সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বহিষ্কার জায়েদ খান, ভোট সংকটে শিল্পী সমিতি

শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কী হচ্ছে!

শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কী হচ্ছে!

আগামী ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে এখন প্যানেল গঠনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।  তা ছাড়া জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ ও পান্থ আফজাল

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ এপ্রিল। নির্বাচন নিয়ে এখনো তেমন তোড়জোড় দেখা না গেলেও এফডিসিতে প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রতিদিনের আড্ডায় উঠে আসে প্রসঙ্গটি। জানা গেছে, শিল্পীদের মধ্যে চলছে প্যানেল গোছানের প্রস্তুতি। আগামী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দুটি প্যানেলের অংশগ্রহণ নিয়ে চর্চা চলছে। এতদিন গুঞ্জন চলছিল এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়বেন অভিনেত্রী নিপুণ। এবার এ গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে নিপুণ জানিয়েছেন, সভাপতি নয়, সাধারণ সম্পাদকের পদেই লড়বেন তিনি। নিপুণ বলেছেন, ‘এটা পুরোপুরিই গুজব। আমি সভাপতি পদে নয়, সাধারণ সম্পাদকের পদেই নির্বাচন করব। আর আমার প্যানেলে সভাপতি কে থাকছে সেটা নিয়েও চমক রয়েছে।’ সভাপতি পদে কে লড়বেন এমন প্রশ্নের জবাবে নিপুণ আরও বলেন, ‘এখনো বলার সময় আসেনি। আমাদের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিল্পী তা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারাই বিষয়টি দেখছেন। এখন প্যানেল গোছানোর কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী মাসের মাঝামাঝিতে প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারব।’ এদিকে মিশা সওদাগর ও ডিপজল মিলে একটি প্যানেল তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। প্যানেলে সভাপতি পদে লড়বেন মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক পদে ডিপজল। এ প্যানেলে রুবেলও থাকবেন বলে জানান মিশা সওদাগর। এর আগে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নিতে পারে। আগামী নির্বাচনে অমিত হাসান-নিপুণ এক প্যানেল থেকে নির্বাচনে যাবেন। এতে সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে অমিত হাসানকে আর সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে পারেন নিপুণ। এ প্যানেলে নায়ক ইমনও থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। অন্যটি হলো- ডিপজল-মিশা প্যানেল। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অমিত হাসান বলেন, ‘আমি নির্বাচন করছি নিপুণের প্যানেল থেকে এটা সত্যি। তবে কোন পদে করব এখনো ফাইনাল করিনি। আশা করছি, ৩-৪ দিনের মধ্যেই ঘোষণা দেব। অন্যদিকে সাইমন সাদিক বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে যে প্যানেলই আসবে আমি তাদের সবার সঙ্গেই থাকব, আড্ডা দেব, মজা করব। এ উদ্দেশ্য নিয়েই এবারের নির্বাচনের কথা ভাবছি। নির্বাচন করার ব্যাপারে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি নির্বাচন করছি না। আমার কারও প্রতি ক্ষোভ নেই। এটা ক্ষোভের জায়গা না। এখানে সবাই সবাইকে শ্রদ্ধা করি। সেই জায়গা থেকে গতবার আমরা সবাই মিলে একটা নির্বাচন করলাম উৎসবমুখর পরিবেশে। পরবর্তীতে অনেক ঝুটঝামেলা শেষ করে আমরা এখন এ অবস্থায় আছি। আগামী ৩০ মার্চ থেকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে, ২ এপ্রিল দাখিল। প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৪ মার্চ, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৭ এপ্রিল। একই দিনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

বহিষ্কার জায়েদ খান, ভোট সংকটে শিল্পী সমিতি

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় গত ২ মার্চ। এতে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্তও নেয় বর্তমান কমিটি। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল করা।

 

সুষ্ঠু নির্বাচন চাই : সোহেল রানা

গতবারের কমিটিতে কী হয়েছে না হয়েছে এসব নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ শুধু চলচ্চিত্র জগৎ নয়, রাজনীতি বা যে কোনো অঙ্গনেই এখন সিনিয়রদের কথা শোনা বা মানা হয় না। তাই সব ক্ষেত্রেই অস্বস্তিকর প্রতিকূল অবস্থা চলছে। আমি শুধু চাইব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং এতে যোগ্যরা নির্বাচিত হয়ে আসুক, যাতে চলচ্চিত্র শিল্পটিকে আবার সুন্দরভাবে সাজানো যায়। আমরা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও চলচ্চিত্রের মানুষের নিরাপত্তা চাই। তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে সুন্দর একটি নির্বাচন ও যোগ্য লোককে নির্বাচিত করা হোক এটিই আমার প্রত্যাশা।

 

গঠনতন্ত্র মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : ইলিয়াস কাঞ্চন

জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত সমিতির গঠনতন্ত্র মেনেই করা হয়েছে। জায়েদ আমার ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণের বিরুদ্ধে মিডিয়ার কাছে নানা নেতিবাচক কথা বলেছে। যা সমিতির সংবিধান পরিপন্থী। তাকে এ ব্যাপারে নিয়ম মেনে সমিতি থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আমার কথা ছিল একটি পদ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাকি সবতো ঠিক ছিল। দুটি প্যানেল থেকে সবাই নির্বাচিত হয়ে এসেছে। তাই সবাই মিলে মিশেতো সমিতি, শিল্পী ও চলচ্চিত্রের স্বার্থে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু ওই প্যানেলের নির্বাচিতদের কোনো সহযোগিতা আমি পাইনি। তাই ২১ জনের কমিটিতে ১০/১২ জনকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে। এ অবস্থায় আমি পদত্যাগ করতে পারতাম কিন্তু এটি করিনি, কারণ হলো তা ভবিষ্যতের জন্য একটি বাজে উদাহরণ হয়ে থাকত। আমার কমিটি এত প্রতিকূলতার মধ্যেও সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করেছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক নানা পরিবেশের কারণে এফডিসিতে আনা যায়নি। আমি আর নির্বাচন না করলেও তথ্য মন্ত্রণালয় এবং এফডিসির প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে রেখেছি যাতে তারা এফডিসির নির্মাণাধীন নতুন ভবনে ফাইট, ড্যান্স ও অভিনয়শিল্পীদের ওয়ার্কশপ এবং রিহার্সেলের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ করে। এতে চলচ্চিত্রের মান আরও উন্নত হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের বলব, আপনারা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চলচ্চিত্র শিল্প, শিল্পী ও সমিতির কল্যাণে যোগ্য লোকদের নির্বাচিত করুন।

 

এ সিদ্ধান্ত অবৈধ : জায়েদ খান

আমার সদস্য পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও অন্যায়। তাদের কথায় আমি সমিতির সংবিধান পরিপন্থী কাজ করেছি। একথা ঠিক নয়। কারণ আমি ব্যক্তি নিপুণের বিরুদ্ধে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছি, কোনো নেত্রীর বিরুদ্ধে নয়। আসলে এটি হচ্ছে প্রতিহিংসাপরায়ণ সিদ্ধান্ত। এখানে গঠনতন্ত্র বা কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। নিপুণ নিজেই নির্বাচিত নয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদকের যে চেয়ারে সে জোর করে বসে আছে সে চেয়ারের নির্বাচিত কর্মকর্তা আমি। তা ছাড়া পদটি নিয়ে আদালতে মামালা বিচারাধীন। আমি একজন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, তাই আমার সদস্য পদ কীভাবে বাতিল হয়। এ সমিতিতেতো কোনো জেনারেল মিটিং হয়নি। মিটিং হলে তার ১৫ দিন আগে সদস্যদের বাড়িতে চিঠি দিয়ে তা জানাতে হয়। সেটিতো করা হয়নি। তা ছাড়া কারও সদস্য পদ বাতিল করতে হলে পরপর তিনটি চিঠি দিয়ে তা তাকে জানাতে হয়। কোথায় আমাকেতো কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। আমি বলব সমিতির কমিটির মেয়াদ শেষ, নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে, এরপর মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি কীভাবে সদস্য পদ বাতিল করে। তা ছাড়া সাধারণ সম্পাদকের পদটি  নিয়ে মামলা এখনো মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে  বিচারাধীন। এ অবস্থায় মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ততো সমিতি আমার বিরুদ্ধে অন্যায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। যদি আমার হাতে আমার সদস্য পদ বাতিলের চিঠি আসে তাহলে সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

 

গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : নিপুণ আক্তার

কোনো সাংগঠনিক দুর্বলতা না পেয়ে জায়েদ খান ব্যক্তিগত আক্রোশে ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ সাধারণ সম্পাদকের নামে মিথ্যা, মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ কল্পকাহিনি সংবাদ সম্মেলন, ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাহী কমিটি। গত বছর এপ্রিলের ২ তারিখে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। গত ২ বছরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানারকম ভুলত্রুটি হয়তো হয়েছে, এর জন্য ক্ষমা চাইছি। আমরা আসলে অনেক জটিল কাজের সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং অনেক সফলতাও পেয়েছি। কাজ করতে করতে ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে সেগুলো উপেক্ষা করে সামনের দিনগুলোতে আরও কাজ করতে চাই। আমাদের মানে শিল্পীদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে আরও ভালো কাজ করার প্রতিশ্রুতি রইল আমার।

সর্বশেষ খবর