আগামী সপ্তাহ থেকেই পবিত্র মাহে রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। পুরনো নিয়ম অনুযায়ী রোজায় কোনো নতুন ছবি মুক্তি পায় না। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রোজা শুরুর আগে শেষ শুক্রবার পড়েছে ৮ মার্চ। যেহেতু শুক্রবারই নতুন ছবি মুক্তি পায় তাই ৮ মার্চ নতুন কোনো ছবি আর মুক্তি পাবে না। এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শক সমিতি। তাই ঈদের আগ পর্যন্ত সিনেমা হলে মুক্তি পাবে পুরনো ব্যবসা সফল ছবি। বেশির ভাগ সিনেমা হল মালিক আবার তাদের হল রমজানে বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। কারণ এমনিতে নতুন ছবি মুক্তি পেলেও দর্শক খরা লেগে থাকে তার ওপর রমজান এবং পুরনো ছবি, দুটিই দর্শক সিনেমা হলে না আসার কারণ। তাই বেশির ভাগ সিনেমা হল মালিকই রমজানে হল খোলা রেখে লোকসান আর বাড়াতে চান না। তার পরিবর্তে তারা ঈদের ছবি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিতে রমজান মাসে সিনেমা হল সংস্কার করে দর্শক উপযোগী করতে চান। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, বছরের দুই ঈদ হচ্ছে সিনেমা হল মালিক ও চলচ্চিত্র প্রযোজকদের জন্য সিনেমা ব্যবসার প্রধান মৌসুম। এই দুই মৌসুমে ছবি মুক্তি দিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভের মুখ দেখা যায়। কারণ একদিকে ঈদ হলো আনন্দ উৎসবের দিন। তাই ঈদে অন্য আনন্দ অনুষঙ্গের সঙ্গে যোগ হয় নতুন ছবি দেখে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে তোলা, অন্যদিকে ঈদে মুক্তি পায় মানসম্মত, তারকা খচিত বিগ বাজেট ও অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবি। এতে করে এসব ছবি দেখতে সর্বস্তরের দর্শক সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাই সিনেমা হল মালিকরা এখন ঈদের ছবি মুক্তির প্রস্তুতি নিয়েই ব্যস্ত। অন্যদিকে চলচ্চিত্র নির্মাতারাও জোরেশোরে ঈদের ছবির নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদে প্রায় এক ডজনের মতো ছবি মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্মাতারা। কিন্তু দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা কম থাকায় শেষ পর্যন্ত কয়টি ছবি মুক্তি পাবে তা এখনো পরিষ্কার করে বলতে পারছে না প্রদর্শকরা। প্রদর্শক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন অর্ধশতাধিক সিনেমা হল খোলা থাকলেও ছবির প্রধান মৌসুম ঈদ বলে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে ঈদে বন্ধ থাকা প্রায় ১৫০-এর মতো সিনেমা হল খুলবে। ফলে সব মিলিয়ে ২০০ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে ঈদের ছবি। ঈদে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে-রাজকুমার, আহারে জীবন, সোনার চর, কাজলরেখা, লিপস্টিক, ওমরসহ আরও অনেক ছবি। এদিকে রমজানের কারণে ছবি মুক্তি বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিবছর চলচ্চিত্র পাড়া থাকে শিল্পী কলাকুশলী ও নির্মাতা শূন্য। কিন্তু এবারের চিত্র থাকবে ভিন্ন। কারণ আগামী ১৯ এপ্রিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। মানে ঈদের পরই অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। তাই রমজানজুড়ে নির্বাচন নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়া মাতিয়ে রাখবে চলচ্চিত্রের মানুষ। বলতে গেলে এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে চায়ের কাপে নির্বাচনি আড্ডার ঝড়। এফডিসিতে প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রতিদিনের আড্ডায় উঠে আসে প্রসঙ্গটি। জানা গেছে, শিল্পীদের মধ্যে চলছে প্যানেল গোছানোর প্রস্তুতি। আগামী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দুটি প্যানেলের অংশগ্রহণ নিয়ে চর্চা চলছে। এবারের নির্বাচনে আবারও সাধারণ সম্পাদকের পদেই লড়বেন নিপুণ, এমন তথ্য জানিয়ে এ নায়িকা বলেছেন, ‘আমি আবার সাধারণ সম্পাদকের পদেই নির্বাচন করব। আর আমার প্যানেলে সভাপতি কে থাকছেন তা নিয়েও চমক থাকছে।’ সভাপতি পদে কে লড়বেন এমন প্রশ্নের জবাবে নিপুণ বলেন, ‘এখনো বলার সময় আসেনি। আমাদের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিল্পী তা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারাই বিষয়টি দেখছেন। এখন প্যানেল গোছানোর কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী মাসের মাঝামাঝিতে প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারব।’ এদিকে মিশা সওদাগর ও ডিপজল মিলে একটি প্যানেল তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। প্যানেলে সভাপতি পদে লড়বেন মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন ডিপজল। এ প্যানেলে রুবেলও থাকবেন বলে জানান মিশা সওদাগর। এদিকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। অন্যদিকে জায়েদ খান আগেই জানিয়েছেন তিনি এবার নির্বাচন করবেন না। এর ওপর আবার তার সদস্যপদও বাতিল করেছে শিল্পী সমিতি। তাই নির্বাচন থেকে দূরেই থাকছেন জায়েদ খান। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নিতে পারে। আগামী নির্বাচনে অমিত হাসান-নিপুণ এক প্যানেল থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এতে সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে অমিত হাসানকে আর সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে পারেন নিপুণ। এই প্যানেলে নায়ক ইমনও থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অমিত হাসান বলেন, ‘আমি নির্বাচন করছি নিপুণের প্যানেল থেকে এটা সত্যি। তবে কোন পদটা করব এখনো ফাইনাল করিনি। আশা করছি, অচিরেই ঘোষণা দেব। অন্যদিকে সাইমন সাদিক বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে যেই প্যানেলই আসবে আমি তাদের সবার সঙ্গেই থাকব, আড্ডা দেব। মজা করব। এ উদ্দেশ্য নিয়েই এবারের নির্বাচনের কথা ভাবছি। নির্বাচন করার ব্যাপারে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি নির্বাচন করছি না। গতবার আমরা সবাই মিলে একটা নির্বাচন করলাম উৎসবমুখর পরিবেশে। এবারও তাই হবে বলে আশা করছি। আগামী ৩০ মার্চ থেকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে, ২ এপ্রিল দাখিল। প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৪ মার্চ, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৭ এপ্রিল। একই দিনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে রমজানজুড়ে চলচ্চিত্র পাড়া কাঁপবে নির্বাচনি জ্বরে। নির্বাচনি প্রার্থী আর সমর্থক ভোটারদের প্রচার-প্রচারণার দৌড়ঝাঁপে মুখর থাকবে এফডিসি। রমজানের বন্ধের শূন্যতার পরিবর্তে নির্বাচনি আমেজে মুখর হয়ে ওঠবে চলচ্চিত্র পাড়া।