রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলাপন

প্রাপ্তির আশায় কখনো কাজ করিনি

প্রাপ্তির আশায় কখনো কাজ করিনি

এবার নৃত্যকলায় একুশে পদক পেয়েছেন দেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার শিবলী মোহাম্মদ। দেশীয় নৃত্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নৃত্যের সেতুবন্ধনে যার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। কত্থক নাচের জন্য দুই বাংলায় তার বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে।  তার কাছে নৃত্য শিখেছেন অসংখ্য শিল্পী। এ প্রখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় কেমন লাগছে?

অনুভূতি দুই রকমের। প্রথমত খুবই ভালো লাগছে। একজন শিল্পীর জন্য যে কোনো অর্জনই আনন্দের। আমারও এ অর্জনে ভীষণ রকম আনন্দ লাগছে। আমার সবসময় লক্ষ্য ছিল কাজ করে যাওয়া। প্রাপ্তির আশায় কখনো কাজ করিনি। কী পাব আর কী পাব না, সেই নিয়ে কখনোই ভাবিনি। শুধুই কাজটা ঠিকঠাক মতো করে গেছি, দিয়ে গেছি উজাড় করে। আর আমার দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে মনোনিবেশ করে গেছি। এর আগেও শিল্পকলা পদক পেয়েছি। এ স্বীকৃতি পেয়েও আনন্দ ও গর্বটা অনেক বেশি ছিল। আমি মনে করি, এগুলো সবই ঈশ্বরের কৃপায়। যে যা কিছুর প্রাপ্য তা এক সময় না এক সময় পাবেই। শুধু কাজ করে যেতে হবে ভালো কিছুর জন্য। পাশাপাশি খুবই কষ্টের বিষয় যে, আম্মা ও বড় বোন এ সুখবরটা জেনে যেতে পারলেন না। আম্মা তো ৬ মাস আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর বড় বোন চলে গেছেন ১ বছর হয়েছে। এখনো এ দুই প্রিয় মানুষের শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মনে কষ্ট যে, এত বড় প্রাপ্তিটা তাদের দিতে পারলাম না। বড় বোন সবসময় বলত, ‘সবাই পায়, তোরা এত এত কাজ করিস, তোরা কেন স্বীকৃতি পাস না?’ এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর অনেক কান্নাকাটি করেছি। তবে মনে হচ্ছে, দূর থেকে তিনি এ সুখবরে খুশি হয়েছেন। অনেক দোয়া করছেন। আম্মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। সাদী ভাইও এবার শিল্পকলা পদক পেয়েছেন। এটাও ভীষণ আনন্দের। আর আমি এ প্রাপ্তিতে সরকারপ্রধান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও একুশে পদক কমিটিতে যারা ছিলেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা জানাচ্ছি আমার ভালোবাসার মানুষদের। আমি কখনো ভাবিনি এত মানুষ আমাকে ভালোবাসে, আমার কাজকে পছন্দ করে। আমি সত্যিই দারুণভাবে আবেগে আপ্লুত। 

 

নৃত্যশিল্পীদের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে মনে হয়?

নিশ্চয়ই মূল্যায়ন হয়েছে। তবে এ মূল্যায়নের যেন ধারাবাহিকতা থাকে। এদেশে অনেক যোগ্য নৃত্যশিল্পী রয়েছে। তারা যদি ধারাবাহিকভাবে স্বীকৃতি পায় সেটা হবে আমার কাছে আনন্দের। এদের মূল্যায়ন করলে সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতির বিকাশ-বিস্তার হবে। সবার মধ্যে উৎসাহ তৈরি হবে।  

 

আপনার জীবনে কোনো আক্ষেপ রয়েছে?

আমার কোনোদিনই কোনো বিষয়ে আক্ষেপ ছিল না। কেন পদক দেওয়া হয় না, কেন পদক পাই না, আমাকে কেন দিল না-এসব নিয়ে কখনো চিন্তাও আসেনি। আমি মনে করি, ঈশ্বর যার জীবনে যেটা ঘটায় সেটা ঘটবেই। বাংলাদেশের একজন পুরুষ নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমি সৌভাগ্যবান যে, আমি শুরু থেকেই কর্মের প্রতিদান পেয়েছি। আমাকে কখনোই স্ট্রাগল করতে হয়নি। সে হিসেবে আমি সর্বদা শামীম আরা নীপার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, যে সময় সে সুপারস্টার সে সময় আমার সঙ্গে নাচ করেছে জুটি গড়ে। আস্তে আস্তে দুজনের কেমিস্ট্রি সবাই পছন্দ করেছে। তাই বলব, আমি জীবনে যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছি মেইন ড্যান্সার হিসেবে।

 

অন্য প্রসঙ্গে আসি। সামনে ব্যস্ততা কেমন?

খুবই ব্যস্ত। দম ফেলানোর সময় পাচ্ছি না এখন। ২১ তারিখ সন্ধ্যায় আমার ও নীপার পরিচালনায় রবীন্দ্র সরোবরে নৃত্যাঞ্চলের ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে নৃত্য পরিবেশনা রয়েছে। ২০ তারিখ সকালে তো প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক নিতে যাব। আর মার্চের ২ তারিখ নৃত্যাঞ্চলের ৬০-৭০ জনকে নিয়ে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’র অনুষ্ঠানের নাচের শুট রয়েছে। নারী দিবস উপলক্ষে ওসমানী মিলনায়তনে মার্চের ৮ তারিখ নৃত্য পরিবেশনা করব আমরা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। এরপর ১০ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৫তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আইসিসিবিতে উপস্থিত থাকব আমি আর নীপা।

 

শিবলী-নীপার রসায়ন, বন্ধুত্ব...

আমাদের বন্ধুত্বের বয়স তাও তো তিন দশকের অধিক। আর নীপার সঙ্গে এ বন্ধুত্বটা সারা জীবনই অটুট থাকবে। দুটি মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব কিন্তু বলে-কয়ে হয় না। একটা মানুষকে তো জানতে হয়, চিনতে হয়-তাই না? অটোমেটিক্যালি বন্ধুত্বটা হয়ে যায় আর কি! এমন না যে, আজকে ওর সঙ্গে দেখা হলো আর তখনই বন্ধুত্বটা হয়ে যাবে; দুজন মানুষের মধ্যেকার চিন্তা, ক্যামেস্ট্রি যখন মিলে যায় তখনই বন্ধুত্ব হয়। আর অবশ্যই নৈতিক চরিত্রে মিল থাকতে হয়। তাই তো নীপার সঙ্গে আমার রসায়নটা এত ভালো।

সর্বশেষ খবর