শিরোনাম
বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলাপন

আমাদের জীবন সবার মতো নয়

আমাদের জীবন সবার মতো নয়

বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। চার বছর পরপর তাঁর জন্মদিন আসে। ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নাট্যজন ৭৬ বসন্তে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আরণ্যক নাট্যদল আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী জন্মোৎসবের। বিশেষ এ দিন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন পান্থ আফজাল

 

৭৬ বসন্তে পা দিচ্ছেন। কেমন ছিল এ দীর্ঘ পথচলা?

আসলে আমরা যে সেক্টরে কাজ করি সেটি কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নানা রকম চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। পথচলায় থাকে ব্যর্থতা, হতাশা, আনন্দ, সাফল্য, বিষাদসহ নানা দিক। সবার মতো কিন্তু আমাদের জীবন নয়। জীবন কঠিনতম; অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়। সব সময় ভাবতে হয় এমন কাজে দর্শক মুগ্ধ বা হতাশ হবে কি! যেন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পথচলা। এতটি বসন্ত পার করেছি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে।

 

জন্মদিনকে ঘিরে ‘আরণ্যক’ জন্মোৎসবের আয়োজন করেছে...

ভালো লাগছে। জীবনকে ফিরে দেখার একটি সুযোগ হয়েছে। এই বয়সে, এই সময়ে নিজের এমন আয়োজন আনন্দের।

 

বিশেষ দিন উপলক্ষে প্রত্যাশা?

জীবনে স্মৃতিচারণের সময় যেন না আসে। সবসময় যেন কিছু না কিছু কাজ করে যেতে পারি সেটাই প্রত্যাশা করি। এ দেশ, সংস্কৃতি, গান মঞ্চ- এর ভিতর দিয়েই তো একটা জীবন পার করে দিলাম। তাই সবাইকে নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছা করে আর কোনো কিছু বলার নেই।

 

অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়?

জন্মের পর থেকেই ভাষা আন্দোলন দেখেছি। সেসময় বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। এরপর দেখেছি আইয়ুবের শাসন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র বিভীষিকা, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় আর ৭৫’র নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় ছিলাম দীর্ঘ ১০ বছর। জীবনে যে কত ধরনের উত্থান-পতন দেখেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

 

আপনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতেন...

সেটা ১৯৬৭ সালের কথা। টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতাম। যার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। সেসময় কিছু কমেডি নাটকও লিখেছি। তবে তখন তেমন করে নাট্যভাবনা শুরু হয়নি।

 

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও তো যুক্ত ছিলেন...

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই এবং জড়িত হই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। সেসময় কলকাতায় নাটক দেখেছি যা আমার নাট্যজীবন বিকাশের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এ অনুপ্রেরণা থেকেই ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আরণ্যক নাট্যদল গঠন করি।

 

মঞ্চনাটকে স্বাধীনতার চেতনা কতটুকু উপস্থাপিত হচ্ছে?

অনেকই তো হচ্ছে। অন্যান্য মাধ্যমে যতটা না হচ্ছে, আমি তো মনে করি স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে সবকিছুই থিয়েটারে উপস্থাপিত হচ্ছে আরও বেশি গভীরভাবে।

 

বাণিজ্যিক কারণে মঞ্চনাটক কিছুটা পিছিয়েছে?

হুমম... পিছিয়ে তো পড়ছেই। আমরা সরকারকে বিভিন্ন সময় বলেছি মঞ্চনাটক কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট বেতন বরাদ্দ করার জন্য, সেটা তো তারা করছেন না।

 

মঞ্চনাটকের সংকটগুলো কী?

আমাদের হল নেই, আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই।

 

অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেলের কারণে টিভি নাটকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে?

হ্যাঁ, তা তো পড়ছেই। মঞ্চ-টিভি দুই নাটকেই এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

 

নাটকে সিনিয়র শিল্পীদের মূল্যায়ন কি হচ্ছে বলে মনে করেন?

মূল্যায়ন হচ্ছে কই? হচ্ছে না। সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। নাটকে বাবা থাকলে মা নেই, আবার মা থাকলে বাবা নেই! তাই এসব নাটক দর্শকদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না। চরিত্র কাটছাঁট করা হচ্ছে। সিনিয়র শিল্পীদের সম্মানী, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।

 

মঞ্চ কেন দর্শকহীন?

নতুন মঞ্চনাটক চাই; তার চেয়ে বেশি বেশি চাই মঞ্চ।

সর্বশেষ খবর