মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

এবারও দর্শক পছন্দের শীর্ষে ইত্যাদি

এবারও দর্শক পছন্দের শীর্ষে ইত্যাদি

ঈদের পরদিন বিটিভির পর্দায় বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের পাশাপাশি ইত্যাদি দেখার আনন্দ ছিল মুখর। ৭৫ মিনিট টান টান উত্তেজনা। টিভির পর্দা থেকে চোখ ফেরানোর সুযোগ নেই। ঈদ পর্ব ছিল ইত্যাদির অন্যতম সেরা ঈদ অনুষ্ঠান। এই পর্বে পূর্ব প্রজন্ম এবং এই প্রজন্মের চমৎকার সম্মিলন ঘটিয়েছেন বরেণ্য নির্মাতা হানিফ সংকেত। যার মেধা, সুনিপুণ ছোঁয়া আর নির্মাণ মুন্সিয়ানায় ইত্যাদি সমহিমায় সমুজ্জ্বল। একের পর এক দুর্দান্ত সব আইটেম, ছন্দে ছন্দে নান্দনিক গাঁথুনিতে তুলে ধরেছেন বরেণ্য এই নির্মাতা। বর্ণাঢ্য আয়োজনে নান্দনিক পরিবেশনায় প্রতিটি বিষয়ই ছিল সমাজ সচেতনতামূলক, শিক্ষা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য সমৃদ্ধ। অনুষ্ঠানের শুরুটাই ছিল চমক। বর্ণাঢ্য আয়োজনে মঞ্চে প্রায় অর্ধশত নবীন-প্রবীণ নজরুল সংগীত শিল্পী আর মঞ্চের সামনে পুরো স্থানজুড়ে প্রায় দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পীর চমৎকার নৃত্য, আর সঙ্গে কয়েক হাজার দর্শকের ছন্দে ছন্দে তালির আওয়াজ। পুরো স্টেডিয়াম জুড়েই যেন অনাবিল আনন্দের বাতাস বইছিল। অনুষ্ঠানটি ইউটিউবে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাদের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। হৃদয় উজাড় করা হাজার হাজার কমেন্ট। এবারের ইত্যাদি নিয়ে ২/১টি মন্তব্য উল্লেখ করলেই বোঝা যাবে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল। মো. আনিস লিখেছেন, ‘সস্তা কনটেন্ট আর অশ্লীলতার যুগে ফ্যামিলি নিয়ে দেখার মতো একমাত্র অনুষ্ঠান ইত্যাদি’। রুহুল আমিন লিখেছেন, ‘ইত্যাদি সব সময় আমাদের ভালো লাগে, কারণ ইত্যাদি আমাদের কথা বলে, দেশের কথা বলে’। মো. জুলমত আলী লিখেছেন, ‘এবারের ইত্যাদিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, বিনোদন, হাসি-কান্না, ভালোবাসা সবই আছে, আছে ভেদাভেদ ভুলে ঈদের শিক্ষাকে নিয়ে মিলনের কথা’। বেশির ভাগ দর্শকই একবাক্যে লিখেছেন পরিবার নিয়ে দেখার মতো একমাত্র অনুষ্ঠান, যেখানে পরিবারের কোনো সদস্যেরই বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবারের ইত্যাদির প্রতিটি গানই ছিল কথা, সুর ও চিত্রায়ণে অসাধারণ। তাহসান-তাসনিয়া ফারিণের দ্বৈত সংগীতটি উপভোগ্য। আর এই গানটির মাধ্যমে হানিফ সংকেত তাসনিয়া ফারিণকে সংগীত শিল্পী হিসাবে উপহার দিলেন। ভিন্নঢঙে উপস্থাপিত হয়েছে প্রীতম-প্রতীক দুই ভাই। এ ধরনের গান সচরাচর টিভিতে দেখা যায় না। ইমরানকে এই প্রথম ইত্যাদিতে দেখা গেল, সঙ্গে ছিলেন বাপ্পা মজুমদার। মহাসুখের গানটি পরিবেশনের সময় বাপ্পাকে যেন সুখী মনে হয়নি, আর একটু হাস্যোজ্জ্বল থাকলে ভালো লাগত। ইউটিউবের লাইক, কমেন্ট, শেয়ার আর সাবস্ক্রাইব নিয়ে মেহজাবীন ও সিয়ামের পরিবেশনায় দলীয় সংগীতটি ছিল অত্যন্ত সমকালীন ও বক্তব্যধর্মী। যা থেকে লাইক, শেয়ার, ফলো নিয়ে এই প্রজন্মকে একটি চমৎকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ‘যদি দেখায় কিছু ভালো, তবে সেটাই কর ফলো, জ্বলুক সংস্কৃতির আলো’। শিবলী-নিপার পরিবেশনায় একাল আর সেকালের বিয়ে নিয়ে ব্যাপক আয়োজনে পরিবেশন করা হয় বিষয়ভিত্তিক নৃত্য। নৃত্যটিতে তুলে ধরা হয় কীভাবে সমাজকে কালো চশমা পরিয়ে শিকড় থেকে সরিয়ে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। ওটিটিতে জনপ্রিয় শিল্পী নাসির উদ্দিন খান এবং মীর সাব্বিরের পরিবেশনায় বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার পর্বটি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। বিলুপ্ত প্রায় স্কুল ঘণ্টার প্রতীকী ছবি দিয়ে নির্বাচিত দর্শকদের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা, ভাষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দর্শকদের করা তিনটি প্রশ্নের চমৎকার উত্তর দিয়েছেন দর্শক পর্বে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত অভিনেতা আবুল হায়াত। এখানে আমাদের কোচিং, মিনিট মাপা শিক্ষা, ইংরেজি আক্রান্ত বাংলা উচ্চারণ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও বাণিজ্য। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। এক শ্রেণির ভিউ শিল্পী ও দর্শকদের কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যপ্রেমী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে তানিয়ার উপস্থাপনায় গান, গালি, খাদ্য ও ফ্যামিলি ভাইরালের চারটি চরিত্রের অভিনয় ছিল অসাধারণ। ভাইরাল শব্দটিকে এখানে ভাইরাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এবারের প্রতিটি স্কিডই ছিল শিক্ষণীয় ও সময়োপযোগী। বিশেষ করে অসহায় দরিদ্র মানুষকে শাড়ি দেওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে নিম্নমানের শাড়ি দেওয়ার প্রসঙ্গটি। ভালো লেগেছে ইন্তেখাব দিনার এবং সারিকার সুরে সুরে পরিবেশিত আইটেমটি। শহীদুজ্জামান সেলিম, আজিজুল হাকিম, আল মামুন ও সাবেরীর পরিবেশনায় ছিল অসাধারণ আর একটি মিউজিক্যাল আইটেম। বর্তমান সময়ের নানান সমস্যা তুলে ধরে চারজন অভিভাবকের প্রাণবন্ত সুরে সুরে আলাপ দেখে অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছেন। সবশেষে বিদেশিদের পর্বে সিন্ডিকেটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

ন্যায্য পাওনাবঞ্চিত কৃষকদের অর্থ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। যারা কৃষকদের শত্রু, দেশেরও শত্রু। শেষে বিদেশিদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘এই দেশটা আমাগো, এই দেশকে আমরা বড় ভালোবাসি’। এরপরই শুরু হয় বিদেশিদের নিয়ে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে অসাধারণ নৃত্য-‘চিরসুন্দর এই দেশ আমার বাংলাদেশ, আরও সুন্দর তাকে করব সবাই’। এই আহ্বান জানিয়ে শেষ করেন সবার প্রিয় ইত্যাদির ঈদ পর্ব। ইত্যাদি শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না, থেকে যায় এর রেশ-প্রতিটি দর্শকের অন্তরে। ধন্যবাদ হানিফ সংকেত একটি অনন্য ও বর্ণাঢ্য ইত্যাদি উপহার দেওয়ার জন্য।

সর্বশেষ খবর