সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তম কুমারের সন্তানরা কেন চলচ্চিত্রে নেই

উত্তম কুমারের সন্তানরা কেন চলচ্চিত্রে নেই

পুত্র গৌতম ও স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম কুমার

মহানায়কের দুই সন্তান, গৌতম ও সোমা। তারাও চেয়েছিলেন রুপালি পর্দায় আসবেন, বাবার মতো অভিনয়ে আলো জ্বালাবেন। কিন্তু বাবার আপত্তির কারণেই তারা এ জগতে আসতে পারেননি। কিন্তু কেন? সে কথাই জানাচ্ছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

গৌতমকে সরাসরি না

তিনি অমর। কত নায়ক এসেছেন বা গিয়েছেন কিন্তু কেউ উত্তম কুমারের মতো হয়ে উঠতে পারেনি। তার নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়ও সিনেমা জগতে পা রেখেছেন। সিরিয়াল করে তিনি ভালো সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু সিনেমাতে তিনি তেমন পাত্তা পাননি। নাতি অভিনয়ে এলেও ছেলে গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে কোনোদিন টালিগঞ্জ পাড়ায় যেতে দেননি উত্তম কুমার। এর পেছনে ছিল একটি গভীর তাত্ত্বিক বোধ।

 

কেন আপত্তি করেছিলেন?

পড়াশোনা শেষ করার পর বাবার মতো গৌতম চট্টোপাধ্যায় সিনেমায় আসার কথা ভেবেছিলেন। উত্তম কুমারের বিরাট স্টারডম দেখে নিজেও হিরো হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ভেবেছিলেন বাবার পথেই এগিয়ে যাবেন। আসলে উত্তম কুমারের মতো নায়ক হওয়ার স্বপ্ন তখন অনেক যুবক দেখত। গৌতমও তাদের মধ্যে একজন। সেই ভাবনা নিয়ে বাবা উত্তম কুমারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। বাবার সঙ্গে আলোচনা করেই এগোতে চেয়েছিলেন। সিনেমার অফার যে আসেনি তাও নয়। ‘অন্ধ অতীত’ নামের একটি ছবি দিয়ে ডেবিউ করার কথা ছিল গৌতমের। এ নিয়েই বাবার সঙ্গে পরামর্শ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার পরামর্শ তাকে হতাশ করে। সবকিছু শুনে বাবা উত্তম কুমার ছেলেকে সিনেমা থেকে সরে আসতে বলেন। বাবার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন গৌতম।

অভিনেতার ছেলে অভিনেতা হবেন, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে স্টারকিডদের বাজার। কিন্তু তখন সময়টা এমন ছিল না। বাঙালির মহানায়ক তার ছেলেকে বুঝিয়েছিলেন, অভিনেতাদের জীবন আতশবাজির মতো। যতদিন জ্বলজ্বল করবে, আলো দিতে পারবে, ততদিন কদর। আলো একবার ফুরিয়ে গেলে সব শেষ। তখন আর কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না। প্রথমে বাবার কথা মানতে রাজি ছিলেন না গৌতম। দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর তিনি বাবার কথা বুঝতে পারেন। আর কোনোদিন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। উত্তম কুমার ছেলেকে ওষুধের দোকান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটিও তেমনভাবে চালাতে পারেননি গৌতম চট্টোপাধ্যায়। খুব অল্প বয়সেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

 

সোমাকে কেন সম্মান দেননি?

উত্তম কুমারকে বাবা হিসেবে মেনেছেন, তবুও সুপ্রিয়ার মেয়েকে সম্মান দেননি মহানায়ক। মৃত্যুর এতগুলো বছর পরও উত্তম কুমারকে নিয়ে চর্চা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং মহানায়কের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলা সিনেমার মেগাস্টারের জীবনে অনেক নারীর আগমন হলেও সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা ছিল সবচেয়ে বেশি। বিবাহিত সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বিবাহিত উত্তম কুমারের লিভ ইন রিলেশন নিয়ে নানা ধরনের কটু কথা হয়েছে। যার প্রভাব এসে পড়েছিল সুপ্রিয়াকন্যা সোমা চট্টোপাধ্যায়ের  জীবনেও।

আজীবন উত্তম কুমারকে বাবা হিসেবে মেনেছেন, তবুও সুপ্রিয়ার মেয়েকে সম্মান দেননি মহানায়ক জীবনে অনেক নারী এলেও মহানায়ক বাস্তবে ছিলেন একা। এমন একটি মানুষের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। কিন্তু তখন তিনি বিবাহিত। এক সন্তানের জননী। তবুও সুপ্রিয়া দেবীর ডাকে গৌরী দেবী ও সাজানো সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন উত্তম কুমার। সুপ্রিয়া দেবীর স্বামীর নাম ছিল বিশ্বনাথ চৌধুরী। তাদের মেয়ের নাম সোমা। সুপ্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর সোমাকে দত্তক নিয়েছিলেন উত্তম কুমার। দত্তক নিলেও কোনোদিন মেয়ের মর্যাদা সোমাকে দিয়ে যেতে পারেননি তিনি। আজীবন উত্তম কুমারকে বাবা হিসেবে মেনেছেন, তবুও সুপ্রিয়ার মেয়েকে সম্মান দেননি মহানায়ক।

ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনো বাচ্চা দত্তক নিতে গেলে স্ত্রীর অনুমতি লাগে। কিন্তু সোমাকে দত্তক নেওয়া নিয়ে কোনোদিন সম্মতি জানাননি গৌরী দেবী। এর ফলে আইনত সোমা বাবা উত্তম কুমারের কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারেননি। চিরদিন বঞ্চিত হয়ে থেকে যান। তবে বাবার আদর থেকে কখনো বঞ্চিত হননি।

সোমাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন উত্তম কুমার। নিজের হাতে সোমার কন্যাদান করেছিলেন। ছেলে গৌতমের মতোই তিনিও উত্তম কুমারকে ‘বাবি’ বলে ডাকতেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মেয়ের বৈবাহিক জীবন সুখের না হওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। খুব চিন্তায় থাকতেন বিষয়টি নিয়ে। তবে মেয়ের সঙ্গে উত্তম কুমারের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। এ সম্পর্ক নিয়ে পরবর্তীতে অনেক নোংরা কথা রটেছে। বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে কলুষিত করেছে সমাজ। এ নিয়ে খুব আঘাত পেয়েছিলেন। বারবার চেয়েছিলেন মেয়ে তার স্বামীর কাছে ফিরে যাক। তা আর হয়নি। আর এ কারণেই মেয়ে হিসেবে যোগ্য সম্মান বা তাকে বড় পর্দায় আনতে পারেননি মহানায়ক।

সর্বশেষ খবর