বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : সোহেল রানা

সব জায়গাতেই মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে

সব জায়গাতেই মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে

স্বাধীন দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবির প্রযোজক, মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার কথায় বর্তমানে সর্বত্র মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। চলচ্চিত্র জগৎও এর বাইরে নয়। এসব বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্র থেকে দীর্ঘদিন দূরে আছেন, কেন?

এখন তো আমরা যারা সিনিয়র আছি তাদের কেন্দ্র করে কোনো চরিত্র তৈরি করা হয় না। যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও হচ্ছে। গতানুগতিক চরিত্রে অভিনয় করে তো লাভ নেই।

 

চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হয়?

শুধু চলচ্চিত্র জগৎ নয়, সমাজ, রাজনীতি, ব্যবসা, পরিবার; সব ক্ষেত্রেই মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। সবখানেই মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতা, ভালোবাসা, ফিলিংস হারিয়ে গেছে। আগে সর্বত্রই সোনার মানুষ ছিল, চলচ্চিত্র জগৎ থেকেও এখন সেসব মানুষ হারিয়ে গেছে। তাই বলব চলচ্চিত্রের অবস্থা এখন আর ভালো নেই।

 

আমার বড় অপ্রাপ্তি আজ পর্যন্ত আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হলো না।

 

এ অবস্থার উত্তরণ সম্ভব?

আসলে এক সময় চলচ্চিত্র ছিল পরিবার নিয়ে দেখার মাধ্যম। এখন তো বিনোদনের মাধ্যম বেড়েছে; কিন্তু মাধ্যম বাড়লেও তা কতটুকু ইতিবাচক এটি ভাবার অবকাশ আছে। কারণ হাতের মুঠোয় মোবাইলে চাইলেই যে কেউ যে কোনো কিছু দেখতে পারছে। নাইটক্লাব থেকে শুরু কোনো কিছুরই অভাব নেই। নতুন প্রজন্মের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা সন্ধ্যায় কফি খেতে যায়। অথচ আমাদের সময় অভিভাবকদের নির্দেশ মতো সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসতাম। চলচ্চিত্রের উত্তরণ নিয়ে আমি আশাহত। কারণ একদিকে চলচ্চিত্র জগতেও মানবিক মূল্যবোধের অভাব, অন্যদিকে বিনোদনের মাধ্যম বাড়াতে দর্শক সিনেমা হলে যেতে চায় না। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী আছে। বিনোদনের যেসব মাধ্যম বেড়েছে তার মধ্যে অপসংস্কৃতিই বেশি, যা নতুন প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি সরকারসহ সবার ভেবে দেখতে হবে। না হলে আমাদের চলচ্চিত্র, সমাজ আর পরিবার কৌলিন্য হারাবে।

 

সিনেমা হল আর সিনেপ্লেক্স নিয়ে কী বলবেন?

এক সময় সিনেমা হল ছিল শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম ধারক বাহক, কারণ সিনেমা হল মালিকরা তখন ব্যবসাকে বড় করে দেখতেন না, শিল্প সংস্কৃতির চর্চাই করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বেশ কিছু সময় ধরে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এ অবস্থা বদলে গেল। বেশি আর্থিক লাভের আশায় সিনেমা হল ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ শুরু হলো। আর সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা সিনেপ্লেক্সগুলোতে টিকিটের চড়া মূল্যের কারণে সব আয়ের দর্শক সেখানে যেতে পারে না। আসলে শিল্প সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির সবচেয়ে বড় ভিত্তি ও পরিচয়, এটি মুছে গেলে জাতির অপমৃত্যু ঘটে।

 

আপনার জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব কেমন?

প্রাপ্তির কথা বলতে গেলে বলব সৃষ্টিকর্তা আমাকে সবই দিয়েছেন। তাই আমার কোনো দুঃখ নেই। আর অপ্রাপ্তির কথা যদি বলি তাহলে বলব, স্বাধীন দেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ আমিই নির্মাণ করেছি। এ কথাটা দেশের মানুষ জানলেও সরকার মনে হয় স্বীকার করে না। প্রায় ৬০ বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেছি। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। এসব সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আমাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দেওয়া হলো না। এর চেয়ে বড় অপ্রাপ্তি আর কষ্ট কী হতে পারে।

সর্বশেষ খবর