শিরোনাম
সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃণাল সেনের জন্যই আমার সিনেমায় আসা

মৃণাল সেনের জন্যই আমার সিনেমায় আসা

বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি অঞ্জন দত্ত। গান লেখেন, সুর করেন আবার নিজেই কণ্ঠে তোলেন। দোর্দণ্ড প্রতাপে অভিনয় করছেন, চলচ্চিত্র পরিচালনাও করছেন। গুরু মৃণাল সেনের ‘চালচিত্র’ দিয়ে অভিনয় শুরু হলেও সম্প্রতি মৃণাল সেনকে নিয়ে তার নির্মিত-অভিনীত ‘চালচিত্র এখন’ নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ জীবনে  এ কিংবদন্তি সম্মুখীন হয়েছেন বহু অভিজ্ঞতার। তার সেই অভিজ্ঞতা ও সমসাময়িক নানা বিষয় তুলে ধরেছেন - পান্থ আফজাল

 

মৃণাল সেন একজন অঞ্জন দত্তের জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?

মৃণাল সেন না থাকলে আমি সিনেমার জগতে আসতাম না। আমি অনেক কিছুই করতাম না। আমি হারিয়ে যেতাম। কারণ আমার এদেশে (ভারতে) থাকার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আমার থিয়েটার করতে ভালো লাগত, তাই আমি জার্মানি চলে যেতে চেয়েছিলাম। সিনেমাতে কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না, বাংলা সিনেমা তো নয়ই। যে কোনো কারণে তিনি আমার থিয়েটার দেখে পছন্দ করেন এবং আমাকে জোর করে ঢুকিয়ে দেন। আমি জার্মানি চলে যাই কিন্তু আবার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসি। ফিরে এসে উনার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে তার সহকারী হলাম। তার গল্প লিখলাম, চিত্রনাট্যও লিখতাম। একটি সিরিয়াল হয়েছিল, সেটির  লাইন প্রডিউসারও আমি ছিলাম। টাকা জোগাড় করে এনেছিলাম আমি। বাড়ির লোক হয়ে গেলাম, প্রায় উনার সন্তানের মতো। একসময় তো বন্ধুও হয়ে গেলাম। মানে কী বলব আমি জানি না! এরকম একটা অদ্ভুত সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিল। একটা ২৪ বছরের ছেলের সঙ্গে একজন ৫৭ বছরের লোকের শুরু। শেষকালে আমারও টাক পড়ে গেল। উনিও প্রায় ৯০ ক্রস করতে করতে চলে গেলেন।

 

মৃণাল সেনের সঙ্গে শুটিং চলার সময় এবং এর আগের-পরের ২৫ দিনের কিছু ঘটনা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘চালচিত্র এখন’ নির্মাণ করেছেন...

তার (মৃণাল সেন) শত বছর হয়েছে। এত বছর পর এসে ভিতর থেকে মনে হচ্ছিল যদি আমি তাকে নিয়ে কিছু না করি তাহলে খুবই অন্যায় করব। করা দরকার। আসলে এ জীবনে আমার কোনো গান, সিনেমা কিংবা থিয়েটারে মৃণাল সেন আসেননি। আমি গান লিখেছি, সিনেমা বানিয়েছি, নাটক করেছি কিন্তু মৃণাল সেন কখনো আসেননি অর্থাৎ আমার কোনো কাজে তিনি প্রতিফলিত হননি। কেন আসেননি আমি ঠিক জানি না। আমি এতই ব্যক্তিগত যে দূর থেকে তাকে দেখতেই অনেকটা সময় লেগেছে। দূর থেকে না দেখলে তাকে নিয়ে কী করে সিনেমা বানাব? তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন, শিখিয়েছেন। তিনি আমার জন্য সিনেমার দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে সিনেমা বানাতে সময় লেগেছে। দীর্ঘদিন মাথায় গেঁথে থাকা মৃণাল সেনের গল্পগুলো মাথায় ঘুরছিল। তাই একসময় নিজেই অর্থায়ন করে তার শতবর্ষে ‘চালচিত্র এখন’ নির্মাণ করি। এই ৭০ বছর বয়সে এসে খুবই আনন্দ হচ্ছে যে, সততার সঙ্গে কাজটি করেছি। অন্য কারও টাকা হলে হয়তো এভাবে নির্মাণ করতে পারতাম না। তবে আমি মৃণাল সেনকে পুজো করিনি সিনেমায়। মানুষ হিসেবেই দেখিয়েছি।

 

মৃণাল সেনের চরিত্রেই ‘পদাতিক’-এ আমাদের চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন। তাকে নিয়ে ছবি করার কথা ছিল, সেটা হবে?

আমাদের কথা হয়েছিল। চঞ্চলের অভিনয়ের ভক্ত আমি। সেটা ‘মনের মানুষ’ থেকে। ছবিটি দেখেই আমি উত্তেজিত হয়েছিলাম। এরপর যোগাযোগ করি। অনেকদিনের যোগাযোগ আমাদের। একটা ছবিতে কাজ করার কথা হয়েছিল। তবে সেই ছবিটা হয়নি। আর আমার ব্যাপার হচ্ছে জানেন তো, যে কারণে কম ছবি করেছি, কম অভিনয় করেছি বা কম গান লিখেছি-আমার যেটা মনে হয় করার সেটা আমি করবই। চঞ্চলকে ভেবে যদি কোনো চরিত্র লিখে থাকি, চঞ্চলের ডেট নাই তাহলে অন্য কারও সঙ্গে, সেটা কিন্তু করতে পারব না। ভালো একটা হলে তাকে নিয়েই করব। তো অনেক দূর এগিয়েছিল। আমি মনে করি চঞ্চল অসম্ভব পাওয়ারফুল অ্যাক্টর। এখানে আরও অনেক পাওয়ারফুল অ্যাক্টর আছে, আর আসলে হয়নি। তবে কোনোদিন যদি হয় তবে ওকে নিয়েই কাজটি করব। ওকে বাদ দিয়ে করব না। ৩-৪টা চরিত্রের গল্প ছিল এবং ওর চরিত্রটা ভীষণরকম ছিল; কিন্তু সবকিছু ঠিক হয়ে গেলেও শেষমেশ হলো না। আর হ্যাঁ অফকোর্স আমি ওর অভিনয়ের ভক্ত এবং যোগাযোগ আছে। তবে ওর এ ‘পদাতিক’ সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। ছবিটা কমপ্লিট হয়েছে সেটা জানি এবং সম্ভবত ওটা লন্ডন-ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে আর সম্ভবত কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এ দুটো আমি জানি। তবে সত্যিই আমি ছবিটি সম্পর্কে আর বেশি কিছুই জানি না।

 

সবাই বলে অঞ্জন দত্ত সেই ১৫-তেই আটকে আছে...

১৫-তে আটকে নেই আমি! (একটু দৃঢ়স্বরে)

 

রমা, রঞ্জনা, মালা, বেলাবোস, জয়িতা, মেরি এ্যানের সঙ্গে আপনার বাস্তব জীবনের কোনো সম্পর্ক আছে?

জীবনে আমি প্রচুর মহিলার সঙ্গে প্রেম করেছি; কিন্তু বাস্তব জীবনে রমা, রঞ্জনা, মালা, বেলাবোস, জয়িতা, মেরি এ্যান- এদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই! এগুলো গল্পের চরিত্র। তবে এ মানুষগুলো আমার অনেক চেনা মনে হয়। আর শুধু মেয়েদের নাম কেন? অনেক ছেলের নামেও তো গান করেছি! আলীবাবা, হরিপদ আমার খুব চেনা। জারমিন, স্যামসন আমার পরিচিত নয়; তবে আমি কিন্তু তাদের দেখেছি। জীবনের উপলব্ধি তারা।

 

‘মিস্টার হল’ নামে আদৌ কি কেউ ছিল?

এ নামে কেউ ছিল না, একজন মহিলা ছিল। তাকে নিয়ে গানটা বানানো। তিনি আমাদের অনেক সিনিয়র, মিউজিক টিচার টিমে ছিলেন। প্রথম তার প্রেমে পড়েছিলাম।

 

অঞ্জনের সবকিছুর অনুপ্রেরণা কে?

কে আবার, আমি নিজে! (মুচকি হেসে)।

সর্বশেষ খবর