেকে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা পীযূষ বোসের ডাক এলো অলিভিয়ার কাছে। তাও আবার মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে তাকে অভিনয় করতে হবে। অলিভিয়া কলকাতায় গিয়ে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে করে এলেন ‘বহ্নিশিখা’ ছবির কাজ। নীহাররঞ্জন গুপ্তর কাহিনিতে নির্মিত এ ছবিতে আরও অভিনয় করেন সুপ্রিয়া দেবী, রঞ্জিত মল্লিক প্রমুখ। উত্তম কুমার স্বয়ং তখন অলিভিয়ার কাজের প্রশংসা করেছিলেন। কাকতালীয় ব্যাপার হলো- ছবিটি যখন ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তি পায় সেই একই দিনে এস এম শফী পরিচালিত ও অলিভিয়া অভিনীত বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য নির্মিত ‘দি রেইন’ ছবিটিও মুক্তি পায় বিশ্বজুড়ে। একদিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘বহ্নিশিখা’, অন্যদিকে সারা দুনিয়ায় ‘দি রেইন’-এর মহাসাফল্য। এ যেন একমাত্র অলিভিয়ার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর