রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
মাসুদ রানার ৫০ বছর

আহমদ জামান চৌধুরী বললেন তুমিই হবে ‘মাসুদ রানা’

সোহেল রানা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আহমদ জামান চৌধুরী বললেন তুমিই হবে ‘মাসুদ রানা’

বাংলাদেশের প্রথম গোয়েন্দাভিত্তিক গল্পের চলচ্চিত্র ‘মাসুদ রানা’। এটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। সে হিসেবে চলতি বছর ‘মাসুদ রানা’ ছবির ৫০ বছর পূর্ণ হলো। ছবিটি নির্মাণ ও এতে মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেন মাসুদ পারভেজ। এ ছবিটি নির্মাণ ও এতে মাসুদ পারভেজের সোহেল রানা হয়ে ওঠার গল্পটি কিন্তু অনেক মজার। মাসুদ পারভেজ তখন নায়ক সোহেল রানা হননি। প্রযোজক হিসেবে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক তার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১ জন’ তিনিই প্রযোজনা করেন। তিনি ছিলেন একজন ছাত্রনেতা। ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ভিপি এবং সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের পর মাসুদ পারভেজ তার আবেগ আর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বন্ধুদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। তার প্রযোজিত ছবিটি প্রশংসা পেয়েছে অনেক। এ যাবৎ মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সেরা ছবি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’। এরপর আগ্রহ থেকেই নির্মাণ করতে উদ্যত হন কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের ‘বিস্মরণ’ গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রটি। কিন্তু নায়ক সংকটে পড়েন তিনি। ফলে ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো। চরিত্র নির্বাচনের জন্য চলচ্চিত্রনির্মাতা এস এম শফি, অভিনেত্রী সুমিতা দেবী আর চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলো। সারা দেশ থেকে অনেকেই ছবি পাঠালেন ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রটির জন্য। কিন্তু হঠাৎ একটি মজার ঘটনা ঘটল। আহমদ জামান চৌধুরী আচমকা একদিন মাসুদ পারভেজকে এসে বললেন, ‘তুমিই হবে মাসুদ রানা’। মাসুদ পারভেজ বলেন, আহমদ জামান চৌধুরী তখনই নায়ক হিসেবে আমার নাম ঠিক করলেন ‘সোহেল রানা’। এরপর আহমদ জামান চৌধুরীই আমাকে ড্যাশিং হিরো উপাধি দেন। এ ছবিটি মুক্তির মাধ্যমে দর্শকরা আমাকে প্রথম নায়ক হিসেবে বড় পর্দায় দেখতে পান। এ ছবির মাধ্যমেই আমি প্রথম একসঙ্গে নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে কাজ করি। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালের ২৪ মে। এ সিনেমায় অভিনয় করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী ও অলিভিয়া। আরও অভিনয় করেন গোলাম মুস্তাফা, ফতেহ লোহানীসহ অনেকেই। এ সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কোনো চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো কোনো গোয়েন্দা চরিত্রের দেখা মেলে। মাসুদ রানা মূলত কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট একটি কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬৬ সাল থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনীর ব্যানারে প্রকাশিত মাসুদ রানা সিরিজে এ চরিত্রকে নিয়ে চার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। কাজী আনোয়ার হোসেন এ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। এ ছবির গান ‘মনেরও রঙে রাঙাবো, বনেরও ঘুম ভাঙাবো...’ আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সেলিনা আজাদ। তার স্বামী বরেণ্য সংগীতকার আজাদ রহমান ছিলেন এ গানের গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের অভূতপূর্ব সাফল্যে ছবিটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে       অনন্য স্থান গড়ে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর