বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

এফডিসিতে ভিলেনগিরি

আহত ২০ সাংবাদিক ♦ অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার, বহিষ্কার দাবি ♦ বয়কটের ডাক ♦ বইছে নিন্দার ঝড়

এফডিসিতে ভিলেনগিরি

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় এফডিসিতে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিতদের নিয়ে। অনুষ্ঠান শেষ হতেই শিল্পী সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের  অতর্কিত হামলার শিকার হন প্রিন্ট, অনলাইন, টিভি ও মাল্টিমিডিয়ার প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক। এর প্রতিবাদে সব সেক্টরের সাংবাদিক পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে সুবিচার চেয়ে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন শিল্পী সমিতিকে। এ ন্যক্কারজনক ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

ভিলেন কর্তৃক সাংবাদিক মারধর

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, শপথ গ্রহণ শেষে সমিতির অফিসে পত্রিকার একজন সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন একজন চলচ্চিত্র নায়িকা ও তার মেয়ের। এ সময় অভিনেতা শিবা শানু এ সাংবাদিককে বেরিয়ে যেতে বলেন। না যেতে চাইলে তাকে গলা ধরে উঁচিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অফিস থেকে বের করে বাইরে নিয়ে যান শিবা শানু। এর মধ্যে সেটি থামাতে এগিয়ে আসেন উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

 

মারমুখী জয়, নেপথ্যে আলেকজান্ডার-রুবেল বাহিনী

শিবা শানুকে সাপোর্ট দিতে ঘটনার সময় নবনির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী ‘মার মার’ বলে তেড়ে যান উপস্থিত সব সাংবাদিকের দিকে। এরপর হুট করে শিল্পী সমিতি থেকে ১০-১২ জনের একটি শিল্পী-ফাইটার দল লাঠি, চেয়ার নিয়ে এফডিসির বাগানে এসে উপস্থিত সাংবাদিক-ক্যামেরাপারসনকে শুরু করে বেধড়ক মারধর। প্রসঙ্গত, এ হামলার নির্দেশনায় জয়ের সঙ্গে আলেকজান্ডার বো ও চিত্রনায়ক রুবেলের নামও সামনে আসে। এদিকে ডি এ আলমগীর, শিল্পী সমিতির অফিস অ্যাসিসট্যান্ট মিজান, শিল্পী সমিতির স্টাফ জামান, ফাইটার সুশান্ত, সিডাপের বেশ কিছু সদস্যসহ নাম না জানা প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্ত এ ঘটনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুরো এফডিসি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। মারামারিতে রীতিমতো রক্তাক্ত হন মূল মিডিয়ার বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী।

 

মদ্যপ ছিলেন শিবা শানু

হামলার শিকার হওয়া এক সাংবাদিক জানান, অসংলগ্ন আচরণ ছিল শিবা শানুর। তিনি মদ্যপ ছিলেন। তার থেকে মদের গন্ধও আসছিল। তিনি যে অসংলগ্ন আচরণ করছিলেন ভিডিও ফুটেজ দেখলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

 

সাংবাদিক আহত প্রায় ২০

মারামারির ঘটনায় প্রিন্ট, টিভি, অনলাইন ও ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিক-ক্যামেরাপারসনসহ প্রায় ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তৎক্ষণাৎ আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

পাঁচ দফা দাবিতে শিল্পী সমিতিকে সাংবাদিকদের আলটিমেটাম

এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় গতকাল রাতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে শিল্পী সমিতিকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। দাবিগুলো হলো- শিবা শানু, জয় চৌধুরী, আলেকজান্ডার বো, রুবেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। আহতদের চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করা। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা, যাদের ক্যামেরা-ডিভাইসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে শিল্পী সমিতিকে মেনে নিতে হবে। এ পাঁচ দাবিতে অনড় সাংবাদিকরা।

 

শিল্পী সমিতির দুঃখ প্রকাশ

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এরই মধ্যে শিল্পী সমিতির নেতা ও সাংবাদিক নেতাদের যৌথ আলোচনায় ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা বা সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম ও সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে নেতৃবৃন্দ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আহতদের সুচিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বাচসাস জানিয়েছে। সিজেএফবিও পৃথক এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। এদিকে টিভি রিপোর্টার-ক্যামেরাম্যান, প্রিন্ট মিডিয়া, ডিজিটাল মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ার সব সাংবাদিক একজোট হয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বেলা ২টা ৩০ মিনিটে এফডিসির গেটে মানববন্ধনে মিলিত হন। এদিকে এ বিষয়ে ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বারবার পেশাদার সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। এফডিসিতে শিল্পী কর্তৃক সাংবাদিকদের ওপর হামলা অত্যন্ত ন্যক্কার ও গর্হিত একটি কাজ।  এটি খুবই দুঃখজনক ও সাংবাদিক সমাজের জন্য অশনিসংকেত। পেশাদার সাংবাদিকরা যেভাবে মার খাচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি জানাচ্ছি। নতুবা চলচ্চিত্র শিল্পীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন অবস্থানে যাব।  এদিকে ডিআরইউ ও বিভিন্ন বিনোদন সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’

সর্বশেষ খবর