বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বলিউডে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন

বলিউডে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন

বলিউডের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগ বহু পুরনো। এ জগতের সঙ্গে নানা কারণে জড়িয়ে পড়ে বলিউডের নামিদামি তারকারা। অন্ধকার জগতের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর পরিণতি হয় ভয়ংকর। সম্প্রতি সালমান খানের ওপর হামলার ঘটনা পুরো দুনিয়াকে বিষয়টি নিয়ে ভাববার অবকাশ এনে দিয়েছে।  বিষয়টি তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

মাধুরী-দাউদ

মাধুরী দীক্ষিত। নব্বই দশকে তিনি তখন বলিউডের মধ্য গগনে অবস্থান করছেন। হঠাৎ করেই একটা ফোন কল যেন শেষ করে দিয়েছিল মাধুরীর গোটা ক্যারিয়ার। সেই ফোনটা এসেছিল কুখ্যাত গ্যাংস্টার দাউদের কাছ থেকে। মাধুরী দীক্ষিতকে তার পছন্দ হয়ে যায়। তিনি মাধুরীর জন্য একটি পার্টি অ্যারেঞ্জ করেন এবং তাকে ফোন করেন কিন্তু তার কথা একেবারে নাকোচ করে দেন মাধুরী। তখন বড় বড় প্রযোজক এবং পরিচালকরা মাধুরীকে সাইন করিয়েছেন ছবিতে।

এদিকে হঠাৎ করেই কাজ হারিয়ে যেতে থাকে মাধুরীর। এর নেপথ্যে কারণ কি সেটা বুঝতে আর বাকি থাকেনি অভিনেত্রীর। এরপর মাধুরী তার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দুবাইতে যান।

মাত্র ১টা রাত কাটিয়ে আবার বলিউডে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন মাধুরী দীক্ষিত।

 

মন্দাকিনী-দাউদ

অভিনেত্রী মন্দাকিনী নিজে বারবার দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। লোকে তাঁকে মনে রেখেছে ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’র জন্য। আর মনে রেখেছে দাউদ ইব্রাহিমের ‘গার্লফ্রেন্ড’, ‘বউ’, ‘সন্তানের মা’ হওয়ার জন্যও। মন্দাকিনীর ফিল্মি ক্যারিয়ার যখন তুঙ্গে তখনই দাউদের নজর পড়ে তার ওপর। এরপর বাধ্য হয়েই প্রেম এবং বিয়েতে গড়ায় তাদের সম্পর্ক।

 

মমতা-ছোটা শাকিল

আন্তর্জাতিক ড্রাগ র‌্যাকেটের সঙ্গে অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নির যোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। কেনিয়াতে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকেও মমতা যোগ দিয়েছিলেন বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। এর পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ছোটা শাকিলের সঙ্গেও নায়িকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলা হয়।

 

নব্বইতে বিভিন্ন সিনেমায় টাকা ঢালতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনেরা। উদ্দেশ্য সিম্পল- নিজেদের কালো টাকা সাদা করা। এটা মোটামুটি ওপেনসিক্রেট ছিল, ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ মানুষ এ ব্যাপারটা জানতেন। আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের কাছ থেকে অভিনেতাদের নিয়মিতভাবে ফোন পাওয়া আর সেসব ডনের ‘কাছের লোক’ বলে খ্যাত কোনো নির্দিষ্ট প্রোডিউসারের সঙ্গে সিনেমা করার জন্য অভিনেতার ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করাটা তখন খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিল। পছন্দ না হলেও অভিনেতাদের কিছুই করার থাকত না।  ফোনে যেভাবে হুমকি দেওয়া হতো, তাতে দিনশেষে একটি কথাই টিকে থাকত-‘জানের মায়া বড় মায়া’।

 

সঞ্জয় দত্ত-দাউদ

১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সঞ্জয় দত্ত। সঞ্জয়ের সঙ্গে আবু সালেম ও দাউদের সরাসরি যোগের প্রমাণ পেয়েছিল পুলিশ।

 

মোনিকা বেদী-আবু সালেম

‘ডি’ কোম্পানি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। এই ‘ডি’ কোম্পানির ডন হিসেবে কাজ করতেন ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন-আবু সালেম। অভিনেত্রী মোনিকা বেদীর সঙ্গে তিনি স্বামী-স্ত্রীর মতোই বসবাস করেছেন দীর্ঘ কয়েক বছর। মোনিকার ব্যাপারে এতই অন্ধ ছিলেন সালেম যে মাঝে মাঝে বেশ পজেটিভ আচরণ করতেন, কিন্তু কখনো নাকি মোনিকার যোগ্য সম্মান দিতে পিছপা হননি তিনি।

 

গুলশান কুমার হত্যা

টি সিরিজের প্রতিষ্ঠাতা গুলশান কুমারকে দিনেদুপুরে হত্যা করা হয়। এ ঘটনাটি সাধারণ মানুষ তো বটেই, বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। এ ঘটনার আগ পর্যন্ত সবাই ভাবতেন- হুমকি-ধমকি পর্যন্তই হয়তো হাইয়েস্ট। তবে এভাবে দিনেদুপুরে হত্যার ব্যাপারটা বেশির ভাগই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন গ্যাংস্টার আবু সালেম।

 

দিব্যা ভারতীর মৃত্যু

অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী, নব্বই দশকে মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে কোটি কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সেই এই অভিনেত্রীর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল দিব্যা মারা যান। তার মৃত্যু বলিউডে আজও এক রহস্য! টিভি চালু করে ব্যালকনির ওপরের অংশে বসেন। তিনি প্রায়ই সেখানে বসতেন। কিন্তু সেদিন দুর্ভাগ্যক্রমে পিছলে নিচে পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু দিব্যা ভক্তরা একে দুর্ঘটনা মানতে নারাজ। তাদের মতে এটি পরিকল্পিত হত্যা। এর কিছু কারণও আছে। ২০১১ সালে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘দিব্যাকে গুলি করে মারা হয়েছে’ হঠাৎ এ খবরে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েন! বলা হয়েছিল, আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র রয়েছে এ ঘটনায়। কিন্তু খবরটি গুজব জানার কয়েক ঘণ্টা পরেই নতুন করে জানা যায়, সত্যি সত্যি দিব্যা ভারতী আর এই পৃথিবীতে নেই। ‘স্টারডাস্ট’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ে নিয়ে দিব্যা ও সাজিদের মধ্যে সমস্যা চলছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সাজিদের মেলামেশা দিব্যা পছন্দ করেননি। এরপর অনেকদিন দিব্যার মৃত্যুর তদন্ত হয়। ১৯৯৮ সালে মুম্বাই পুলিশ হঠাৎ করেই দিব্যার মৃত্যু ‘দুর্ঘটনাজনিত’ বলে ফাইলটি বন্ধ করে দেয়।

সর্বশেষ খবর