বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশেষ আলাপন

আমার কাছে বন্ধু-পরিবার আগে তারপর ক্যারিয়ার

আমার কাছে বন্ধু-পরিবার আগে তারপর ক্যারিয়ার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী, মডেল, নির্মাতা ও উপস্থাপক তানিয়া আহমেদ। শোবিজ মিডিয়ায় দীর্ঘ ৩২ বছরের পদযাত্রা তার। দাপিয়ে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দায়। মডেলিং, সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা এবং নির্মাণেও তিনি সপ্রতিভ।  এখন ব্যস্ত রয়েছেন ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের তারকা আড্ডায় হাজির হয়েছিলেন এ তারকা। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

ফিরে যাই ১৯৯১ সালে, যেসময় মোহনীয় হাসির গ্ল্যামার মডেল-অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল...

আফজাল হোসেনের কাছে জোর করে আমার একটা ছবি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছবিটি দেখার পরে প্রায় এক-দেড় মাস পার হলেও কোনো রকমের খোঁজখবর আসছিল না। তখন মনে হয়েছিল ‘দূর! হবে না’। তারপর একদিন আফজাল ভাইয়ের অফিস থেকে ফোন করা হলো। ওপাশ থেকে একজন বলল, ‘আমরা চাই একটি বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি মডেল হন।’ এরপর অনেক উৎসাহ নিয়ে ওখানে গেলাম। কথা বলার সময় যখন তারা যে প্রোডাক্টের নাম বলল, আমি শুনে খুবই অবাক হয়েছি। কারণ সারা জীবনই আমার চুল খুব ছোট। প্রোডাক্টটা ছিল নারিকেল তেলের। তখন তো এদেশে তথাকথিত একটা ব্যাপার ছিল যে, খুবই লম্বা চুল হতে হবে। হাঁটু পার হয়ে যেতে হবে চুল। কিন্তু আমার চুল তো শর্ট! কেন আফজাল ভাই আমাকে পছন্দ করলেন বুঝ আসছিল না। আফজাল ভাই তখন অভয় দিয়ে বললেন, ‘আপনি কোনো টেনশন করবেন না। এটা আমরা ম্যানেজ করব।’ তো ম্যানেজ হয়েছিল। বিভিন্নভাবে সেটিং করে এটা-ওটা দিয়ে করা হয়েছিল। এটা আমি বলতে খুবই প্রাউড ফিল করি যে, জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি এবং প্রথম টেকই ওকে হয়েছিল। এটা কিন্তু খুবই ডিফিকাল্ট। কিন্তু প্রথম টেকেই ওকে হয়েছিল আমার সুন্দর  হাসি দিয়েই...(মুচকি হাসি)। কারণ আমার হাসিটা অনেক সুন্দর!

 

মডেলিং জগতে আপনাদের বন্ধুদের একটা গ্যাং ছিল...

আছে এখনো, ছিল বলে কিছু নেই। আমার বন্ধুত্বগুলো খুবই পুরনো। আমার যারা স্কুল ফ্রেন্ডস তারাও আছে আবার যারা শোবিজ ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সম্পৃক্ত তাদের সঙ্গে এখনো আমার সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে এক জায়গায় হই। কখনো সুইটির বাসায় বা অন্য কোথাও আমরা সবাই মিলে প্রচুর  হৈহুল্লোড় করি। এসব জীবন উদযাপন চলবেই।

 

তারকাদের সঙ্গে তারকাদের যে বন্ডিংটা ছিল সেটা অনুপস্থিত?

আমরা কিন্তু বন্ধুত্বকে প্রায়োটাইজ করেছি। এখনকার অনেকে ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটাই পার্থক্য। আমার ফ্যামিলিটা মিডিয়া ওরিয়েন্টেড। আমি আমার বড় মামাকে (সোহেল রানা) দেখেছি। যখন তিনি একেবারে টপমোস্ট জায়গায় তখন প্রচুর মানুষ পরিবেষ্টিত ছিলেন। এরপর একটা সময় দেখা গেছে আমাদের সঙ্গেও একটু দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে, কারণ তিনি অনেক বিজি ছিলেন; কিন্তু যখনই একটা পর্যায় এসেছে তখন আমি আমার মামাকে দেখেছি অনেক লোনলি হতে। তখন ফ্যামিলির সবাইকে ডাকলেও হয়তোবা একসঙ্গে হওয়াটা দুরূহ হয়ে যেত। এইতো সেদিন বড় মামার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি বললেন, ‘এত ব্যস্ত, আস না কেন?’ কিন্তু মামার এ কথাটা আমরা ছোটবেলা থেকে শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। তখন তিনি মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। সেখান থেকে একটা শিক্ষা আমি পেয়েছি যে, আমার কাছে আমার বন্ধু ও পরিবার সবার আগে থাকবে, তারপরে আমার ক্যারিয়ার।

 

হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’তে বৈচিত্র্যময় চরিত্র করেছিলেন...

দুঃখজনক হলো সেই সময়ে শ্যামল ছায়াতেই আমার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সেটা পাইনি। সেসময় আসলে সরকার ভিন্ন ছিল এবং শাওন বা অন্যদের...আমরা সবাই জানি তাদের ভালোবাসাটা কোন জায়গায়! ভালো লাগাটা কোন দিকে! আমার কাছে মনে হয় কাজের ক্ষেত্রে এ জায়গাটায় আমরা অনেস্ট হতে পারি না। ওই হয় না যে, প্যারালালি আমার দুটো মুভি জমা পড়েছে। তো সে ওই ঘারানার, তাই তাকে দেওয়া যাবে না! আর ও এই ঘারানার, ওকেই দিতে হবে। এই যে ব্যাপারগুলো, এগুলো পীড়া দেয়।

 

এ বিষয়গুলো বলতে সাহস লাগে, কেউ কিন্তু বলে না। কারণ কী?

কেউ বলে না কারণ হলো, এই যে বলছি না প্রভাব বা প্রতাপ, এগুলো মেনে সবাইকে চলতে হয়। কাজ করতে হয়। জীবিকা অর্জন করতে হয়। সবকিছু মিলিয়েই তো আসলে বিষয়টা। মানে মেনে নেই আমরা! এবং আমার পাশাপাশি এমন একজনকে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হতো যে কি না কোনোভাবেই যায় না। তো আমি কী করতে পারতাম? হয়তোবা প্রতিবাদস্বরূপ আমি অনুষ্ঠানে যেতাম না। কিন্তু অস্বীকার করতে পারব না যে, আমি নেব না। আমার ফ্যামিলির কথাই যদি বলি, আমরা সবাই কিন্তু ফিল্ম ঘারানার। আমার বড় মামার (সোহেল রানা) কিন্তু অসংখ্য জনপ্রিয় ফিল্ম আছে। তিনি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কিন্তু অনেক পরে। যেটাকে সবাই লবিং বলে সেটা কিন্তু সেও করেনি কখনো। এ বিষয়গুলো আমার পুরো পরিবারে আছে। আর শুধু ফিল্মে নয়, এ দুঃখবোধটা কিন্তু নাটকের মানুষের মধ্যেও আছে।

সর্বশেষ খবর