শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বলিউড ড্রিম গার্ল হেমা মালিনী

বলিউড ড্রিম গার্ল হেমা মালিনী

অপরূপ রূপের জাদুতে বিমোহিত দর্শক। তিনি বলিউডের ড্রিম গার্ল খ্যাত অভিনেত্রী হেমা মালিনী। শুধু অভিনয় কারিশমা নয়, ক্যামেরার পেছনে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েও নিজেকে সফল প্রমাণ করেন হেমা। আর তারপর বড় পর্দা থেকে সোজা রাজনীতির আঙিনায়।  সবখানেই তার জয়জয়কার। আজ এ কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রকৃত ড্রিম গার্ল

‘ড্রিম গার্ল, ড্রিম গার্ল, কিসি সায়ের কি গজল ড্রিম গার্ল, কিসি ঝিলকা কমল ড্রিম গার্ল, কাহিতো মিলেগি, কাভিতো মিলেগি, আজ নেহিতো কাল...’। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পায় হেমা মালিনী অভিনীত ‘ড্রিম গার্ল’ ছবিটি। এতে ‘ড্রিম গার্ল’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন নজরকাড়া সৌন্দর্যের রানি হেমা। এ ছবির নায়ক ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তিনি হেমাকে ভালোবেসে এ চমৎকার গানে লিপসিং করেন। হেমার মনকাড়া রূপের জাদুতে ছবিটি দর্শকদের মাত করে দেয়। প্রমাণ করে দেয় আসলেই তিনি বলিউডের ড্রিম গার্ল। তামিল ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বলিউডে ‘শোলে’, ‘সীতা ঔর গীতা’, ‘মিরা’, ‘কিনারা’, ‘সন্ন্যাসী’, ‘মেহবুবা’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘প্রেম নগর’, ‘খুশবু’, ‘বাগবান’-এর মতো ছবি দিয়েই প্রমাণ করেন তিনি ‘স্টার ম্যাটেরিয়াল’।

বারবার ব্যর্থ

দক্ষিণ ভারতীয় আয়েঙ্গার পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও হেমার মা ছিলেন বাঙালি। তার নাম ছিল জয়া চক্রবর্তী। কয়েকটি ফিল্ম প্রযোজনা করলেও জয়া কোনোদিন সফল হননি। তার মেয়ে হেমা শৈশব থেকেই ফিল্মে অভিনয় করতে চাইতেন। ফলে দশম শ্রেণিতে উঠে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। সময়টা ১৯৬৪ সাল। দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সেই সময় হিট নায়িকা জয়ললিতা। তখনো তিনি রাজনীতিতে আসেননি। এম জে আর-এর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে জয়ললিতার হাতে একের পর এক কাজ। সেইসময় নিউকামার হেমার দিকে কেউ নজর দিতে চাননি। বারবার রিজেকশনের পাশাপাশি তাকে শুনতে হয়েছে তিনি স্টার ম্যাটেরিয়াল নন। কোনোদিন তার পক্ষে নায়িকা হওয়া সম্ভব নয়।

সফলতার মুখ

একসময় হেমা মাকে নিয়ে বম্বেতে এলেন। হেমাকে বলিউড বিমুখ করেনি। ১৯৬৮ সালে রাজ কাপুরের বিপরীতে ‘স্বপ্নো কা সওদাগর’ ফিল্মে হেমা ডেবিউ করেন। তবে তার অভিনয় প্রশংসিত না হলেও বম্বের প্রযোজকরা তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। কিন্তু হেমা বুঝতে পেরেছিলেন শুধু রূপ দিয়ে বলিউডে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ফলে নিজের অভিনয় ও হিন্দি ভাষাকে ক্ষুরধার করতে শুরু করেন তিনি। তার পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেব আনন্দের বিপরীতে হেমার ফিল্ম ‘জনি মেরা নাম’ ও ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ সুপারহিট হয়েছিল।

বড় সাফল্য

সত্তরের দশকের বিগ বাজেট ফিল্ম ‘ড্রিম গার্ল’ হেমাকে সুপরিচিত করে তুলেছিল। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ড্রিম গার্ল’। এ ফিল্মে ধর্মেন্দ্র হেমার বিপরীতে অভিনয় করলেও হেমাই ছিলেন মূল তুরুপের তাস। প্রমোদ চক্রবর্তীর পরিচালনায় তৈরি ‘ড্রিম গার্ল’-এর বাজেট তৎকালীন সময় কয়েক কোটি টাকা ছিল। ফিল্মে শুধু হেমার পোশাকের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল। তবে এখনো অবধি সেই অর্থের পরিমাণ কত ছিল তা রহস্যাবৃত।

ছোট্ট চরিত্র দিয়ে শুরু

১৯৬৫ সালে ‘পান্ডাভা বানাভাসাম’ ছবির একটি ছোট্ট চরিত্রের মাধ্যমে প্রথম বলিউডে প্রবেশ। ১৯৬৮ সালে ‘স্বপ্ন কা সওদাগর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মূল চরিত্রে রুপালি পর্দায় অভিষিক্ত হন।

সর্বাধিক উপার্জনকারী

তখন বলিউডে পুরুষ শাসন চলছে। একের পর এক তারকার জয়জয়কার। এরই মধ্যে পাল্লা দিয়ে শীর্ষ ১০ উপার্জনকারী শিল্পীর তালিকায় চলে আসেন হেমা মালিনী। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বলিউডের চতুর্থ সর্বাধিক উপার্জনকারী শিল্পী ছিলেন তিনি।

নাচে পারদর্শী

নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র। নাচই তার প্রথম ভালোবাসা। নাচে পটু হেমা ভারতীয় সব ধরনের নাচে দক্ষ। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও জানা আছে। শিল্পকলার প্রতি দারুণ আকর্ষণ রয়েছে হেমার। নাট্যবিহার কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায়ও নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন হেমা।

সৌন্দর্যের রহস্য

হেমার সৌন্দর্যের রহস্য জানার আগ্রহ অনেকেরই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তার সৌন্দর্যের একমাত্র রহস্য পানি। হেমা মালিনী ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি খান। এমনকি নিয়ম করে দুধও খান অভিনেত্রী। আর ত্বকের সঠিক পুষ্টি ও কোমলতা বজায় রাখার জন্য নিয়ম করে অ্যারোমা অয়েল ব্যবহার করেন। তবেই ত্বক একেবারে সতেজ ও তুলতুলে থাকে।  এ ছাড়াও তিনি বেশকিছু অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করেন যা তার সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অভিনেত্রীর মতে সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে শুধু ত্বকের যত্ন নয় মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি।

জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায়

তখন দুজনই পরিচিত মুখ। জিতেন্দ্র, হেমা মালিনী। উচ্চ বংশের ছেলে জিতেন্দ্র। পাত্র হিসেবে জিতেন্দ্রকে পছন্দ ছিল হেমার মা-বাবারও। জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর একদম শেষ মুহূর্তে নাকি তা ভেঙে দেন হেমা। বাড়ি থেকে বহু চেষ্টা করেও হেমা মালিনীর বিয়ে জিতেন্দ্রর সঙ্গে দিতে পারেনি। যাতে ধর্মেন্দ্রর কাছ থেকে সরিয়ে আনা যায় হেমাকে।

সঞ্জীব কুমার প্রেমে পড়েন

বলিউডের দক্ষ অভিনেতা সঞ্জীব কুমারও হেমা মালিনীর প্রেমে পড়েছিলেন। বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তাকে। হেমা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সঞ্জীব মদের নেশায় ডুবে যান। নিজের আত্মজীবনীতে হেমা লিখেছেন- বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিল তার।

মা-বাবার অমতে ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে

ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর প্রথমবার পর্দা ভাগাভাগি ১৯৭০ সালে, ‘তুম হাসিন ম্যায় জাওয়ান’ সিনেমায়। দুজনে একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রে প্রেম। হেমার পরিবার কিছুতেই মেনে নেবে না। ওইদিকে ধর্মেন্দ্রর সংসার আছে। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নসুন্দরীকে জিতে নেন ধর্ম সিংহ দেওল, বিবাহিত তারকা ধর্মেন্দ্র। ১৯৭৯ সালে দুজনের চার হাত এক হলো। শোনা যায়, দুজনেই বিয়ের আগে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। কারণ, নায়ক হয়ে ওঠার আগে ১৯৫৪ সালে প্রকাশ কউরের সঙ্গে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল ধর্মেন্দ্রর। প্রসঙ্গত, ধর্মেন্দ্রর আগের ঘরের সন্তান সানি দেওলের থেকে হেমা মালিনী বয়সে মাত্র ছয় বছরের বড়।

সর্বশেষ খবর