সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কেন হিন্দি সিনেমা কম করেছেন সুচিত্রা

আশির দশকে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছেপেছিল। তাতে প্রতিবেদক লিখেন- ‘মহানায়িকা জানতেন কখন, কোথায় তাকে থামতে হবে, না বলতে হবে।

আলাউদ্দীন মাজিদ

কেন হিন্দি সিনেমা কম করেছেন সুচিত্রা

সুচিত্রা সেন, বাঙালির অহংকার, দুই বাংলার মেয়ে তিনি। এপারের পাবনার মেয়ে ওপারে টালিগঞ্জে থিতু হলেন। ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে মোট ৬১টি ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে ২৫টিতেই তার নায়ক ছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। সুচিত্রা সেন হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি ছবির সংখ্যা মাত্র সাতটি। হিন্দি ছবিতে সফল এবং তার যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি বলিউডের ডাকে খুব একটা সাড়া দেননি, এ প্রশ্ন সিনেবোদ্ধা থেকে দর্শক- সবার মনেই চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিল। উত্তরটাও সহজে পাওয়া গিয়েছিল। আশির দশকে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছেপেছিল। তাতে প্রতিবেদক লিখেন- ‘মহানায়িকা জানতেন কখন, কোথায় তাকে থামতে হবে, না বলতে হবে। সাফল্যের পেছনে কোনোদিনই ছোটেননি তিনি। বরং পছন্দের ভালো চিত্রনাট্যের খোঁজ করতেন সব সময়। তেমনটা পেলেই সায় দিতেন অভিনয়ে। তাই তো সাফল্য আর জনপ্রিয়তা তার কাছে এসে ধরা দিয়েছে। তিনি কেবল উৎকর্ষতার সন্ধান করেছেন, তারকাখ্যাতি আর সাফল্য তাকে খুঁজে নিয়েছিল।’ এ প্রবন্ধে হিন্দি ছবির প্রতি সুচিত্রার অনাগ্রহের দুটি কারণ তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে একটি হলো, এ বাঙালি মহানায়িকার ইচ্ছা ছিল সেলুলয়েডে বাংলাকেই তিনি প্রাধান্য দেবেন। দ্বিতীয়ত: হিন্দি ছবির যেসব প্রস্তাব তিনি পেয়েছিলেন তাতে তার অভিনয় করা সাতটি ছাড়া বাকিগুলোর গল্প তার মনের সঙ্গে মেলেনি। তাই তিনি হিন্দি ছবিকে পারতপক্ষে এড়িয়েই গেছেন।

 

বলিউডের যে ৭ ছবিতে

দেবদাস : ১৯৫৫ সালে বিমল রায় নির্মাণ করলেন দেবদাস। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া এ ছবির মাধ্যমেই বলিউডে পা রেখেছিলেন মিসেস সেন। ছবিতে দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার, পার্বতী অর্থাৎ পারোর চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়েছিলেন সুচিত্রা সেন।

মুসাফির : ১৯৫৭ সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচলানায় ‘মুসাফির’ ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন শেখর কুমার।

সরহাদ : ১৯৬০ সালে শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল সরহাদ। ওই চলচ্চিত্রে দেব আনন্দের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন।

বোম্বাই কা বাবু : এ ছবিতে ফের জুটি বাঁধেন দেব আনন্দ এবং সুচিত্রা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। ছবিটির পরিচালক ছিলেন রাজ খোসলা। ও’ হেনরির ছোটগল্পের ওপর ভিত্তি করেই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। আদপে ছবিটি ছিল রহস্য কাহিনিনির্ভর।

মমতা : উত্তর ফাল্গুনী ছবিটি জনপ্রিয় হওয়ার পরে ১৯৬৬ সালে একই কাহিনি নিয়ে হিন্দি ভাষায় তৈরি হয় মমতা। অসিত সেন পরিচালিত এ ছবিতে পান্নাবাই চরিত্রে অভিনয় করেন সুচিত্রা। অন্য দুই দিকপাল অভিনেতা ধর্মেন্দ্র এবং অশোক কুমার ছবিতে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন।

চম্পাকলি : নন্দলাল যশবন্তলালের পরিচালনায় ভারত ভূষণের বিপরীতে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৫ সালে।

আঁধি : রাজনৈতিক কাহিনিনির্ভর বিতর্কিত এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৫ সালে। অনেকেই বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর জীবনের ছায়া অবলম্বনে এ ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। ছবির নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। ছবিতে সঞ্জীব কুমারের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছিল।

হিন্দি ‘দেবদাস’ সিনেমায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেন

কেন রাজ কাপুরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন তারা সবাই তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বেশ অবগত। সেই সঙ্গে ছবি সই করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন প্রচন্ড খুঁতখুঁতে। বাংলা হোক বা হিন্দি, অনেক বেছে বেছে ছবিতে কাজ করেছিলেন সুচিত্রা সেন। তাকে নিজের ছবিতে নেওয়ার জন্য মুম্বাই থেকে কলকাতা এসে পৌঁছেছিলেন স্বয়ং রাজ কাপুর। ‘আমার বন্ধু সুচিত্রা সেন’ বইতে রাজ কাপুরের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের যোগাযোগের এ বিষয়টির উল্লেখ আছে। লেখক অমিতাভ চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় সুচিত্রা নিজেই জানিয়েছিলেন কেন তিনি রাজ কাপুরের ছবিতে অভিনয় করতে রাজি ছিলেন না। একটাই কারণ ছিল- রাজ কাপুরের ব্যক্তিত্ব নাকি তার পছন্দ হয়নি।

বলিউডের সেরা পরিচালক তথা অভিনেতা সুচিত্রাকে তার ছবির প্রস্তাব দিতেই তা ফিরিয়ে দেন মহানায়িকা। সুচিত্রা সেনের কথায়-‘পুরুষদের মধ্যে আমি রূপের খোঁজ করি না। আমি বুদ্ধিমত্তা এবং তীক্ষè বার্তালাপ পছন্দ করি। আমি প্রায় তৎক্ষণাৎ রাজ কাপুরের অফার রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। উনি নায়িকার চরিত্রের অফার নিয়ে আমার বাড়ি এসেছিলেন।’ সুচিত্রা আরও বলেন, ‘আমি বসামাত্রই উনি আচমকা আমার পায়ের সামনে এসে বসেন এবং আমায় গোলাপের তোড়া উপহার দেন। আমি অফার ফিরিয়ে দিই। ওনার ব্যক্তিত্বটা আমার ভালো লাগেনি। যেভাবে উনি আচরণ করেছিলেন, আমার পায়ের সামনে বসেছিলেন, একজন পুরুষকে তা শোভা দেয় না।’

 

 

 

সর্বশেষ খবর