মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব মায়ের অধিকার থাকুক সন্তানের ওপর : বাঁধন

সব মায়ের অধিকার থাকুক সন্তানের ওপর : বাঁধন

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, সুঅভিনয় দিয়ে সুনামের পরিধি বাড়িয়েছেন বিদেশের মাটিতেও। সম্প্রতি তার আগের একটি মামলা অন্য মামলায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন হাই কোর্ট। এ বিষয় এবং তার বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

২০১৮ সালে আপনার একটি মামলার রায় সম্প্রতি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন আদালত, এ বিষয়ে জানতে চাই-

প্রায় সাত বছর আগে ২০১৭ সালে মেয়ের পূর্ণ অভিভাবকত্ব চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হই। দীর্ঘ নয় মাস লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আদালত আমাকে আমার মেয়ের পূর্ণ অভিভাবকত্ব প্রদান করে। সে সময় আদালত আমার পক্ষে যে রায় দেয়, সে রায়টি ছিল ব্যতিক্রম। কারণ, বাংলাদেশে নাবালক সন্তানের বাবা জীবিত থাকলে মাকে অভিভাবকত্ব দেওয়া হয় না। সম্প্রতি দেশের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টে পাঁচটি সংগঠনের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করে। আমার মামলাটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে রিট দায়ের করার পরই আদালত এই রুল জারি করেছে।

 

এতে আপনার অনুভূতি কেমন?

অনুভূতি অবশ্যই ভালো। কারণ আমার কথা ছিল একজন ‘মা’ কেন পূর্ণ অভিভাবক হতে পারবে না। ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার দ্বাদশ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক ইসরাত জাহান আমার একমাত্র কন্যাসন্তান মিশেল আমানি সায়রার অভিভাবকত্ব দিয়েছিলেন আমাকে। আগে যে আইন ছিল তাতে এবার পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়াটাই আনন্দের। এটা শুধু আমার একার অর্জন হয়ে থাক সেটা আমি চাইছি না। আমি চাই বাংলাদেশের সব মায়ের অধিকার থাকুক তাঁর সন্তানের ওপর।

 

এবার অভিনয় নিয়ে আপনার বর্তমান ব্যস্ততার কথা শোনা যাক-

হ্যাঁ, সম্প্রতি আমি ‘মাস্টার’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলাম। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ‘নোনাজলের কাব্য’ ছবির নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। অন্যদিকে সানি সারওয়ারের ‘এশা মার্ডার’ ছবির কাজ আটকে আছে। তবে আমি ‘মাস্টার’ ছবির কাজ করে খুবই তৃপ্ত।

 

মাস্টার নিয়ে এই তৃপ্তির মূলে কী বিষয় রয়েছে?

আসলে এই ছবিতে আমার চরিত্রটি মুখ্য না হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন ইউএনওর চরিত্রে অভিনয় করেছি। মূল চরিত্রে আছেন নাসির ভাই। এটি একটি জীবনবোধের গল্প ও চরিত্র। এমন চরিত্রে অভিনয় করার যথেষ্ট সুযোগ থাকে এবং এতে দর্শক আগ্রহ থাকে বলে এমন কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই ‘মাস্টার’ ছবিতে কাজ করে আমি তৃপ্ত।

 

বলিউডের ‘খুফিয়া’ ছবিটি করে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পেয়েছেন, আবার কখন বলিউডের ছবিতে দেখা যাবে আপনাকে?

আসলে বলিউড থেকে পছন্দের গল্পের অফার পেলে অবশ্যই করব। ইতোমধ্যে একটি ছবির কথা চলছে। অন্যদিকে কলকাতারও একটি ছবির অফার এসেছে। দুটি ছবির সবকিছু চূড়ান্ত হলে অবশ্যই তখন জানাব।

 

‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর মতো জীবনধর্মী গল্পের ছবি এ দেশে আরও বেশি পরিমাণে হওয়া দরকার বলে মনে করেন?

অবশ্যই, এমন গল্পের ছবি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি হয়েছে। এমন গল্প বহির্বিশ্বে আমাদের  সমাজ, পবিরার, পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতার স্বকীয় ও স্বতন্ত্র  চিত্র বহন করে। তাই এ ধরনের জীবনধর্মী গল্পের ছবি যদি আরও বেশি পরিমাণে এখানে নির্মিত হয় তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র দেশ-বিদেশে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে নিঃসন্দেহে।

 

বর্তমান সময়ে আমাদের চলচ্চিত্রের প্যাটার্ন কি সময় উপযোগী হচ্ছে?

হুম, খুব যে হচ্ছে তা বলব না, তবে পরিবর্তনের একটা চেষ্টা চলছে এবং তাতে দর্শক সাড়াও মিলছে। আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য এটি একটি ভালো দিক বলব। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আবার আমাদের চলচ্চিত্র প্রকৃত চলচ্চিত্র হয়ে উঠবে।

 

আপনার স্বপ্নের ছবি বা চরিত্র কোনটি?

অবশ্যই রেহানা মরিয়ম নূর। এটি একটি আনপ্যারালাল গল্প ও চরিত্রের ছবি। আমার জীবনে এই একটি ছবিতে কাজ করে আমি শতভাগ তৃপ্ত। তাছাড়া খুফিয়া, গুটি, মাস্টার তো অনবদ্য সব ছবি। এমন সব গল্প ও চরিত্র আমার পছন্দের।

 

সবশেষে জানতে চাইব দেশীয় চলচ্চিত্রকে আবার কীভাবে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনা যায়?

আমি বলব, অন্য সব সেক্টরের মতো মিডিয়াতেও দুর্নীতি রয়েছে। এখানে কাজ শেখার জন্য পর্যাপ্ত ইনস্টিটিউট বা ব্যবস্থা নেই। কাজ করার ক্ষেত্রে বেশির ভাগেরই প্রধান লক্ষ্য থাকে কীভাবে বেশি পরিমাণে অর্থ আয় করা যায়। এটি ঠিক নয়। হ্যাঁ, জীবনে অর্থের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে, তবে শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অর্থের চেয়ে মূল্যবোধ এবং জীবন দর্শনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এখন অনেক তরুণ শিক্ষা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসছে এবং সফলও হচ্ছে। নির্মাণে তরুণীরা কিন্তু এগিয়ে আসছে না। এটি খুবই দুঃখজনক। আগে অনেক নারী নির্মাতার হাতে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এগোলে আমাদের চলচ্চিত্র অবশ্যই আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর