বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাকাই ছবি এখন ঈদকেন্দ্রিক

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকাই ছবি এখন ঈদকেন্দ্রিক

ঢাকাই ছবি এখন ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সারা বছর ছবির অভাবে লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছেই। অথচ নির্মাতারা ছবি নির্মাণ করে তা স্বাভাবিক সময়ে মুক্তি না দিয়ে ঈদে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেন।

ফলে একদিকে সিনেমা হল মালিকরা ঈদ ছাড়া বাকি বেশির ভাগ সময়ে নতুন ছবিবিহীন হল চালাতে গিয়ে দর্শকের অভাবে লোকসান গুনে হল বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে ঈদের সময় স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে বেশিসংখ্যক ছবি মুক্তি দিতে গিয়ে সিনেমা হল মালিক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক ঊভয়েই ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েন। কারণ একটি ছবির ভাগ্যে খুব বেশি সিনেমা হল জোটে না। এ অভিযোগ খোদ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির। সমিতির কর্তাদের মতে, এবারের ঈদেও প্রায় ১ ডজন সিনেমার প্রযোজক তাদের ছবি মুক্তির জন্য সিনেমা হলগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এর মধ্যে ঈদে চালানোর মতো মানসম্মত ছবির সংখ্যা কম। তবুও নানা তদবিরের কারণে সিনেমা হল মালিকরা পড়েছেন বিপাকে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, আসলে ঈদে ছবি মুক্তি থাকে উন্মুক্ত, তাই চাইলেই যে কেউ ছবি মুক্তি দিতে পারেন। এ কারণে এ সময় ছবি মুক্তির আবেদনও বেশি থাকে। যেমন স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে দুটি ছবির বেশি মুক্তির নিয়ম নেই। ঈদে এই নিয়ম থাকে না।

তবে মানসম্মত ছবি হলে ঈদে বেশি ছবি চালিয়েও লাভবান হওয়া যায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১৯৯২ সালের রমজানের ঈদে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ওই সময় একদিকে সিনেমা হল ছিল সহস্রাধিক অন্যদিকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি ছবিই ছিল মানসম্মত। তাই সব ছবিই ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল এবং প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই লাভবান হয়েছিলেন। এই চিত্র এখন তো নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা এখন অর্ধশতের কোঠায় আর দর্শক গ্রহণযোগ্য ছবিও তেমন নেই। তাই শুধু ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়ার জন্য নির্মাতাদের দৌড়ঝাঁপ এখন মূল্যহীন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আরেক কর্মকর্তা কাজী শোয়েব রশিদ বলেন, ঈদ হচ্ছে চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম। তাই সব নির্মাতাই ঈদে ছবি মুক্তি দিতে চান। আমার কথা হলো, ভালো ছবি হলে সব সময়ই তা চলবে এবং প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সাধারণ সময়ে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবির অভাবে সিনেমা হল মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। আমার মতে, দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা খুবই কম তাই নির্মাতাদের শুধু ঈদে বেশি পরিমাণে ছবি মুক্তি দেওয়ার আগ্রহ নির্মাতা ও প্রদর্শক উভয়ের জন্য অলাভজনক। আমি নির্মাতাদের বলব, আপনারা সারা বছর মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি সিনেমা হলে মুক্তি দিন। এতে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ঘটবে।

স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপনন কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদের সময় এত বেশি ছবির আবেদন ও তদবির থাকে যে তাতে আমরা রীতিমতো হিমশিম খাই। কারণ একদিকে আমাদের স্ক্রিনের সংখ্যার সীমাবদ্ধতা আছে অন্যদিকে সিনেপ্লেক্সের দর্শক আলাদা। এখানে শুধু মানের বিচারেই ছবি প্রদর্শন করা হয়। সাধারণ ছবি চালাতে গেলে এখানকার দর্শক সেগুলো দেখে না এবং সাধারণ দর্শক আবার বেশি টাকা দিয়ে এখানে টিকিট কিনে ছবি দেখতে পারে না। তাই স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের অনুরোধ ঈদ বা সাধারণ সময়ে আপনারা মানসম্মত ছবি দিন আমরা অবশ্যই তা প্রদর্শন করব।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আরেক কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ঈদ হলো আনন্দ উৎসবের সময়। এ সময় বেশি ছবি মুক্তি পেতেই পারে। কিন্তু এখন যেহেতু সিনেমা হলের সংখ্যা কম তাই বেশি ছবি এই সময় মুক্তি পেলে তা দর্শক, প্রদর্শক ও প্রযোজক, কারও জন্যই ব্যবসায়িক কল্যাণ বয়ে আনে না।  তাই সাধারণ ছবিগুলো স্বাভাবিক সময়ে মুক্তি দিলে নির্মাতা ও প্রদর্শক কিছুটা হলেও আর্থিক লাভের মুখ দেখতে পান।

 

ঈদে যেসব ছবি

ঈদে এখন পর্যন্ত যেসব ছবি মুক্তির দৌড়ে আছে সেগুলো হলো : আহারে জীবন, লিপস্টিক, কাজলরেখা, দেয়ালের দেশ, রাজকুমার, ডেডবডি, সোনার চর, মোনা জ্বীন টু, পটু, ওমর, মায়া, গ্রীন কার্ড, চক্কর, এশা মার্ডার, মনোগামী প্রভৃতি।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১৯৯২ সালের রমজানের ঈদে সর্বোচ্চ-সংখ্যক ১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ওই সময় একদিকে সিনেমা হল ছিল সহস্রাধিক অন্যদিকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি ছবিই ছিল মানসম্মত। তাই সব ছবিই ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল এবং প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়েই লাভবান হয়েছিল। এই চিত্র এখন  তো আর নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা অর্ধশতের কোঠায়, দর্শক গ্রহণযোগ্য ছবিও তেমন নেই। তাই শুধু ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়ার জন্য নির্মাতাদের দৌড়ঝাঁপ মূল্যহীন...

সর্বশেষ খবর